কেন মানুষ অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করে

0 ৯৪৭

লাইফস্টাইল অনলাইন ডেস্ক : মানুষ অজান্তেই নিজের পারফরমেন্স অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে। এর মাধ্যমে সে নিজেকে যাচাই করার চেষ্টা করে থাকেন। এজন্যই সে প্রতিযোগিতায় অবর্তীর্ণ হয়। কিন্তু কেন মানুষ এমনটি করে থাকে?
নিউরন জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষ যখন কাউকে সহায়তা করে তখন তার পারফরমেন্সের মধ্যে নিজেরটা দেখতে পায়। একজন ভালো সঙ্গী সব সময় কারো দক্ষতাকে আরো বেশি তুলে ধরে। অন্যদিকে, একজন বাজে সঙ্গী নিজেকে প্রতিযোগী হিসাবেই তুলে ধরে।
প্রতিযোগিতার সময় একজন দক্ষ প্রতিযোগী অন্যদের এ কথা বুঝতে বাধ্য করে যে, তাদের পারফরমেন্স আরো বেশি খারাপ। আর বাজে প্রতিযোগিরা তার বিপরীতে দাঁড়ানোরদের আরো বেশি আত্মবিশ্বাস দেন।
প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অংশ সক্রিয় ওঠে যাকে সবাই বলেন ‘সেল্ফ-আদার মারজেন্স’। এই অংশটি এরিয়া ৯ নামের আরেকটি অংশের সঙ্গে একযোগে। সামাজিক ক্রিয়াকর্মের সময় শিক্ষার্থীদের এরিয়া ৯ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ কথা বলেন ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী মার্কো উইটম্যান।
নিজের পারফরমেন্সের সঙ্গে অন্যের পারফরমেন্সের তুলনা করতে এই অংশটি কাজ করে। এ ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় নিজের সামর্থ্যের ভিত্তিতেই কেবল নয়,

নিজস্ব ধারণায় অন্যদের দক্ষতাও বিচার করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব জুরিখের নিউরোইকোনমিস্ট ক্রিস্টিয়ান রাফ জানান, আসলে এ গবেষণার মাধ্যমে এটাই স্পষ্ট হয় যে মানুষের মধ্যে কেন এত বিচিত্রতা।
সামাজিক তুলনা: এ গবেষণায় উইটম্যান এবং তার সহকর্মীরা ২৪জন অংশগ্রহণকারীকে বেছে নেন। তারা একটি গেম খেলেন যেখাবে সময়ের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে হয়। এ সময় তাদের মস্তিষ্কের এফএমআরআই করা হয়। এই যন্ত্রের সহায়তায় তাদের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল দেখা হয়।
অংশগ্রহণকারীদের গেমটি খেলতে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখা হয়। তারা চাইলেই অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিযোগী মনোভাব নিয়ে খেলতে পারবেন। তবে তারা চাইলে প্রতিযোগিতায় নাও নামতে পারবে।
এক দফা খেলার পর প্রতিযোগীকে নিজের পারফরমেন্স এবং অন্যদের পারফরমেন্স নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হয়। উইটম্যান জানান, সহায়তা করার সময় মানুষ নিজে কতটা ভালো চিন্তা করতে পারে তা অন্যদের সঙ্গে মানানসই করার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় তার বিপরীতটাই করার চেষ্টা করে।
এই গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে, নিজেকে এবং অন্যদের ক্ষেত্রে নিউরন যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে তা আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি জটিল। এ ধরনের সংকেতকে অন্যান্য দৃষ্টিকোণে বিচার করতে হবে।
মস্তিষ্কের এরিয়া ৯: এফএমআরআই-এর তথ্য প্রমাণ দেয় যে, মস্তিষ্কের দুটো অংশ এ ধরনের কাজে সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম অংশটি পেরিজেনুয়াল অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স। এটি মস্তিষ্কেরে মধ্যাঞ্চলের গভীরে অবস্থিত। এই অংশে প্রতিক্রিয়াশীল গেম খেলার ক্ষেত্রে সক্রিয়তা তৈরি হয়।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় অঞ্চল অর্থাৎ এরিয়া ৯ অন্যদের দক্ষতা বিচারে কাজ করে। নিজের সঙ্গে অন্যের তুলনাতেও এই অংশটি কাজ করে। এই অঞ্চলের সংকেত যত বেশি স্পষ্ট হবে, নিজের এবং অন্যের তুলনার বিষয়টি তত বেশি শক্তিশালী দেখাবে।
উইটম্যান জানান, নিজের এবং অন্যের তুলনামূলক বিচার করতে সত্যিকার অর্থেই বেশ কঠিক সময় পার করতে হয় মানুষকে।
রাফ জানান, মস্তিষ্কের সংকেত এবং আচরণের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষতিকর দিকটি চিহ্নিত করতে এফএমআরআই যন্ত্রকেও বেশ পেরেশান হতে হয়।
অংশগ্রহণকারীরা এ পরীক্ষায় বেশ নিখুঁত এবং বুদ্ধিমানের পরিচয় দেন। উইটম্যান জানান, অন্যদের সঙ্গে তুলনার সময় মানুষের সাধারণ জ্ঞান কাজ করে কিনা তা উঠে আসেনি পরীক্ষায়। তারপরও মানুষ অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করার সময় কি কি ভাবে সে বিষয়টি বেশ মজার। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট। ব্রেকিংনিউজ/

Leave A Reply

Your email address will not be published.