এখনও সময় আছে, জাতীয় কমিটি গঠন করুন: প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল

0 ৪৮১

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় কমিটি গঠন করা উচিত মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এখনও সময় আছে। জাতীয় কমিটি গঠন করুন। এটা আপনাকেই উদ্যোগী হয়ে করতে হবে। এটা সরকারেরই দায় এবং দায়িত্ব। এটা করলে তখন সকলের মধ্যে একটা ধারণা আসবে- ‘উই আর ওয়ান’। আমরা এক। দে কেন ডু।’

সোমবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এ কথাটা বার বার বলেছি যে, আমরা কখনোই সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছি না, আমরা সরকারকে সাহায্য করতে চেয়েছি। আমরা বলেছি যে, ত্রুটি নয়, আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি। আমরা সরকারকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত একটা জাতীয় কমিটি তৈরি হয়নি। যেটা করা উচিত ছিলো বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ তো ১৬০ মিলিয়নের দেশ। এখানে অর্থনীতি একেবারের নিচের দিককার। এ ধরনের সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে যদি একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা যায় সেটাই হবে দেশের জন্য ভালো কাজ। আমরা মনে করি যে, এখনও সময় আছে জাতীয় কমিটি করা দরকার, এটা গঠন করা উচিত।’

কিভাবে এই কমিটি হতে পারে- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আমি আগেও বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’

শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘একখানে বসে মিটিং করতে হবে- তা বলছি না। ঘোষণা করে আপনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই এ জাতীয় কমিটি গঠন করতে পারেন। তখন সকলের মধ্যে একটা ধারণা আসবে- ‘উই আর ওয়ান’। আমরা এক। দে কেন ডু। অথবা ওইভাবে সকল নিরাপত্তা রেখে যদি সভা করতে চান তাও পারেন।’

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিএনপির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মহামারি থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঘরবন্দি মানুষজন বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ ইতোমধ্যে করছে। এটা অব্যাহত থাকবে।’

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দাঁড়াচ্ছে সেটা হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনের অর্থনৈতিক সমস্যা। এখন সবাই এটা বলছেন। বিশেষ করে যারা অর্থনীতিবিদ আছেন তারা বেশি করে বলছেন। বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষই এখন দিন আনে দিন খায়। এই বিশাল একটা অংশ কিন্তু কয়েকদিন ধরে কোনও আয় করতে পারছে না এবং এটা একটা টার্মিং পজিশনে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেই মানুষগুলোর জন্য যদি ইমিডিয়েটলি উপযোগী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায় তাহলে কিন্তু একটা বড় রকমের বিপর্যয় দেখা দেবে। যেটা আমরা ১৯৭৪ সালে দেখেছি- এই ধরনের বিপর্যয়। এ বিষয়গুলো সরকারের দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, সেনাবাহিনীকে যদি সেই কাজে লাগানো যায় এবং অন্যদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা আছেন একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা আছেন তাদের সম্পৃক্ত করে যদি সেই কাজগুলো করা যায় এবং সব রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি সেই কাজে সম্পৃক্ত করা যায়, তাদেরকে যদি একসাথে করা যায়- তবে তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। তার জন্য বরাদ্ধ থাকতে হবে, তার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী থাকতে হবে।’ব্রেকিংনিউজ

হাসপাতালের বর্তমান চিকিৎসাসেবার প্রসঙ্গে টেনে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন ঢাকার অবস্থা কি আপনারা তা দেখছেন। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনও রোগে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে …। আজকের পত্রিকায় আছে যে, একজন এপেনডিসাইটিসের রোগী ৮টা হাসপাতালে ঘুরে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে পারছে না। আমরা যে কারণে বার বার বলেছি, বিষয়টাকে পুরোপুরি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এই জাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এটা এক্সিসটেন্সের প্রশ্ন। সেই এক্সিসটেন্সের জন্য এখন সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। বিষয়টার দায়টা সরকারের, দায়িত্ব সরকারের। তাকেই উদ্যোগটা নিতে হবে- বিরোধী দলকে কিভাবে কাজে লাগাবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কিভাবে কাজে লাগাবে, পরিবেশ কিভাবে সৃষ্টি করবে সেটা সরকারকেই ভাবতে হবে। এখানে সমস্যা অনেক। আমরা মনে করি সরকারের অনেক অনেক বেশি দায়িত্ব, তাদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।’

সরকারের একটা ভুলের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বড় ভুল হয়েছে যে, ছুটি ঘোষণা করে তার দু’দিন পর পর্যন্ত পরিবহন চালু রাখা। এতে করে সমস্ত মানুষ ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। এটা হতে পারে যে, ঢাকাকে এলিমেটেড করেছে। এট দ্য সেইম টাইম … আমি দেখলাম, এক কোটি মোবাইল ফোন ঢাকার বাইরে চলে গেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছি, সত্য-মিথ্যা জানি না, ৪০ হাজার বিদেশফেরত প্রবাসীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ৪০ হাজারের মধ্যে কতজন আছে, না আছে …। একটা জিনিস আমি যতটুকু দেখছি, তাপমাত্রা যত বাড়বে তত ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসবে। দ্যাটস এ হোপফুল সাইন, আল্লাহতালার অশেষ রহমত।’

চীনের ঘটনার পর সরকার যথাযথ প্রাক-প্রস্তুতি নিলে সমস্যা এমন প্রকট হতো না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘সমস্যাগুলো প্রথম থেকে তারা (সরকার) দেখলে এটা প্রকট আকার ধারণ করতো না। লকডাউন যেটাকে বলে সেই লকডাউট তো সেভাবে হয়নি। এটাকে প্রিভেল করেছে। যার ফলে দেখা গেছে যে, প্রথম দু-একদিন কক্সবাজারে পর্যন্ত মানুষ বেড়াতে গেছে, ছুটি কাটাতে সিলেটে গেছে। আমাদের দেশে সবাই তো সচেতন না, অনেকে বুঝতে পারেনি।’

হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে, লঞ্চে একসাথে সারা দেশে যাতায়াত করেছে। এটা তো আরও ভয়ংকর…’- যোগ করেন তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.