খালেদা জিয়া ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অসম্ভব

0 ৮১৫

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিএনপি ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অসম্ভব বলে দাবি করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে ছাড়া সেটা কখনোই হতে পারে না।’
রবিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখার প্রতিবাদে ও তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, ‘বিএনপির মতো এত বড় একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এই ছোট জায়গায় করা সম্ভব না।’
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা ছোট জায়গা দিয়ে আমাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরো রাজশাহী আজ সমাবেশে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার মায়ের মৃত্যুর কারণে তিনি আসতে পারেননি। আমরা তার মায়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া তথা ২০ দল ও বিএনপি নেতাদের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরও একটা নির্বাচন করতে চায় এই সরকার। কারণ তারা জনগণকে ভয় পায়। কারণ তারা ক্ষমতায় এসেই বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। শেয়ার বাজার লুট করে মানুষকে পথে বসিয়েছে। আজকে ১০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকায় মোটা চাল কিনতে হচ্ছে।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘জনগণের ওপরে শেখ হাসিনার কোনও আস্থা ও বিশ্বাস নেই। তাই হাত উঁচিয়ে তিনি নৌকায় ভোট চান। জনগণকে ওয়াদা করাতে চান।’
গণতন্ত্রের মুক্তি মানেই খালেদা জিয়ার মুক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। আজকে যদি নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে জনগণ আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। সেজন্য শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ভয় পান, জনগণকে ভয় পান।’
সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ছাড়া কি অংশগ্রহণমূলক হতে পারে?’ এসময় জনগণ সমম্বরে ‘না’ সূচক উত্তর দেয়। তখন ড. মোশাররফ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে আর কোনও নির্বাচন হতে দেয়া হবে না ‘
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ জানতাম না। হঠাৎ করে একটা আন্দোলন হলো। আগামী দিনে গণতন্ত্রের আন্দোলন, জনগণের অধিকারের আন্দোলনও সেরকম হবে। জনগণ যখন রাস্তায় নামবে তখন তারা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই ঘরে ফিরবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন করবে। সেই আন্দোলনে রাজশাহীবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসচি দিয়ে আসছি। এতে যদি সরকারের বোধদয় না হয় তাহলে কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। সেই আন্দোলন সফল করতে আপনারা প্রস্তুত আছেন কি না।’ তখন জনতা হাত উঁচিয়ে সায় দেয়।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবেদিন ফারুক, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, কর্নেল (অব.) এম এ লতিফ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান প্রমুখ।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বললেন যারা কোটা আন্দোলন করলেন সব রাজাকারের বাচ্চা। অর্থাৎ মতিয়া চৌধুরী ছাড়া এদেশে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। আমি জানতে চাই মতিয়া চৌধুরীরা কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছে।’
খালেদার দুর্নীতি মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার বারবার বলে বেগম খালেদা জিয়া দুই কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্রে দুই কোটি টাকা ব্যাংকে বেড়ে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। তাহলে তিনি কিভাবে টাকা আত্মসাত করলেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন এই মামলা আমরা দেই নাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছে। ভাল কথা তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আপনার বিরুদ্ধে যে ১৫টি মামলা দিয়েছিল সেই মামলাগুলো কোথায় গেলো।’
আব্বাস বলেন, ‘সরকার পুলিশের মাধ্যমে আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। বাধা দেয়। অখচ পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় তাদের কাজে নাকি আমরা বাধা দেই। এটা কোন দেশে বাস করছি? আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করি। বাংলাদেশের কোথাও জেলখানা থাকবে না। সব জেলখানা ভেঙে বিএনপি নেতাকর্মীদের বের করে আনবো। সবাই প্রস্তুতি নেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি সভা করবো এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকারের চাকরি যারা করেন তাদের বলছি চাকরি বিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। ইতিহাস বলে পুলিশ কোনো সরকারকে রক্ষা করতে পারে নাই। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানকে রক্ষা করতে পারে নাই। সুতরাং জনগণের শক্তির কাছে পৃথিবীর সকল শক্তি পরাজিত হয়েছে। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করছি। কার কাছে মুক্তি চাইবো। চোরের কাছে মুক্তি চাইবো? দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন যারা তাদের কাছে দেশনেত্রীর মুক্তি চাইবো! হয় তাকে মুক্ত করবো, না হয় আমরাও বন্দি থাকবো। পুলিশের ভয়ে আন্দোলন করবো না, ঘরেও ঘুমাতে পারবো না তা হতে পারে না। যারা আমাদের ঘুম হারাম করে তাদের বলবো- নিজেদের ঘুম হারামের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
সব কোর্টই মুজিব কোর্ট উল্লেখ্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যাদের নাই কোনো গতি তারা হয়েছেন শেখ হাসিনার বিচারপতি। একটা মীমাংসা করার জন্য দেড় মাস লাগে এটা হতে পারে না। বাংলাদেশ কারও পৈত্রিক সম্পত্তি না। এই বাংলাদেশ রক্ত দিয়ে কেনা। আমাদের এখন একটাই আন্দোলন বেগম খালেদা জিয়া বন্দি থাক, শেখ হাসিনা নিপাত যাক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা এখানে কেন সমবেত হয়েছি। আমাদের নেত্রী সাবেক তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে সরকার। আমরা এই মিথ্যা মামলা মানি না। এই মাঠে উপস্থিত জনতাকে সাথে নিয়ে সরকারকে বলতে চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, অন্যথায় পরিণতি ভাল হবে না।  বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাকশাল বিদায় করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করবো। যত দিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দেবে না সরকার ততদিন আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির  আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যে মাঠ আমাদের বরাদ্দ করা হয়েছে তা বিভাগতো নয়ই, একটি জেলা কিংবা উপজেলার সভা করার মতোও নয়। তাই বলেছিলাম, আমাদের মঞ্চ হবে এই ভুবন মোহন মাঠ আর সারা শহর হবে জনসভার মাঠ। আজ তাই হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৩ টি আসনে নির্বাচন করেছেন (২৩ টিতেই একজনের নির্বাচন করা সম্ভব) এবং ২৩টিতেই জয়লাভ করেছেন। বাংলাদেশে এই রেকর্ড আর কোনো নেতার নেই। আজকে সরকার ভয় পেয়ে একটি বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। কারণ তিনি যেন আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন।’
বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আগামীতে কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে। আগামীতে যখন তারা আন্দোলন পরিবর্তনের নির্দেশ দেবেন তখনই আমরা নতুন কর্মসূচি দেবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘রাজশাহী বিভাগ  বেগম খালেদা জিয়ার ঘাঁটি, সেজন্য আওয়ামী লীগ শঙ্কিত, তারা জনগণকে ভয় পায়। তারা সমাবেশ করার জায়গা না দিলেও পুরো এলাকায় আজ লাখ লাখ জনগণ জমায়েত হয়েছে। সমুদ্রের পানি বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা যায় না। সারা দেশে সমুদ্রের গর্জন উঠেছে। যুব সমাজের কোটার আন্দোলনকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ পুলিশ বন্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বন্ধ করতে পারেনি। যুবসমাজ সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে কোটা বাতিল করতে সক্ষম হয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘১৯৬৮ সালে স্বৈরাচার আইয়ুব খান উন্নয়নের মিছিল করেছিল। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারও আইয়ুব খানের মতো উন্নয়নের মিছিল করেছে। এটাই স্বৈরাচারী সরকারের নিয়ম।’
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ ঘিরে জনতার ঢল নামে। এদিন সকাল থেকেই পুলিশি বাধা, হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজশাহী মহানগর ও জেলা, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা থেকে জনগণ দুপরের আগেই মাঠপ্রাঙ্গণে আসতে থাকে। অনেকে আবার আগের দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেও রাজশাহী শহরে অবস্থান নেয়।
দুপুর ২ টার আগেই ভূবন মোহন পার্ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। একসময়  পুরো শহর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত জনতার শ্লোগানে শ্লোগানে এদিন যেন উত্তাল হয়ে উঠে রাজশাহীর আকাশ-বাতাস। সবার এক কথা- ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার তুই কবে যাবি?’ ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি?’ ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দিবো না’। এর আগে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ উপলক্ষে মাইকিং করতে দেখা গেছে। ব্রেকিংনিউজ/

Leave A Reply

Your email address will not be published.