নতুন কমিটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখবে : মির্জা ফখরুল

0 ৩৭১
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার বাসায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দুইটি কমিটি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দুইটার প্রতি সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তারা সবাই পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দ।

‘আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট সেই প্রেক্ষাপটে এটা (নতুন কমিটি গঠন) নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে যে, এই কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে অগণতান্ত্রিক সরকার আমাদের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট করে দিচ্ছে। সেখানে নতুন এ কমিটি ভূমিকা রাখবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সবার যে প্রত্যাশা সেই প্রত্যাশা হচ্ছে যে, অত্যন্ত সক্রিয়, সচল এবং কার্যকরী এই আহ্বায়ক কমিটি, তারা অতি দ্রুত দলকে সুসংগঠিত করবে এবং একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কার্যকরী কমিটি গঠন করবে।

কবে নাগাদ মহানগরের কাউন্সিল হতে পারে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তো আমাদের যে গঠনতন্ত্র আছে সেই গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিল করবে। সেটা তিন মাস।

বর্তমান কমিটি নিয়ে ক্ষোভ আছে যে অনেককে মূল্যায়ন করা হয়নি—এ রকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শুনেন, বিএনপি একটা বিশাল রাজনৈতিক দল। সেই দলের যখন একটি কমিটি তৈরি করা হয়, তখন ছোট-খাটো সমস্যা থাকতেই পারে। আমরা যেটা দেখছি যে, একবারে পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দকে দিয়েই এই কমিটি করা হয়েছে। প্রবীণ এবং নবীনের সমন্বয়ে করা হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটা কার্যকরী কমিটি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

গতকাল সোমবার আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তরের ৪৭ সদস্য এবং আবদুস সালামের নেতৃত্বে দক্ষিণের ৪৯ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উত্তরের সদস্য সচিব হয়েছেন আমিনুল হক এবং দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু।

মহানগর উত্তরের নতুন আহ্বায়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, আজকে গণতন্ত্র অনুপস্থিত, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। নির্যাতন-নিপীড়ন ও অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সেজন্য সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা, জনগণ যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারে, একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যাতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়, সেই লক্ষ্যকে সফল করার জন্যে আমরা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ একসঙ্গে একযোগে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাজ করব। যদি প্রয়োজন হয় ১৯৯০ সালের মতো আরেক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই নব্য স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক, অবৈধ, মিডনাইটের সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে।

মহানগর দক্ষিণের নতুন আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, আমরা চেষ্টা করব আমরা যাতে এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। সে ব্যাপারে মহাসচিব থেকে শুরু করে মহানগরসহ দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীর সহযোগিতা চাই। আমরা উত্তর-দক্ষিণ মহানগর একসঙ্গে মিলেই সমবেতভাবে মহানগরীতে কাজ করার চেষ্টা করব যাতে কোথাও কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয়, কোনো ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।

আবদুস সালাম আরও বলেন, আমাদের একটাই উদ্দেশ্য যে, আজকের এই সরকার যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা।

নগর বিএনপির নতুন এ নেতা বলেন, মহানগরের অতীতে নেতৃত্বদানকারী মীর শওকত আলী (প্রয়াত), সাদেক হোসেন খোকা (প্রয়াত), মির্জা আব্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, এমএ কাইয়ুম, সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, কাজী আবুল বাশার, আহসান উল্লাহ হাসান (প্রয়াত), আবদুল আলীম নকি প্রমুখের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছেন। আমরা অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থাটাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করব যাতে একটা কাউন্সিল করতে পারি।

নতুন কমিটি গঠনের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা দুই আহ্বায়কই প্রকাশ করেন।

এই সময়ে মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, আবদুল আলীম নকি, তাবিথ আউয়াল, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মো. মোহন, আতিকুল ইসলাম মতিন, মোশাররফ হোসেন খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, মহানগর উত্তর যুবদলের এসএম জাহাঙ্গীর, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালামের নেতৃত্ব নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বিএনপি মহাসচিবের বাসায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মির্জা ফখরুল নবগঠিত কমিটির নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে সংগঠনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.