ছাত্রলীগ নেতাসহ ৬ জনের নামে রাবি ছাত্রদল নেতার মামলা

0 ১১৮
রাবি প্রতিনিধি: মারধর, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও রাবি ছাত্রলীগের গত সম্মেলনে পদপ্রত্যাশী সাকিবুল হাসান বাকীসহ ছয়জনের নামে মামলা করেছেন রাবি ছাত্রদলের এক নেতা।
 সোমবার (৪ নভেম্বর) নগরীর মতিহার থানায় এই মামলা করেছেন তিনি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  তিনি বলেন, ছয়জনকে বিবাদি করে ছাত্রদলের একজন একটা মামলা করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মামলার বাদী শেখ নুর উদ্দীন আবির রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁর বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার চর কাচিকাটা গ্রামে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে ক্রমানুসারে মামলার বিবাদীরা হলেন- লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল নুর জাকারিয়া ওরফে ফাহাদ মৃধা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হামিদ হৃদয়, দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী টোকন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান বাকী, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোফাজ্জল হক নাসিম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ২৫ মে দুপুর ১২টার দিকে ফাহাদ মৃধা পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে জরুরি আলোচনার জন্য বাদীকে মুঠোফোনে কল দিয়ে রাবির রবীন্দ্র ভবনের যেতে বলেন। এরপর ফাহাদ মৃধা নিজেই তাঁকে মোটরসাইকেল যোগে নিয়ে আসতে যান। দুপুর পৌনে একটার দিকে রবীন্দ্র ভবনের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছে মোটরসাইকেল থেকে নামার সাথে সাথে হাবিবুর রহমান “ছাত্রদলের সদস্য হয়ে তুই ক্যাম্পাসে কি করিস” বলেই বাদীর শার্টের কলার ধরে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। এতে তাঁর ঠোঁট কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
এসময় মোফাজ্জল হক নাসিম পাশ থেকে একটি বস্তা নিয়ে আসে এবং বস্তার ভিতর থেকে হকিস্টিক, বাঁশ ও লোহার রড, হাসুয়া, এবং চাকু বের করে দেয়। তখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও রাবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী বাকী বাঁশ দিয়ে তাঁর পায়ের গোঁড়ালিতে আঘাত করে। হামিদ হৃদয় লোহার রড ও টোকন হকিস্টিক দিয়ে বাদীকে এলোপাথাড়িভাবে পেটানো শুরু করে। যার ফলে তাঁর ডান পায়ের উরুর উপরের অংশে রক্ত জমাট বেধে যায় এবং তিনি আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় মোফাজ্জল হক নাসিমকে বস্তা থেকে ধারালো অস্ত্র বের করতে দেখে বাদী আবির প্রাণভয়ে জীবন বাঁচাতে উঠে দৌড় দেই।
তখন বিবাদীরা তাকে পিছন থেকে ধাওয়া করে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের সামনে পৌঁছালে লোক প্রশাসন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রিক্সায় উঠিয়ে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়। বাদীকে রিক্সায় তুলে দেওয়ার পরপরই বিবাদীগণ ১নং সাক্ষী লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাফি খানের পথরোধ করে চারিদিকে ঘিরে ধরে এলোপাথারিভাবে মারপিট করে জখম করে।
রাফি খানকে সেখান থেকে ছাড়া পেতে হলে এক লক্ষ টাকা চাঁদা প্রদান করতে হবে মর্মে জানায় বিবাদীরা। রাফি চাঁদা প্রদানে অস্বীকার করলে ১নং বিবাদী তার কাছে থাকা নগদ সাত হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এছাড়াও পরবর্তীতে হলে থাকার জন্য এবং পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে রাফির থেকে বেশ কয়েকবারে সর্বমোট চুয়াল্লিশ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণ করে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল হতে সাক্ষীদের সহায়তায় রামেক হাসপাতালের ৪নং ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন বাদী শেখ নূর উদ্দীন আবির। এরপর ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বাদীর চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ফাহাদ মৃধা তাকে পরীক্ষার হলে ঢুকতে বাঁধা দেয় এবং আবারও মারধরের হুমকি দেয়। এরপর তিনি প্রাণনাশের ভয়ে মাস্টার্সে ভর্তি না হয়েই রাজশাহী ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৮ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে রাবি শাখা ছাত্রলীগের ৯৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ন-আহ্বায়ক মোহাম্মাদ আহসান হাবিব।

Leave A Reply

Your email address will not be published.