‘লক্ষণ ছাড়াই করোনার সংক্রমণ ঘটছে’

0 ২৯৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কোনো ধরনের পূর্ব উপসর্গ ছাড়াই করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যা ইতিমধ্যে জনমনে সঞ্চারিত হওয়া ভয়কে আরও বাড়িয়ে তুলবে। চীন জানিয়েছে যে দেশটিতে নতুন করে উপসর্গহীন ১৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার (১ এপ্রিল) চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এ তথ্য প্রকাশ করে।

চীনের হুয়াশান হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের পরিচালক ঝাং ওয়েনহোং বলেন, এ পর্যন্ত যত মানুষ কভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়েছে, তাদের “১৮ থেকে ৩১ শতাংশের মধ্যে এ রোগের কোনো লক্ষণই ধরা পড়েনি”। তবে তিনি এ–ও বলেন, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে ব্যাপক হারে কমিউনিটিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম।

তবে তার এ বক্তব্যের সাথে অনেক বিশেষজ্ঞই দ্বিমত পোষণ করেছেন। কারণ, যেসব মানুষজনের মধ্যে উপসর্গ নেই, কিন্তু তারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে গেছেন। তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করার কারণে এটা আরও বেশি পরিমাণে ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঝাং ওয়েনহোং আরও বলেন, চীনের বাইরে যেসব দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, সেসব দেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে কোনো উপসর্গ না নিয়ে দেশে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে চীনে আবার করোনার বিস্তার ঘটতে পারে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত মোট ১ হাজার ৩৬৭ জনকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে। তাদের চিকিৎকসা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সোমবার (৩০ মার্চ) চীন বলেছিল, বর্তমানে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৪১ জন। তাদের মধ্যে ২০৫ জনই বাইরে থেকে এই ভাইরাস বহন করে দেশে নিয়ে আসে। ৩০২ জন চিকিৎসাধীন কিংবা পর্যবেক্ষণে নেই। তাই গতকাল তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

এর আগে যাদের করোনা ভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে, তাদের মোট সংখ্যা প্রকাশ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর মধ্যে অনেকের উপসর্গ দেখা যায়নি। এ প্রেক্ষাপটে উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য প্রকাশের জন্য চীনের ওপরও চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে চীন এ তথ্য প্রকাশ করে।

করোনায় আক্রান্ত রোগীদের যে তথ্য চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন প্রকাশ করে, তা কতটা সঠিক, তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে। এ প্রেক্ষাপটে কমিশন জানিয়েছে, এখন থেকে উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা তারা নিয়মিত প্রকাশ করবে। উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মঙ্গলবার শনাক্ত হয় ৩৬ জন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনই বাইরে থেকে আসা।

চীন গত জানুয়ারিতে প্রথম দেশটিতে লোকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করে। এ পর্যন্ত মোট ৮১ হাজার ৫৫৪ জন কভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৩১২ জন।

চীনের উহান শহর থেকে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে দেশটিতে স্থানীয়ভাবে এবং সে দেশের বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে ফেরা মানুষের সংখ্যা প্রকাশের জন্য সরকারের ওপর দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চাপ দিয়ে আসছিলেন।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৮৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৯২।

এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৮৭২ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৭ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮৯ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৬ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৮ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬০ জনের অবস্থা সাধারণ। ৩৫ হাজার ৪৭৮ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।

এদিকে করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইতালি। ইতালিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ হাজার ১৫৫ জন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৩৮৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ১০২ জনের। চীনে ৩ হাজার ৩১২ জন। ফ্রান্সে ৪ হাজার ৩২ জন। ইরানে ৩ হাজার ৩৬ জন। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৩৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।

এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.