ইট ও সুরকি খসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর গোয়ালকান্দি জমিদারবাড়ি

0 ১৩৮

বিজয় কুমার ঘোষঃ জমিদারী প্রথা শেষ কিন্তু ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ি। কিন্তু সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে বাড়ির তিনটি ভবনের ইট ও সুরকি কসে যাওয়ায় এখন ধ্বংসের পথে। যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিণত হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ি কবে নাগাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য জানাযায়নি। তবে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের সময় জমিদার বংশধর গণ ভারতে চলে গেলে, গোয়ালকান্দি জমিদার প্রথা বিলুপ্ত ঘটে। বর্তমানে গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ির একটি ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালত হচ্ছে। অপর ভবন গুলে লিজ, ক্রয় বা বিনিময় সূত্রে দখল হয়ে আছে। কথিত আছে, ততকালীন জমিদার ছিলেন কংস নারায়ন। পরবর্তীতে গ্রীস দত্ত, সতীস দত্ত জমিদারী পরিচালনা করতেন। পরবর্তী সময়ে বড় ভাই অক্ষয় কুমার দত্ত, মেজ ভাই আশ্বিনী কুমার দত্ত ও ছোট ভাই অনিল কুমার দত্ত এই তিন ভাই পৈত্রিক সূত্রে গোয়ালকান্দি জমিদার প্রাপ্ত হন। তাবে তারাই ছিলেন এই বংশের শেষ জমিদার। সে সময় তারা জমিদারী পারিচলনার জন্য তিন ভাই ৩টি ভবন ও মন্দির নির্মাণ করেন। বর্তমানে জমিদার বাড়িগুলো ধ্বংসের পথে। কক্ষগুলো বিলীন হয়ে গেছে। অযত্ন আর অবহেলায় ভেঙে পড়ে যাচ্ছে দেওয়ালগুলো। লতাগাছ গজিয়ে ঢেকে গেছে পুরো বাড়ি। কারুকার্য খচিত দরজা-জানালাগুলোর কিছুই অবশিষ্ট নেই। খসে পড়েছে মূল স্থাপনার নানা অংশ। চুরি হয়ে গেছে অনেক মূল্যবান পাথরসহ আসবাবপত্র। স্থাপত্য শৈলীর অনুপম নির্দেশনাই মুছে যাওয়ার পথে।
গোয়ালকান্দি জমিদারবাড়িতে রয়েছে তিনটি দৃষ্টিনন্দন ভবন, মন্দির, পুকুর ও অসংখ্য গাছগাছালী। এক সময় কারুকার্য খচিত রং মহল গুলো ঝলমলেও এখন মলিন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে খসে পড়ছে ইট ও সুরকি। এইগুলো সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
যাতায়াত ব্যবস্থাঃ- রাজশাহী বা নাটোর শহর থেকে বাস যোগে পুঠিয়ায় নামতে হবে। পুঠিয়া থেকে বাস ও অটো যোগে তাহেরপুর যেতে হবে। তাহেরপুর থেকে অটো বা ভ্যান যোগে সিকদারী রাস্তায় ৫ কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে দৃষ্টি নন্দন জমিদার বাড়ি।
প্রক্তন শিক্ষক ও বর্তমানে জমিদার ভবনে বসবাসকারী মাহাতাব উদ্দিন সরকার (৯০) জানান, আমি সরকারের নিকট থেকে ২ দাগে ২৮ শতক জমি পর্তন করে নিয়ে বসবাস করছি। আমি যে টুকু শুনেছি, ১৯৪৭ সালে এখানকার জমিদার তিন ভাই ভারতে চলে যায়। সে সময় বড় ভাই অক্ষয় কুমার দত্ত তার জমি জমা এনামুল হক বিন্দু’র সাথে বিনিময় করে যান। মেজ ভাই আশ্বিনি কুমার দত্তের জমি সরকার প্রাপ্ত হয়। ছোট ভাই অনিল কুমার দত্ত তার ভাগের জমি জমা বিক্রয় করে দিয়ে চলে যান। বর্তমানে অনিল কুমার দত্তের বাস ভবনে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ কর্যক্রম পরিচালিত হয়।
শিক্ষক প্রনব কুমার সরকার জানান, সংস্কার না থাকায় জমিদার বাড়ীগুলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জমিদার বাড়ির সামনে একটি মন্দির ও হরিবাসর পরিচালনার জন্য একটি ঘর রয়েছে। আর ভবনের একপার্শ্বে জমিদারদের ব্যবহৃত শিব মন্দির, কালি মন্দির, রাধা গোবিন্দ মন্দির রয়েছে। এগুলো বর্তমানে বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ বকুল সরদার জানান, রাজবাড়ীর একটি অংশে ইউনিয়ন পরিষদ বাকি অংশ গুলো বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ইজারা বা পর্তন করে আছে। এই জমিদার বাড়িটা ঐতিহ্যবাহি ও বৃহত পুরাতন প্রাচীন একটি জমিদার বাড়ি এই জামিদার বাড়ি রক্ষনাবেক্ষনর জন্য সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার যদি করা হয় তাহলে প্রচীন সভ্যতার জামিদার বাড়ি পর্নতা পাবে। দর্শনীয় স্থান হিসাবে রুপান্তিত হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.