ঈদকে সামনে রেখে কামাড় পাড়ার কর্মকারগণ ব্যস্ত

0 ৮৮২

mail-google-comআবু ছাইদ, চিলাহাটি-নীলফামারী : নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটী কামাড় পাড়ায়  প্রতি বছরের ন্যায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কর্মকারগন ব্যস্ত সময় পার করছে। কোরবানীর পশু জবাইয়ের অন্যতম অনুসঙ্গ ছুরি, পাতি, দা, বটিসহ বিভিন্ন ধারালো জিনিস তৈরিতে এখন ব্যস্ত কর্মকার সম্প্রদায়। এসব ধারালো অস্ত্র চাহিদামতো সরবরাহে কর্মকার শিল্পীরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। সারা দিন হাত দিয়ে ভাতী টেনে লোহাকে পুড়ে বিভিন্ন ধরণের লৌহ জিনিস তৈরী করছেন কর্মকাররা। কামারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশী তৈরী চাকু, বটি, কাটারি ও ছুরি তৈরীর আগাম অর্ডার দেওয়া শুরু করায় কামার পাড়া টুং টুং শব্দে এখন মুখরিত। ভারি হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড। কেউ শান দিচ্ছেন,কেউবা ভাতি দিয়ে কয়লার আগুন বাতাস দিচ্ছেন।
কোরবানি ঈদ আসলেই বেড়ে যায় লৌহ শিল্পের সাথে জড়িতদের ব্যস্ততা। দিনরাত অবিরাম ঘাম ঝড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের লৌহ শিল্প তৈরী করতে ব্যস্ত থাকেন তারা। তবে ঈদের এক সপ্তাহ পুর্বে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর আগে ভাগেই লৌহ শিল্পের কারিগড়দের ব্যস্ততা ইতিমধ্যেই শুররুহয়ে গেছে।তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর লৌহ শিল্পের জিনিস পত্রের দাম একটু চড়া বলে জানালেন লৌহ শিল্পের সাথে জড়িতরা। এই শিল্পের সাথে জড়িতরা জানালেন, সারা বছর অনেকটা অলস সময় পার করে একটি মাত্র দিনের আশায় বসে থাকতে হয় তাদের। তাই কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে সারা বছর চলার মত অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করা হয়।তবে এ বছর আগে ভাগেই জিনিসপত্রের অর্ডার পাওয়ায় লৌহ শিল্পের কারিগড়দের মনে লেগেছে আনন্দ। মঙ্গলবার কামারপাড়ায় গিয়ে কআ হয়,দা, ছুরি, বটি তৈরীর কারিগর শ্রী হেমন্ত কর্মকার (৬২) এর সাথে। এই প্রতিবেদককে জানালেন, সারা বছর অনেকটা আমাদের অলস সময় পার করতে হয়। এতে সংসার চালানো বড় কষ্ট হয়। তার পরেও এ পেশা ছাড়তে পারিনি। শুধু মাত্র একটি দিনের আশায় বুক বেধে কোন রকমে দিন পার করি।তিনি বলেন, আকৃতি ও লোহা ভেদে দা ১শ’ থেকে ৩শ’ ৫০টাকা,ছুরি ২৫থেকে ১শ’টাকা, ধার করার স্টীল প্রতিটি ৫০ থেকে ২শ’টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। পুরনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ১০’ থেকে ৫০’টাকা নিচ্ছেন বলে জানান।
সূর্য কর্মকার জানান, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল । ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেও এই পেশা ধরে রেখেছি। সাড়া দিন চাকু, বটি তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচি।তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অভাবে কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছে অনেকে।স্থানীয় কয়েকজন কামার শিল্পি জানান, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এই কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে সেই তুলনায় কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। এদিকে লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। এছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব পণ্য তৈরীর বেশ কিছু আবার প্রযুক্তি নির্ভর হাওয়ায় কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কারনে অনেকে বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে কামার শিল্পকে গিলে খাচ্ছে চায়না বাজার। কামার পাড়ায় আসা গৃহিনী আসমাউল হুসনা রুমি বলেন, আমার পুরাতন একটি হাসুয়া ও দা ধার দেয়ার জন্য এখানে আসা।তাছাড়া একটি নতুন বটি কিনবো। কোরবানীর ঈদতো তাই এগুলো কেনা খুবই জরুরী। সব মিলিয়ে ঈদ আসলেই লৌহ শিল্পের সঙ্গে সংশি¬ষ্টদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। তবে প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব,তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টীল সামগ্রী আমদানি সহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে চিলাহাটীর কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.