নওগাঁয় এবছর ৩২ কোটি টাকার শিম বেচাকেনা হবে

0 ৯৮
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের শিমের হাট নামে পরিচিত চকআতিতা। এ হাটে প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে শিম বেচাকেনা। স্থানীয় চাষীদের সুবিধার জন্য তাদের উৎপাদিত শিম গত তিন বছর থেকে এ হাটে বিক্রির জন্য বসানো হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ব্যবসায়িদের হাত ধরে শিম চলে যায় ঢাকা, ফেনী ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলায়। ৩ ঘণ্টার হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় দুই লক্ষাধিক টাকার শিম।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালিন বিভিন্ন জাতের শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৭৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৮ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন শিম উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩১ কোটি টাকা।

সদর উপজেলার বর্ষাইল ও কীত্তিপুর ইউনিয়নে শিম চাষের জন্য অন্যতম। বর্ষাইল ইউনিয়নে চকআতিতা গ্রামের এ বাজারটি পুরোনো। তবে গত তিন বছর আগে চাষীদের সুবিধার জন্য শিমের হাট লাগানো হয়। শিমের মৌসুমে (প্রায় ৩ মাস) প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। এ হাটটি এখন শিমের হাট নামে পরিচিত পেয়েছে। প্রকারভেদে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এ হাটে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মণ শিম সরবরাহ হচ্ছে। শুরুতে হাটে শিমের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে দিন যত যাবে শিমের সরবরাহ তত বাড়বে।

অনন্তপুর গ্রামের শিম চাষী সোহান হোসেন বলেন- এ বছর মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় গাছে ফুল আসলেও শিম আসতে দেরি হয়েছে। তবে দিনের পরিমান কম হওয়ায় এবং হালকা শীতের আমেজ পড়ায় গাছে ভাল শিম আসতে শুরু করেছে। ৫ মাসের শিমের আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হবে প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। যা থেকে বিক্রি হবে প্রায় লক্ষাধিক টাকা।

শুকুর চাঁদপুর গ্রামের চাষী বাছের আলী বলেন- শিমে পোকর উপদ্রæব হয়েছে। ২-৩ দিন পর পর প্রচুর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। বিঘাপ্রতি ১২-১৪ হাজার টাকা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। লাভের একটি অংশ চলে যায় কীটনাশক প্রয়োগে। হাটে ৩০ কেজি শিম বিক্রি করলাম ২৫ টাকা কেজি। মৌসুমের শুরুতে এই শিম বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। তবে এ বছর দেরিতে শিম আসায় লাভ একটু কম হবে।

একই গ্রামের চাষী হানিফ মন্ডল বলেন- ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণে অনেক সময় আমরা দাম ঠিকমতো পাইনা। হাটে কম পরিমাণ শিম আসলে দাম ভাল পাওয়া যায়। আর শিমের পরিমাণ বেশি হলে দাম কম হয়। ব্যবসায়িরা যে দামে বলে সে দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফেরত নিয়ে গেলে তো নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া ৪০ কেজির পরিবর্তে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হয়।

শিম ব্যবসায়ি আব্দুস সালাম বলেন- এ এলাকায় প্রচুর শিমের আবাদ হয়। কৃষকদের সুবিধার জন্য গত তিন বছর আগে চকআতিতা বাজারে শিম মৌসুমে তিনমাস প্রচুর শিম বেচাকেনা হয়। এ হাটটি শিমের হাটের জন্য অন্যতম। এ হাট থেকে শিম কিনে ঢাকা, ফেনী ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। শিম সরবরাহের পর শুকিয়ে গিয়ে ওজনে কমে যায় বলে চাষীদের কাছ থেকে ৪২ কেজি কিনতে হয়। প্রতিদিন এ হাটে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার শিম বেচাকেনা হচ্ছে।  আগামীতে শিমের সরবরাহ আরো বাড়বে।

নওগাঁ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি ও তাপমাত্রার কারণে শিমের কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। শিমের উৎপাদন ভাল হওয়ার পাশাপাশি চাষীরা ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.