‘ভোট একজনের, দিয়েছেন আরেকজন’, পরীক্ষায় ফেল কমিশন

0 ২৫১

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোথাও বাধা দেয়ার ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ত‌বে একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একইসঙ্গে বহুল আলোচিত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনের সামনে যে অগ্নিপরীক্ষা ছিল তাতে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে “বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও নির্বাচন মূল্যায়ন” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সুজন। এসময়  বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বিষয়টি এ নির্বাচনের বহুল আলোচিত একটি বিষয়। ইভিএম সম্পর্কে আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছিল যে, যদি নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ না হন, তবে একজন ভোটারের ভোট আরেকজন দিয়ে দিতে পারে। যেটি ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ঘটেছে। একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে ঘটার অভিযোগ থাকলেও কোথাও বাধা দেয়ার ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বা কাউকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়নি।

দিলীপ কুমার বলেন, ‘তার অর্থ কি এই যে, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন? ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুজন করে সহায়ক থাকার কথা ছিল। তারা তবে কী করলেন? এ জায়গাটি যদি ঠিক না করা যায় তবে কখনোই আমাদের নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ তথা সুষ্ঠু করা যাবে না।’

৯৪ শতাংশ মানুষ বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি:
সুজনের পক্ষ থেকে করা ফেসবুক জরিপে জানা গেছে, ৯৪ শতাংশ মানুষ বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এ বিষয়ে সুজন বলছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন কেমন হলো, তা জানতে নির্বাচনের পর সুজনের ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। এতে চার হাজার ৩০০ জন মানুষ অংশ নেয়। যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের ৯৪ শতাংশ বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদিও অনলাইন ভোট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়, এটি জনসাধারণের ধারণার অনেকটা ইঙ্গিত বহন করে।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশ্লেষকের মতামত এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যে সকল বিষয় উঠে এসেছে তার সঙ্গে বেশি দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই।’

স্বল্প ভোটার উপস্থিতি বিষয়ে সুজন বলেছে, এই নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল স্বল্প ভোটার উপস্থিতি। আমরা মনে করি, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া কারণসমূহ হলো- নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের অনাস্থ। অর্থাৎ ভোট সুষ্ঠু হবে না- এ ধরনের পূর্বধারণা। এছাড়া ইভিএম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার ও ইভিএম-এর ওপর আস্থা না থাকা, দলসমূহের পাল্টাপাল্টি হুমকির কারণে শঙ্কিত হয়ে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ হওয়া, পাড়া-মহল্লা ও ভোটকেন্দ্র পাহারা এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকদের জটলা ও মহড়া, আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে কিছু কিছু ভোটারের ভোট না দিয়েই ফিরে যাওয়া, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বিষয়টি প্রচার হওয়া, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে না গেলেও তাদের প্রার্থী জয়ী হবেই এমন ধারণা বদ্ধমূল থাকা, প্রধান প্রতিদন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ও ‘তাদের প্রার্থী জিততে পারবে না’ এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়া। তাছাড়া যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা ও একসঙ্গে দু’দিন ছুটি থাকাও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ:
সুজন বলছে, একটি প্রচার আছে যে, এই নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। আমরা মনে করি, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। কেননা, ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়, তবে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার পরেও যদি সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়, তবে বুঝতে হবে প্রতিপক্ষ এখানে চরম দুর্বল।

নির্বাচনের মাঠে বিএনপির অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ ছিল না :
বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের পর, বারবার তারা ভোটাদের ব‌লে‌ছে যে, বিএনপি মাঠ ছাড়বে না। তারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার কথা বলেছে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা অনিয়মের অভিযোগও করেছে। কিন্তু কোথাও অনিয়মের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদী হতে দেখা যায়নি। তাদের মনে রাখতে হবে, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাতেই একটি রাজনৈতিক দলকে জনগণের মধ্যে অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘এই নির্বাচনে কমিশনের সামর্থ প্রমাণের সুযোগ ছিল। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এটি স্পষ্ট যে, সামগ্রিকভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিলো ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন। তবে অতীতের তুলনায় নিয়ন্ত্রণের ধরন ছিলো কিছুটা ভিন্ন।’

বেশি ভোট পড়া কোনও কেন্দ্রে জিতেনি তাবিথ-ইশরাক: 
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১-৭০ শতাংশ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আতিক জিতেছেন ২৩টি কেন্দ্রে এবং তাবিথ কোনও কেন্দ্রে জিতেনি। অন্যদিকে তাপস জিতেছেন ৭টি কেন্দ্রে, কিন্তু  ইশরাক জিতেননি একটিতেও। ৭১-৮০ শতাংশ ভোট পড়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আতিক জয়লাভ করেছেন ৬টি কেন্দ্রে ও তাপস জিতেছেন ৭টি কেন্দ্রে। অন্যদিকে তাবিথ ও ইশরাক একটি কেন্দ্রেও জিতেননি।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। সম্পদশালীরা বেশি হারে নির্বাচিত হচ্ছে। অন্যদিকে স্বল্প শিক্ষিতের হার বাড়ছে। যা রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা ছিল। তারা এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে, এগুলা তদন্ত হওয়া দরকার।’

ব্রেকিংনিউজ

Leave A Reply

Your email address will not be published.