গণতন্ত্র সূচকে আরও এগোলো বাংলাদেশ

0 ৩৪৭

মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের অভিঘাতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের পরিসর সংকীর্ণ হলেও গণতন্ত্র সূচকে অগ্রগতি ধরে রাখলো বাংলাদেশ। আগের বছরের চেয়ে ৪ ধাপ এগিয়ে এবার (২০২০ সাল) বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৭৬তম। গেল বছর (২০১৯ সাল) ৮ ধাপ এগিয়ে ৮০তম ও তার আগের বছর (২০১৮ সাল) ২ ধাপ এগিয়ে ৮৮তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) এ সূচক প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)।

সূচকে গত টানা তিন বছর অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশের অবস্থান এখনও ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ বিভাগেই রয়েছে।

৫টি মানদণ্ডে একটি দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ এ সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে ইআইইউ গণতন্ত্র সূচকে ১৬৫টি দেশ ও ২টি অঞ্চলের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

আগের বছর (২০১৯ সাল) এ সূচকে ৮০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৮৮ এবং এর আগের বছর (২০১৮ সাল) ৮৮তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।

ইআইইউ ২০০৬ সালে যখন প্রথম এই গণতন্ত্র সূচক প্রকাশ করে, সে বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। এরপর সেনা নিয়ন্ত্রিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালে তা এক ধাক্কায় ৫ দশমিক ৫২ পয়েন্টে নেমে যায়। এরপর গত এক যুগের মধ্যে এ বছরই গণতন্ত্র সূচকে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের সূচকে বাংলাদেশের বড় অবনতি হয়েছিল। সে বছর ৮ ধাপ পিছিয়ে ৯২তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এই সূচকে বাংলাদেশ ছিল ৮৪তম অবস্থানে।

২০২০ সালে এই সূচকে পুরো বিশ্বের গড় স্কোর আগের বছরের ৫ দশমিক ৪৪ থেকে কমে ৫ দশমিক ৩৭ হয়েছে। ইআইইউ বলছে, ২০০৬ সালের পর এটাই সবচেয়ে খারাপ স্কোর। মহামারিতে দেশে দেশে কঠোর লকডাউন আরোপের বিষয়টি গণতন্ত্র সূচকের এই অবনতির কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

২০২০ সালে এই সূচক বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক (৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ) এখন গণতন্ত্র অথবা আংশিক গণতন্ত্র ভোগ করছে। এরমধ্যে পূর্ণ গণতন্ত্র উপভোগ করছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।

প্রতিবেদনে ইআইইউ দেখাচ্ছে, সূচকে অবনতির এই বাজে বছরেও বাংলাদেশ, ভুটান, পাকিস্তানসহ এশিয়ার কিছু দেশ স্কোরে উন্নতি করেছে। তারপরও বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে রয়ে গেছে। যার একটি বড় অংশ চীনের বাসিন্দা।

যে ৫টি মানদণ্ডে এ সূচক প্রকাশ করা হয়, সেগুলো হলো- কোনও একটি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারের সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার।

সব সূচক মিলিয়ে কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে সেই দেশে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে স্কোর হলে সেখানে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’, ৪ থেকে ৬ এর মধ্যে স্কোর হলে সেখানে ‘মিশ্র শাসন’ এবং ৪ এর নিচে স্কোর হলে সে দেশে ‘স্বৈরশাসন’ চলছে বলে ধরা হয়।

ইআইইউ বলছে, ২০২০ সালে তাদের বিবেচনায় বিশ্বের মাত্র ২৩ দেশে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল, যা আগের বছরের চেয়ে একটি বেশি। আর ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ থাকা দেশের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে দুটি কমে ৫২টিতে নেমেছে। ‘মিশ্র শাসনে’ থাকা দেশের সংখ্যাও ৩৭টি থেকে ৩৫টিতে নেমেছে। এছাড়া ৫৭টি দেশ আছে ‘স্বৈরশাসনের’ অধীনে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩টি বেড়েছে।

সূচক বলছে, গণতন্ত্র সূচকে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত। ৬ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে ভারত আছে ৫৩তম অবস্থানে।

এ বছর সূচকে ৬ দশমিক ১৪ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৬৮তম, ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৭৬তম, ৫ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ভুটান ৮৪তম, ৫ দশমিক ২২ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯২তম, ৪ দশমিক ৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১০৫তম, ৩ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১৩৫তম এবং ২ দশমিক ৮৫ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।

গণতন্ত্র সূচকে ২০২০ সালে ৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে সবার শীর্ষে আছে নরওয়ে। শীষ ১০টি দেশের মধ্যে আরও রয়েছে, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ড।

ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য ও জার্মানি ‘পূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায় থাকলে যুক্তরাষ্ট্র গতবারের মতোই আছে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায়। তালিকায় সবার নিচে আছে উত্তর কোরিয়া।

Leave A Reply

Your email address will not be published.