কে বসছেন মার্কিন ক্ষমতা- হাতি না গাধা ?

0 ১১৯

সংবাদ24.কম অনলাই ডেস্ক:

আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৫ বছরের ইতিহাসে ৫৯টি নির্বাচনে ৪৬ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে ১৯ জন প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হন।

এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৮ কোটি ৬৫ লাখ ভোটার। ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন সাত কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার। আজ মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হলেও ওইদিনই চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে না।

রিপাবলিকান পার্টি প্রতীক হাতি আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতীক গাধার লড়াইয়ে কে বসছেন মার্কিন মসনদে তা জানতে আমাদেরকে আরও অপেক্ষা করতে হবে কয়েকটা দিন। কারণ বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রগুলো রাজ্য ও কাউন্টির উপর নির্ভর করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণ নিয়ম হল যে আপনি যত পশ্চিমে যাবেন, অঞ্চলের পার্থক্যের কারণে দেরিতে ভোট বন্ধ হবে। সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনও হতে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়, কিন্তু আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনও ভোট দিতে থাকেন। ভোট শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে গণনা শুরু হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী কে, তা জানতে হয়তো কয়েকদিন অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। ২০২০ সালে ৩ নবেম্বর ভোটগ্রহণের চার দিন পরে জো বাইডেনকে বিজয়ী বলা সম্ভব হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী সাত রাজ্য-অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের ফলাফলের জন্য পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। আর কমলা হ্যারিস বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। লড়ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। কৃষ্ণাজ্ঞ নারী হিসেবে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন কমলা। আর ট্রাম্প এবার নিয়ে তৃতীয়বার ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে ৫৩৮টি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, জনগণের ভোট বেশি পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে কোনও প্রার্থীকে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এর দু’টি উদাহরণ ২০০০ ও ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ ভাবেই হেরে যান দুই ডেমোক্রেটিক পার্টি, যথাক্রমে অ্যাল গোর এবং হিলারি ক্লিন্টন। কোথাও এগিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস, আবার কোথাও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ঘাঁটিতে এগিয়ে কমলা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবার মুখে এখন প্রশ্ন, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র? নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যেই নতুন এক জনমত জরিপের ফল উজ্জীবিত করেছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সমর্থকদের।  ডেজ মইনেস রেজিস্ট্রার ও মিডিয়াকমের পরিচালিত ওই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয় গত শনিবার। এতে দেখা যায়, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আইওয়া অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। রাজ্যটিতে ছয়টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, গত ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপে অংশ নেন ৮০৮ জন ভোটার। প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, এতে অংশগ্রহণকারীদের ৪৭ শতাংশ কমলা হ্যারিস ও ৪৪ শতাংশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

 

এর আগে গত সেপ্টেম্বরের জরিপে অঞ্চলটিতে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এই অঙ্গরাজ্যে জয়ী হন তিনি। ওই দুই ভোটে যথাক্রমে ৯ ও ৮ পয়েন্টের ব্যবধানে বিজয়ী হন ট্রাম্প। তবে সর্বশেষ জরিপে সাবেক প্রেসিডেন্টকে পেছনে ফেলে কমলার এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে নারী ভোটারদের বড় ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে বয়স্ক ও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীর প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। চলতি মাসের প্রথম দুই দিন রাজ্যটিতে পৃথক জরিপ পরিচালনা করে এমারসন কলেজ পোলিং ও রিয়েল ক্লিয়ার ডিফেন্স। তাদের জরিপের ফলে বলা হয়, কমলার চেয়ে ১০ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে পুরুষ ও নিরপেক্ষ ভোটারদের মধ্যে তার ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

‘গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে সব করব’, নির্বাচনের আগে সুর নরম কমলার: আজ মঙ্গলবার ৫ নবেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট। মার্কিনদের মন পেতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কমলা ও ট্রাম্প। ভোটের মুখে এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার মুখেও শোনা গেল গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি। স্থানীয় সময় রবিবার মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সমর্থকদের উদ্দেশে কমলা বলেন, ‘এটা (গাজা যুদ্ধ) ধ্বংসাত্মক। আমি যদি প্রেসিডেন্ট হই তবে গাজা যুদ্ধ বন্ধে আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে সব কিছু করব।’ যুযদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইসরাইলের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে কমলা বলেন, ‘বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে, গাজার দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে, ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং ফিলিস্তিনী জনগণ যেন তাদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার উপলব্ধি করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই কাজ করব। এর আগে ইসরাইলকে সমর্থন করার জন্য আগে বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কমলা হ্যারিসকে। ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের জন্য মিশিগানে আরব আমেরিকান ভোটারদের কমলার ওপর ক্ষোভ ছিল। তবে এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী সুর নরম করে বলেছেন, ‘গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের মাত্রা এবং লেবাননে বেসামরিক হতাহত ও বাস্তুচ্যুতির কারণে এই বছরটি খুব কঠিন ছিল। এখন শান্তির পথে হাঁটা উচিত সকলের।’ যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন

ভোটারদের কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ট্রাম্প-কমলা?: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের আগে শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মন জিততে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই দুই নেতা, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। দেখে নেয়া যাক এবারের নির্বাচনে ভোটারদের জন্য ট্রাম্প-কমলার মূল প্রতিশ্রুতিগুলো কী কী-মূল্যস্ফীতি দমন ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি। আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে হ্যারিস তার দীর্ঘকালীন প্রসিকিউটরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যেখানে ট্রাম্প এরই মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গর্ভপাতের অধিকারকে কেন্দ্র করে কমলা হ্যারিস নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন। সারা দেশে এই অধিকারকে সুরক্ষিত করার আইন প্রণয়নের পক্ষে জোর দিচ্ছেন তিনি।

 

সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম, আন্তর্জাতিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.