স্টাফ রিপোর্টার:
ইচ্ছে, পরিশ্রম, সততা নিয়ে পথ এগোলেই যে পৃথিবীকে জয়করা যায় আর দুনিয়ার সমস্ত সুখ সমৃদ্ধি পায়ে লুটিয়ে পড়ে এই সত্য কথাটি আবার প্রমান করলেন হস্ত শিল্পে সফল হওয়া এক নারী উদ্যোক্তা আঁখি’স কালেকশান এর সত্বাধীকারি সালমা রহমান আঁখি।
শুরুতে তার চলার পথটা এতটা মশৃন ছিল না। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে, নিজের মেধা, পরিশ্রম আর সততাকে পুঁজিকরে ধীরে ধীরে আজকের এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন। হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা জয় করেছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সাম্মাননা।
ঢাকায় জন্মনেয়া আঁখি ছোটবেলা থেকেই একটু ডানপিঠে স্বভাবের। চঞ্চলা, দুরন্ত, খেয়ালীপনা ও ফ্যাশন সচেতন সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটিই আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, আবৃত্তি, অভিনয়, উপস্থাপনা, মডেলিং সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ে ছিলেন বেশ পারদর্শী। যা থেকে অর্জন করছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা । এমনকি ঢাকা বিভাগ থেকে আন্ত বিভাগ গীটার বাজানো প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এই মেধাবী গুণী উদ্যোক্তা। এছাড়াও সেসময় খেলাঘর নামে একটি সংগঠনের সাধারন সম্পাদকও ছিলেন এই নারী উদ্যোক্তা।
বাবা সুলতান ঢালী ও মা শামিমা সুলতানার ঘরে জন্মনেয়া চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আঁখি সবার ছোট। পরিবারের সব ছোট সদস্য হওয়া সবার বেশ আদুরে ছিল মিষ্টি মেয়ে আঁখি।
হস্ত শিল্পে সফল উদ্যোক্তা সালমা রহমান আঁখি খিলগাঁও মডেল হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাস করেন। তারপর পল্টন গার্লস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সদা হাস্যজ্জল ও বন্ধূসুলভ আচরনের জন্য হাইস্কুল, কলেজেও বন্ধু বান্ধবীদের মনেও অনেকখানি জায়গা দখল করে থাকতো সব সময়।
ছোটবেলা থেকে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে তেমন কোন পরিকল্পনা ছিলো না আঁখির। তবে ভীষন ফ্যাশন সচেতন ছিলেন তখন থেকেই। তাইতো কলেজ জীবনে এসে ফ্যাশান ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় অনেক বেশী। আর সেই আগ্রহ থেকেই শুরু করেন ব্লকের পোষাক তৈরীর ব্যবসা। মাত্র একটি ড্রেস নিয়ে “আঁখি’স কালেকশান” নামের প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে সেই ১৯৯৮ সালে। একটি পোশাকের লভ্যাংশ থেকে দুটো পোশাক, তিনটে পোষাক, এভাবে একটু একটু করে বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ধির পায়ে পথ চলতে থাকেন আঁখি। বর্তমানে শাড়ী, সালোয়ার কামিজ ও হাতের তৈরি দেশীয় জুয়েলারীর বিশাল সমাহার রয়েছে তার ভান্ডারে। তাছাড়া ক্রেতার চাহিদা ও তুষ্টির কথা বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন তার হাতে তৈরী পণ্য। এছাড়াও আঁখি’স কালেকশানের পন্য এখন দেশের গন্ডী পেরিয়ে বিশ্বের ৩০ টিরও অধিক দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আঁখি’স কালেকশান এর সত্বাধীকারি সালমা রহমান আঁখির সাথে একান্ত আলাপ চারিতায় তিনি জানান, ব্যবসা যখন শুরু করি তখন অনেক কষ্ট হয়েছে তবুও কাজ করে গেছি নিজের মতকরে। তবে আপনাদের দোয়ায় যখন যে কাজে হাত দিয়েছি সবখানেই সাফল্য অর্জন করেছি। হয়তো একটু কষ্ট হয়েছে। দেখা গেছে শাড়ী বা জামার ডিজাইন করেছি তার পরই ডিজাইন চুরি হয়ে অন্যত্র ওই ডিজাইনের পোষাক বেরিয়েছে, সেটা দেখে অনেক সময় হতাশ হয়েছি কিন্তু থেমে যাইনি। আমার সমস্ত কাজ আমি নিজে হাতেই করে থাকি এবং জীবনে যখন কোন খারাপ সময় এসেছে আমি নিজেই নিজেকে মোটিভেট করেছি।
নিজের ব্যবসার পাশাপশি বর্তমানে বাংলাদেশ হস্তশিল্প এ্যাসোসিয়েশন, উমেন অ্যান্ড ই কমার্স ফোরাম, ইয়ুথ ক্যারিয়ার ইন্সটিটিউশন, উমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অফ এ্যাসোসিয়েশন সহ আরও বেশ কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন মেধাবী এই উদ্যোক্তা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বর্তমান সময়ের আলোচিত এই উদ্যোক্তা বলেন, ব্যবসায় সফল হতে হলে অবশ্যই সততা, আদর্শ আর নীতিবোধ থাকতে হবে। যেসব পণ্যটি নিয়ে কাজ করছেন সেই পণ্যটি আকর্ষণীয়ভাবে ক্রেতাদের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। আর অনলাইনে ব্যবসা ক্ষেত্রে অবশ্যই ছবির সাথে পণ্যের মিল থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ক্রেতার নিকট পণ্য ও প্রতিষ্ঠানকে পরিচিত করতে অবশ্যই অনেক প্রচারনার কোন বিকল্প নেই। তাই প্রচারণা বাড়াতে হবে যে কোনভাবেই । অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করতে চাইলে বার বার পোষ্ট করতে হবে, বুষ্টিং করতে হবে। পেজ প্রমোট করতে হবে। জনসংযোগ বাড়াতে হবে । কারন যে কোন ব্যবসার প্রাণ হচ্ছে তার ক্রেতা। সুতরাং ব্যবসায় জনসংযোগ করা অনেক বেশি জরুরী। আপনার পণ্য, আপনার ব্যবসা সম্পর্কে যত মানুষ জানবে ততই আপনার বিক্রি বাড়বে। আর বিক্রি বাড়া মানেই আপনার ব্যবসায় সফলতাও আসবে সহজেই।
ব্যাক্তি জীবনে আঁখি স্বামী ও এক ছেলে নিয়ে প্রশান্তির সংসার সামলানোর পাশাপাশি খিলগাঁওয়ে আঁখি’স কালেকশান এর শোরুমটি সামলাচ্ছেন তার নিপুন হাতে । এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন নিয়মিত। আগমীতে আরও দু একটা শোরুম বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে সামনের পথ পাড়ি দিতে চান এই সাহসী নারী উদ্যোক্তা।
আমরাও চাই এবং দোয়া করি এগিয়ে যাক আঁখি’স কালেকশান, এগিয়ে যাক আঁখি। মশৃন হোক সামনে এগোনের পথ, সহজ হোক তার পথ চলা। পৌঁছে যাক সফলতার উচ্চ শিখরে।