নবম-দশম শ্রেণির পদার্থ বিজ্ঞানে তথ্যগত ভুল

0 ৩,৬৪৮

আব্দুল হান্নান আকন্দ :
জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞানে কিছু তথ্যগত ভুল রয়েছে বলে দাবি করেছেন, বগুড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল টাচ্ ইন্সটিটিউটের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান (তড়িৎ কৌশল বিভাগ) মোঃ ফরিদুল ইসলাম সরকার। তিনি ছোট বেলা থেকে ইলেকট্রিক্যাল গবেষণা করতেন। বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া শিখে ফরিদুল ইসলাম ওই ইন্সটিটিউটে গত ২০১৬ সাল থেকে কর্মরত রয়েছেন।

ফরিদুল ইসলাম সরকার জানান, নবম-দশম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞানের (১২.২.১) দ্বাদশ অধ্যায়ে তড়িৎ চৌম্বক’র সলিনয়েড় তৈরী সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন তারকে অনেক বার পেচিয়ে একটি কুন্ডলী তৈরী করা হয়, এরকম কুন্ডলীকে সলিনয়েড বলে। কথাটি যুক্তিযুক্ত নয়, কারণ-কোন তারকে শুধু মাত্র ১ বার পেচিয়েও কুন্ডলী বা সলিনয়েড তৈরী করা যায়। অর্থাৎ কোন পরিবাহী তারকে ৩৬০ ডিগ্রী বাঁকানো হলে বিদ্যুৎ প্রবাহ দেওয়ার ফলে যখন চৌম্বক বলরেখা অক্ষের সমান্তরালে প্রবাাহিত হয় তখন তাকে সলিনয়েড বলে। সলিনয়েড এর পাক সংখ্যা প্রয়োজন অনুসারে ১ থেকে শুরু করে যে কোন সংখ্যায় হতে পারে।

একই অধ্যায়ের তড়িৎ চৌম্বকে (১২.২.২) এখানে বলা হয়েছে, শুধু কয়েলে যে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরী হয় তার থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র তৈরী করা যায়। যদি এই কুন্ডলীর ভেতর এক টুকরা লোহা ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। এ কথাটি যথাযথ নয়। এখানে মুলত লোহা জাতীয় বস্তÍু চৌম্বক বলরেখার পরিবাহক হিসাবে কাজ করে। যেমন পরিবাহী তার বিদ্যুৎ পরিবহন করে। সলিনয়েড বিদ্যুৎ দিলে বল রেখাগুলি অক্ষের সমান্তরালে প্রবাহিত হয় আর প্যাচগুলো এক জায়গায় থাকে না, তাই প্যাচগুলো আলাদা আলাদা চৌম্বক বলরেখা সম্মীলিতভাবে সমবলে কাজ করতে পারে না। কারণ প্রত্যেকটা প্যাচের মধ্যে একটি দুরত্ব থাকে। শুন্য মাধ্যমে চৌম্বক বলরেখা সহজে প্রবাহিত হতে পারে না. অধিক বাধার সম্মুখীন হয়। আর লোহাতে চৌম্বক বলরেখা সহজে প্রবাহিত হয়। তাই লোহা ঢুকালে সলিনয়েডের সমস্ত প্যাচের উৎপন্ন বলরেখার প্রভাবে লোহার মধ্যকার অনু চৌম্বক গুলো সারিবদ্ধভাবে দন্ড চৌম্বকের ন্যায় আচরন করে।তাই আমরা এক কথায় বলতে পারি লোহা উৎপাদক নয় পরিবাহক।

তিনি আরো বলেন, ওই অধ্যায়ের (১২.২.৪) এতে ডিসি মটর- বলা হয়েছে, একটি তারের মধ্য দিয়ে খুব বেশী বিদ্যুৎ পরিবহন করা যায় না। এটাও সঠিক নয়। কারণ একটি তারের মধ্য দিয়ে কী পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারবে তা নির্ভর করবে তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল এবং উপাদানের উপর। আর চৌম্বকচ্চালক বলের একক হিসেবে আমরা জানি (প্রবাহ গুন পাক সংখ্যা) বা এ. টি। তাই পাক সংখ্যা যদি ১টিও হয় এবং কারেন্ট যদি বেশী হয় তাহলেও অধিক শক্তিশালী তড়িৎ চৌম্বক তৈরী করা সম্ভব। আবার যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র বিকর্ষণ বলের কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। এ কথাটাও যথাযথ নয়। কারণ একটি মটরে আকর্ষন ও বিকর্ষণ বল দুইটি সমান ভাবে কাজ করে। এমনিভাবে পদার্থ বিজ্ঞানে জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার বিষয়ে যথার্থ সংজ্ঞা এবং সুষ্পষ্ট ধারনা দেয়া হয়নি।

বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের সাবেক উপাধ্যক্ষ, বতর্মানে পাবনা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ ড. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, পদার্থ বিজ্ঞানের উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমিও ভাবছি। বই যা আছে তা শতভাগ সঠিক তাও বলা যাবে আবার শতভাগ সঠিক নয় তাও বলা যাবে না। এটা বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা। তবে, যাকে যেভাবে বললে বুঝবে, তাকে সেভাবে হয়তো বলা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.