স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদ করার কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে পাতাল। পদ্মা নদীতে পানি না থাকায় খাল-বিলগুলোও মৃতপ্রায়। এমন পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করতে আবারও ‘উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে।
রবিবার সকালে শহরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে করে আসা এই দাবির পুনরাবৃত্তি করা হয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘পরিবেশ বাঁচাও, কৃষি ও কৃষক বাঁচাও, মানুষ বাাঁচাও’ শ্লোগানে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চলের পাতাল প্রায় পানিশূন্য। এটি আমাদের কথা নয়; সরকারি সংস্থার জরিপেই এ চিত্র উঠে এসেছে। আমরা দুই দশক ধরে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। এর অন্যতম কারণ- আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
বক্তারা বলেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে চাষিদের সরবরাহ করে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নামছে। এই সংকট কাটাতে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের পরিকল্পনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এটি বাস্তবায়ন হলে ৭৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির চাষাবাদ সম্ভব হবে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে।
পদ্মা নদীকে বাঁচিয়ে রাখার দাবি করে বক্তারা বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত পানি। কিন্তু আমাদের পদ্মা নদীতে পানি নেই। চার বছর পরই ফারাক্কা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই পানির নায্য হিস্যা নিশ্চিত করে নতুন চুক্তি করতে হবে। পদ্মায় প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে কৃষিভা-ার নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা অনাহারে থাকব। দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। তাই পদ্মায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প।
পানি না পেয়ে দুই সাওতাঁল কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কৃষকদের প্রতি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) পানি বন্টনে অনিয়ম-বৈষম্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অতিষ্ঠ হয়ে দুইজন কৃষক জীবনও দিল। এসব ঘটনায় দোষীদের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা না গেলে আগামীতে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনা আছে।
বাপার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি নারী নেত্রী সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, রফিকুল ইসলাম মিলন, আদিবাসী নেতা সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, সালাউদ্দীন খান, তরুণ সংগঠক গোলাম নবী রনি, আল-আমিন বিন আরমান, সুফিয়া বেগম, জাহিদ হাসান, শ.ম সাজু প্রমুখ। মানববন্ধন ও সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাপার জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ জোবায়েদ হোসেন জিতু।
Comments are closed.