গোদাগাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কোন কারন ছাড়াই খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল খুশিমত বৃদ্ধি করেছেন পেঁয়াজের দাম। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগনকে সরকারের বিপক্ষে দাঁড় করানোর জন্য সিন্ডকেট তৈরী করে প্রকাশ্যে ইচ্ছামত দোকানদারগণ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছেন। বিষয়টি গোদাগাড়ী টক অফ দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে। ক্রেতা সাধারন বলছেন, ভোক্তা অধিকারের লোকজন কোথায়? তারা কেন অভিযান পরিচালনা করছেন না। সাপ্তহিক ছুটির দিনের সুযোগে মহিশালবাড়ী, রেলওয়ে বাজার, হাটপাড়া, গোদাগাড়ী, বিদিরপুর, রাজাবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ীগণ এ অবৈধ কারবারটি করে এক দিনে লাখ লাখ টাকা ক্রেতা সাধারনের নিকট হতে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা প্রয়োজন।
তা না হলে এরা নিজেদের ইচ্ছামত পুন্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে থাকবেন বলে সচেতন মহল মনে করেন। শুক্রবার সকালে মহিশালবাড়ী বাজার, রেলওয়ে বাজার, রেলগেট, গোদাগাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় পেঁয়াজর বিক্রি হয়েছে ৯০/৯৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু সেই পেঁয়াজ বিকালে বিক্রি হয়েছে ১২০/১৪০ কেজি দরে। এ দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারী ব্যবসায়ীদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৮০/৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও কেন কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট লাগাহীন মূল্যবৃদ্ধি করলো, এদের বিরুদ্ধে তদন্তকরে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে । শুক্রবার সন্ধ্যার পর মহিশালবাড়ী বাজারে এ প্রতিবেদক পেঁয়াজের দাম সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে জানার চেষ্টা করেন।
এসময় কয়েকজন দোকান মালিক বলেন, পেঁয়াজ নেই, শেষ হয়ে গেছে, কোন কোন দোকান মালিক পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলেছেন। সামান্য কিছু পেঁয়াজ বস্তায় রেখে বিক্রি ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এ প্রতিবেদক মহিশালবাড়ী বাজরের সোয়েব এর দোকানে সকালে যে পেঁয়াজ ৯০/৯৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন সেই একই বস্তার পেঁয়াজ বিকাল থেকে বিক্রি করছেন ১২০/১৩০ টাকা কেজি দরে। এসময় ১২০ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ কেজি পেঁয়াজ কিনে ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাদিকুল ইসলাম। দোকান মালিক সোয়েবের নিকট থেকে এ প্রতিবেদক ১২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। সকালে এককই পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বিকালে একই বস্তার পেঁয়াজ কেন ১২০/১২৫ টাকা কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রেলবাজের পাইকারী ব্যবসায়ী রবিউল ও রুহুল দাম বৃদ্ধি করেছেন তাই আমি বৃদ্ধি করেছি। তোমার তো এটা আগের কেনা কেন বেশী দাম রাখছো।
এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে দাম এটাই লাগবে বলে জানান। রেলবাজারের বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজ ১৪০/ ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন বলেও সে জনায়। এসব দোকান গুলিতে সরকারের নির্ধারিত দ্রব্যের মূল্য তালিকা ঝুলানো রাখার কথা থাকলেও সেই নেই, বিক্রিত মালের ক্যাশ মেমো দেয়া হয় না। মূল্য সংযোজক কর কি সেটা তারা বুঝে না, দেনও না। মাছের বাজারে দেখা যায়, গরিবের মাছ পাঙাস (বড় সাইজের) বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। ছোট আকারের পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তাছাড়া ইলিশ মাছ কেজিপ্রতি ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা, ছোটগুলি ৫৫০/ ৬০০ রুই মাছ ৪৫০ টাকা, কই মাছ ৯৫০ টাকা, ট্যাংরা মাছ ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৬৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৬০ টাকা, চিংড়ি মাছ জাত ভেদে ১০০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংশ আগের মতোই ৭৫০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকায়, সোনালী মুরগি ৩১০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কথা হয় বাজারে আসা ক্রেতা মোয়েজ এর সাথে সাথে। তিনি বলেন, আগে বাজারে একটা বাজেট নিয়ে আসলে যতটুকু কিনতে পারতাম, এখন তার অর্ধেক কিনতে পারি। পণ্যের দাম বোধহয় আর কখনো কমবে না। এভাবে চললে সামনে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। আরেক ক্রেতা ইব্রাহীম বলেন, সব কিছুর দাম তো শুধু বেড়েই চলে।
আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কথা কেউ ভাবে না। এই যে দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের আয় রোজগার তো বাড়ছে না। বেতনের বেশিরভাগ টাকা যদি এখানেই যায়, তাহলে চলব কী করে? গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আতিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পেঁয়াজের বাজার অস্তির করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন ভাবে ছাড় দেয়া হবে না।