বয়সের সাথে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেসব বিষয় সচেতন থাকা উচিত

0 ৪৭২

স্বাস্থ্য ডেস্ক: বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই।তবে জীবনে ঠিক কবে শেষ বারের মত ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন আপনার মনে নেই,আর মেডিকেল চেকআপ সে আবার কি জিনিস,এমন গল্প করতে,করতে যদি আপনি একটু ও ক্লান্ত বোধ না করেন,কিংবা সাধারণ অসুখে নিজেই যদি নিজের ডাক্তারি করেন তবে আপনাকেই বলছি।বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক নানা ধরণের পরিবর্তন আসে।পরিবর্তন আসে আমাদের শারীরিক সামর্থে এবং আমাদের মেটাবলিজমে।সেসাথে শরীর যন্ত্র চলতে,চলতে জং ধরতে শুরু করতে পারে।অথচ ঘুণাক্ষরে আপনি হয়ত টের পাননি।কিন্তু তত দিনে শরীরে জেঁকে বসতে পারে নানা ব্যাধি।

স্বাস্থ্য সচেতনতা যেসব কারণে দরকার

আসলে আমাদের শরীরের প্রতি সবারই সব সময়ই যত্নশীল হওয়া উচিত।তবে,বয়স ৩০ পার হলেই একটু বেশি সচেতন হওয়া আমাদের কর্তব্য।কারণ,বর্তমানে আমরা খুব অল্প বয়স থেকেই নারকম মানসিক চাপ,অতি মাত্রায় টেনশন,ডিপ্রেশন এবং ডিসস্যাটিসফেকশনে ভুগে থাকি।পাশাপাশি,অপুষ্টি এবং বংশগত রোগের ইতিহাস থাকলে সেটিও হতে পারে আরেক মাথা ব্যথার কারণ।সব মিলিয়ে এগুলোর নেতিবাচক ফল হিসাবে আমরা খুব অল্প বয়স থেকেই নানা রোগে ভুগতে পারি।এ কারণে আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ে কোন হেলা ফেলা করা ঠিক নয়।

আশা করি নীচের পরামর্শ গুলো সবার কাজে লাগবে:

  • যদিও যেকোন বয়সে আমরা যে কোন রোগে ভুগতে পারি তবে বয়স যখন ৩০-৪০ পেরোই তখন বাড়তি সচেতন হবার কোন বিকল্প নেই।
  • বর্তমানে আমাদের লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন,খাদ্যভাসে এবং অলস জীবন যাপনের কারণে বয়স ২০ না পেরুতেই দেখা দেয় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা।
  • সচেতনতার প্রথম ধাপে সবাইকে যে কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই তা হল,বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস পর্যালোচনা করা।অর্থাৎ,পরিবারে পিতা,মাতা,দাদা,দাদি,নানা,নানি বা রক্তের সম্পর্কের কাছের কোন আত্মীয় যদি বিশেষ কোন ধরণের রোগে আক্রান্ত থাকেন তাহলে পরিবারের সদস্যদের উচিত ঐ বিশেষ রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
  • পরিবারে সদস্যের কোন বিশেষ রোগ থাকলেই যে তা পরিবারের প্রত্যকেরই হবে এমন নয়।তবে নীচের তথ্য গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন আপনার স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ আপনার পারিবারিক ইতিহাস,ভুল খাদ্যাভ্যাস নাকি জীবন যাপন পদ্ধতির ভুল।
  • পরিবারে পিতা মাতা কিংবা উভয়ের ডায়াবেটিস থাকলে পরবর্তিতে তাদের সন্তানদেরও ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থাকে।সুতরাং,যাদের পিতা,মাতার ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের একটু বাড়তি সচেতন থাকা প্রয়োজন।
  • মহিলাদের মধ্যে কারো মায়ের বা নানীর ব্রেস্ট ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তার উচিত বাড়তি সচেতন হওয়া।বিশেষ করে ৩০ বছরের পর সব নারীদেরি নিয়মিত চেক আপ করে দেখা উচিত যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোন লক্ষণ আছে কিনা?
  • কেননা,যেসব পরিবারে মা নানী বা খালার ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার ইতিহাস আছে সেসব পরিবারের মেয়েদের ও  ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার ঝুঁকি থাকে।
  • পিতা,মাতা বা তাদের পরিবারের কারো থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সন্তানদের মাঝে থাইরয়েড রোগ হতে পারে।একই ভাবে পরিবারে মা,খালার পিসিওস থাকলে পরিবারের মেয়ে সন্তানদের এই রোগটি হতে পারে।
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে কারো বাবা,চাচা বা দাদার প্রস্ট্রেট ক্যান্সার থাকলে তার ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • বাবা বা মায়ের বিশেষ করে মায়ের আইবিএস বা এনাল ফিশার থাকলে সন্তানদের মধ্যে এই সমস্যা গুলো চলে আসতে পারে।সন্তান খুব ছোট বেলাতে কিংবা বড় হবার পরও এই সমস্যাতে আক্রান্ত হতে পারে।তাই,এই ব্যাপারটাতে পিতা মাতার সচেতন থাকা উচিত এবং সন্তানদেরকে ও সচেতন করা উচিত।
  • বয়স ৩০ পার হলেই অনেক রোগের সুত্রপাত হওয়া শুরু হতে পারে।আপনি হয়তো খেয়ালই করেননি অথচ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,উচ্চ কোলেস্টেরল সহ অন্যান্য জটিলতা।
  • তাই,বয়স ৩০ পেরোবার পর পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই নিয়মিত ওজন,রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং লিপিড প্রোফাইল ঠিক আছে কিনা তা মনিটর করা উচিত।
  • বয়স ৩০ পেরোবার পর প্রত্যেক নারী এবং পুরুষের উচিত তার দেহে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি আছে কিনা সেটি মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া।
  • বয়স ৪০-৫০ বছর পেরোবার পর পুরুষদের উচিত বছরে অন্তত এক বার সিরাম পিএসএ লেভেল চেক করা।
  • এতে করে প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোন ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা বোঝা যাবে।
  • এছাড়া,বয়স ৪০ এর পর থেকে ফ্যাটি লিভার,কোলন ক্যান্সার,লান ক্যান্সার ইত্যাদি কোন জটিলতা আছে কি না সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

সবারই সবার আগে নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।স্বাস্থ্যের প্রতি সময় থাকতে একটু বাড়তি সচেতন হলেই নিজের শারীরিক অবস্থা,পরিবারের অন্য সবার মাথা ব্যথা বা কষ্টের কারণ হবার সুযোগ পাবেনা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.