নিজ শিশুকে গলা টিপে হত্যা করল মা!

0 ৪৯২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে মানসিক ভারসাম্যের অভাবে সানোয়ারা বেগম-(২৭) নামে এক মা তার দুই বছরের শিশু সন্তান মোঃ রাফিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান  সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর সকালে বাঞ্চারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার একটি বিল থেকে শিশু রাফির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশু রাফি উপজেলার ভেলানগর গ্রামের  সৌদি আরব প্রবাসী মোঃ ফারুক মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শিশু রাফির মা সানোয়ারা বেগম সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেলানগর গ্রামের আশরাফ জালালীর ছেলে মোঃ ফারুক মিয়ার সাথে একই উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের সাগর মিয়ার মেয়ে সানোয়ারা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী ফারুক মিয়া একটি ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে যান।

পরে জীবনযাত্রার মনোন্নয়নের জন্য ফারুক ম্যাচ ফ্যাক্টরির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সৌদি আরব চলে যান। শ্বশুরবাড়িতে জায়গা সংকটের কারণে সানোয়ারা বেগম তার বাবার বাড়ি এসে তার বড় চাচার ঘরে বসবাস শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আরো জানান, স্বামী মোঃ ফারুক মিয়া সৌদি আরব যাওয়ার সময় স্বজনদের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা শোধ দিতে না পারায় দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ‘হতাশাগ্রস্ত’ হয়ে পড়েন সানোয়ারা বেগম।

এছাড়া রাফি একটি বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। শরীরের কোথাও আঘাত পেলে রক্ত জমাট বাঁধার পাশাপাশি সামান্য কেটে গেলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধের জন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হতো। স্বামী প্রবাসে যাওয়ার প্রায় তিন বছর হতে চললেও রাফির বিরল রোগের চিকিৎসা খরচ ও সাংসারিক খরচের যোগান দেয়ার পর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ‘হতাশাগ্রস্ত’ হয়ে পড়েন সানোয়ারা।

এসব কারনেই গত ৩০ অক্টোবর ভোরে রাফিকে প্রশ্রাব করার জন্য ঘরের বাইরে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। এরপর বাড়ির পাশে একটি বিলের কচুরিপনার ওপর রাফির মরদেহ ছুড়ে ফেলে দেন।  পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

হত্যকাণ্ডের ঘটনায় রাফির দাদা আশরাফ জালালী ওইদিনই বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ‘সন্দেহজনক আচরণ’দেখে সানোয়ারাকে আটক করে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মেহেদী হাসান, বিশেষ শাখার (এসবি) সহকারী পুলিশ সুপার আলাউদ্দিন চৌধুরী ও ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.