ঈদে উত্তরাঞ্চলমুখী মানুষের আতঙ্ক ॥ মহাসড়কের বাঁকে বাঁকে মরফাঁদ!

0 ৮০৩

road-pic-bak-sherpur-bogra-4দীপক সরকার: উত্তরাঞ্চলঅভিমুখী ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ১৫টি মোড় বা বাঁককে মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মোড়কে ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে শুরু হয় দুই লেনের কাজ  রোড প্রশস্তকরণ প্রকল্প। কিন্তু  ১৬ মাস অতিবাহিত হলেও সেই কাজ শেষ এখনো হয়নি । বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপে এখনই যেন মহাসড়ক সরু হয়ে আসছে। একাধিক স্থানে অত্যন্ত ধীর গতিতে গাড়ি সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। সবমিলিয়ে মহাসড়ক হয়ে নাড়ির টানে উত্তরাঞ্চলমুখী ঈদে ঘরে ফেরা নিয়ে মানুষেরা আতঙ্কে রয়েছেন । এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের প  থেকে  নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

শুক্রবার(০৯সেপ্টেম্বর)ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হতে বগুড়ার শিবগঞ্জের  গোকুল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র ও ওঠে এসেছে বিভিন্ন তথ্য । তথ্যমতে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, সাহেবগঞ্জ, ঘুড়কা বেলতলা, ভুঁইয়াগাতি,  ষোলমাইল, চান্দাইকোনা, সীমাবাড়ী, রবোয়া, বেতগাড়ি, ধনকুন্ডি, ঘোগাব্রীজ, ঘোগা বটতলা, ইটালী, ছোনকা, রাজাপুর, মির্জাপুর, মদনপুর, কৃষ্ণপুর, শেরুয়া বটতলা, কাঠালতলা, হামছায়াপুর, ধুনটমোড়, বাসস্ট্যান্ড, কলেজরোড, হাজিপুর, মহিপুর, গাড়ীদহ, দশমাইল, জামালপুর, নয়মাইল, আড়িয়াবাজার, বি-ব্লক, মাঝিড়া বন্দর, সুজাবাদ, সাজাপুর, সাজাপুর ফিলিং  স্টেশন, শাজাহানপুর, বেতগাড়ী, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সামনে, তেলিপুকুর,  দোয়েল পাম্প, চারমাথা, ঝোপগাড়ি, মাটিডালী মোড়, গোকুল, নওদাপাড়া, বাঘোপাড়া, মহাস্থান, চন্ডিহারা, মোকামতলা, ফাঁসিতলা, সহ মহাসড়কের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য মোড় বা বাঁক।
মহাসড়কের এসব মোড়গুলো মানুষের কাছে মরণফাঁদ(ডেথস্পট) হিসেবে পরিচিত। এসব স্থানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকায় প্রত্যেক ঈদে সেই আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কারণ ঈদের সময়গুলোতে মহাসড়কে গাড়ির চাপও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় । বিভিন্ন সড়কের গাড়ি এসে যুক্ত হয় এই সড়কে। তখন এসব সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ অনেকটাই দায়সাড়ায় পরিণত হয়েছে।
পবিত্র ঈদ আযহা’র আরমাত্র ৩দিন বাঁকি। গত বৃহস্পতিবার থেকেই প্রায় সবগুলো অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ৯দিনের ছুটি  ভোগের উল্লাসে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা পুরোদমে শুরু করেছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ফলে মহাসড়কের একাধিক স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ মোড়গুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে।
এদিকে মহাসড়কের বগুড়ার জেলার ৭টি ও গাইবান্ধার ৮টি মোড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১৫ সালের মে মাসে ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে মহাসড়ক দুই লেন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু নকশায় ক্রুটি দেখা দেয়ার এ কারণে কাজগুলো শেষ করা সম্ভব হয়নি।  তবে নকশা সংশোধন হয়ে আসলে আবার কাজ শুরু হবে বলে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কের ছোট-বড় খানা-খন্দকগুলো মেরামত করতে সার্বণিক কাজ চলছে । তবে দুই একটি স্থানে সামান্য সমস্যা থাকলেও দুর্ঘটনা ঘটার কোন আশঙ্কা নেই।
পাশাপাশি মহাসড়কের অবস্থাও অনেক ভাল। কিন্তু চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বলে এই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন ।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পশ্চিমের নলকা, রাজশাহীর পবা এবং রংপুরের পাগলামোড় পর্যন্ত মহাসড়ককে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখতে মহাসড়কের এসব অংশে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশের একাধিক টহল দল কাজ করবে। পাশাপাশি মহাসড়কের ২৭টি স্পটে ১শ’ ৩৬ জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করবে। থাকবে একাধিক মোটরসাইকেল টিম। বসানো হয়েছে কন্ট্রোল রুমসহ বিভিন্ন উদ্যোগ  হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন আরও বলেন, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ও নাটোরের বনপাড়ায় দু’টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। সেখান থেকে চালকদের নির্দেশনা দেওয়ার কাজ চলবে। বগুড়ার মাটিডালী ও সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় সার্বণিক অতিরিক্ত ফোর্স থাকবে। হাটিকুমরুল ও বনানীতে দু’টো রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে এমন প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ যোগ করেন ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা। অন্যদিকে সম্প্রতি সরকারের একনেকের বৈঠকে উত্তরাঞ্চলের মানুষের নিরাপদ যাত্রা সফল করতে এই মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরার বিল পাশ হওয়ায় বর্তমানে সাময়িক কষ্ট হলেও ভবিষ্যতে অবাধ যান চলাচলের আশায় অধীর আগ্রহের দিনগুনছে ভুক্তভোগী মানুষেরা। তবে এই মহাসড়কটি চার লেনের কাজ কবে নাগাদ শুরু এবং শেষ হবে এমনকি সম্পন্ন হলে হয়তো বা নিরাপদে ঘরে ফিরে যাবে সেই প্রতীক্ষায় রয়েছেন উত্তরজনপদের মানুষেরা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.