চতুর্থ দিনে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত, মানবেতর জীবনে গাজাবাসী
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সংঘাত এখন অনেকটাই গড়িয়ে যুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার তা চতুর্থ দিনে পৌঁছেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলটি। বাদ যায়নি শরণার্থী শিবিরও। সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের অবরোধে খাদ্য, পানি ও জরুরি ওষুধ ঢুকতে দিচ্ছে না তারা। বিদ্যুৎ পরিষেবা থেকেও বিচ্ছিন্ন গাজার বাসিন্দারা। নেই মোবাইল নেটওয়ার্কও। বসতবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে তারা।
গাজার বাসিন্দাতের অনেকে তাদের স্বজনদের খোঁজ পাচ্ছে না। এক প্রতিবেদনে আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) গণমাধ্যম আল-জাজিরা জাতিসংঘের বরাতে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ এরও বেশি বাসিন্দা।
গাজার বাসিন্দা ইমান বাশের। তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এখনও নিখোঁজ। আল-জাজিরাকে এই নারী বলেন, ‘আমাদের কাছে সুপেয় পানি নেই। আমার বাবা-মা আমার ফোনের জবাব দিচ্ছে না। আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন কি অবস্থায় রয়েছে তা আমি জানি না। গত রাত থেকেই আমি তাদেরই খুঁজেছি।’
ইমান বাশের আরও বলেন, ‘বর্তমানে তিন সন্তানের সঙ্গে রয়েছি আমি। আমার স্বামী আমাদের সঙ্গে নেই।’
বোমা ও গোলাগুলির শব্দ যেন কানে না আসে সেজন্য উচ্চ শব্দে গান বাজাচ্ছেন এই নারী। তিনি বলেন, ‘গানের শব্দ বেশি দিয়ে আমি ও আমার সন্তানেরা নাচতে থাকি। মূল উদ্দেশ—বোম ও গুলির শব্দ যেন কানে না আসে। তবে, এই পন্থা এখন আর কাজে দিচ্ছে না। আমি সন্তানদের বলছি শব্দগুলো আতশবাজির।’
ইসরায়েলের গাজার অবরুদ্ধের ঘোষণায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। এমনটি করে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করছে বলে দাবি তার। আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অবরোধ যা বেসামরিক নাগরিকদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত করে তাদের জীবন বিপন্ন করে তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে নিষিদ্ধ।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের পদক্ষেপ গাজার মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতিকে গুরুতরভাবে জটিল করে তুলছে। আহতরা সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অনবরত হামলা লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবার অবকাঠামোগুলোও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত ১৩টি স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র শিফা হাসপাতালে থাকা আল-জাজিরার সাংবাদিক ইয়ুমনা আলসায়েদ বলেন, ‘চিকিৎসা কেন্দ্রের অবস্থা ভয়াবহ। সমস্ত হাসপাতালের পরিস্থিতি সত্যিই বর্ণনাতীত। হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই। মর্গ সম্পূর্ণভাবে ভরে গেছে। বোমা হামলার তীব্রতার কারণে জানাজাও করা যাচ্ছে না।’
এদিকে, হামাসের পর ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ। লেবানন সীমান্ত থেকে তারা হামলা চালাচ্ছে। পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীও।
আল-জাজিরার তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৭০০ জন নিহত ও চার হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। আহত হয়েছে অন্তত ৯০ জন। অন্যদিকে, ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ৯০০ এর বেশি। আহত হয়েছে অন্তত দুই হাজার ৬০০।