চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ককটেল নিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং। গত কয়েক দিন ধরে জেলা শহরের নিমতলা মোড়, কলোনীপাড়া মোড়, ফকিরপাড়া, আরামবাগ এলকায় তান্ডব চালাচ্ছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। রোববার রাতে শহরের নিমতলা মোড় এলাকায় হঠাৎই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন কিশোর ৮টি ককটেল রাস্তায় নিক্ষেপ করে। এ সময় চারটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। অবিস্ফোরিত চারটি ককটলে উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের ম্যাথরপাড়ার দিক থেকে ১০-১২ জন কিশোর ককটেলগুলো নিক্ষেপ করে। ককটেল নিক্ষেপের পর শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বলছে, দুইপাড়ার মধ্যে বিরোধের জেরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা সবাই কিশোর বয়সী।
এর আগে গত ২৪ মার্চ রাতে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাইনাপাড়া নামক জায়গায় রাস্তাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধে ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকজন আহত হয় বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে ৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামাল উদ্দিন নাসের নামে এক ঠিকাদারের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ নয়ন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই ছাত্রলীগ নেতা দলবল নিয়ে ঠিকাদারের ব্যবস্থাপককে মারধর, ককটেল বিস্ফোরণ ও সাড়ে চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। এমন অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গত ১ ফেব্রয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের উপনির্বাচনে অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে র্যাব। উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন র্যাবকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় ১০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছে র্যাব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাজনৈতিক আধিপত্য, এলাকার আধিপত্য, পারিবারিক রেষ, ব্যক্তিগত দ্বন্দে ব্যবহার হচ্ছে ককটেল। লাল-কালো স্কচটেপ দিয়ে মোড়নো ‘ককটেল’ ব্যবহার হচ্ছে সব বিরোধে। তিন দশক ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই ককটেলের কারবার চলছে। ভারত থেকে চোরাইপথে আসা বিস্ফোরক, সঙ্গে পাথরের টুকরা, লোহা, পেরেক ও কাচের টুকরো মিশিয়ে বানানো হয় ককটেল। জর্দার কৌটায় ভরে স্কচটেপ জড়িয়ে হাসতে-খেলতে ককটেল বানাতে পারে কারিগররা। সম্প্রতি শহরের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাও ককটেল ব্যবহার শুরু করেছে। তারাও বানাচ্ছে ককটেল। ককটেল হাতে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছেন, গত তিন বছরে ককটেল বিস্ফোরণে সাতজন মারা গেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক। ভারত থেকে আসা বিস্ফোরকের রসদ দিয়ে এখন ঘরে ঘরে তৈরি করা হচ্ছে ককটেল। পুলিশের একটি সূত্র বলছেন, সন্ত্রাসীরা ককটেলকে চাঁদাবাজির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাজা ককটেল ব্যবসায়ীর টেবিলে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। ওই ব্যবসায়ীরা পুলিশকে বিষয়টি জানালেও থানায় কোন অভিযোগ করেননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে জেলায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬০টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৩০ জন। বিজিবি ও পুলিশ মিলে ককটেল উদ্ধার করেছে ৩২৫টি। এর সঙ্গে সাত কেজির বেশি ককটেল ও বোমা তৈরির উপকরণও আটক করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের পদ্মার চর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বস্তায় করে দেশে ঢোকে ভারতীয় গান পাউডার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটলের ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করতে এই এলাকার মানুষ ককটেলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এ জেলার অনেক মানুষ ককটেল বানাতে পারে। রোববার রাতে যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা সবাই কিশোর বয়সী। সামনে নির্বাচন এটি পুলিশেরও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ককটেলবাজ ও কারিগরদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।