নেটোকে আজোভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর অনুরোধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোকে আজোভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরেশেঙ্কো ।
কের্চ প্রণালী ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই তার এ অনুরোধ এল।
রবিবার(২৫ নভেম্বর) রুশ বাহিনীর সদস্যরা কৃষ্ণ সাগর ও আজোভ সাগরের মাঝে অবস্থিত ওই প্রণালীতে ইউক্রেইনের তিনটি জাহাজ জব্দ ও ২৪ নাবিককে আটক করে।
এ ঘটনার পরিণতি সম্পর্কে মস্কোকে সতর্ক করে নেটো। পরবর্তীতে পোরেশেঙ্কোর অনুরোধ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেইন নেটোর সদস্য রাষ্ট্র না। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এ সামরিক জোটের সঙ্গে কিয়েভের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পোরেশেঙ্কোর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করে। ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর আজোভ সাগর ঘিরে পশ্চিমাদের সঙ্গেও মস্কোর বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।
পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেইনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্রেমলিন সাহায্য করছে বলেও অভিযোগ আছে কিয়েভের। রুশপন্থি ওই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেইন ভূখণ্ডের একটি বড় অংশকে কিয়েভের শাসন থেকে মুক্ত করতে চায়।
কের্চ প্রণালীর ঘটনার পর ইউক্রেইন তাদের সীমান্ত এলাকাগুলোতে সামরিক আইন জারি করেছে। এর পাল্টায় রাশিয়াও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্রিমিয়াতে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা বসানোর কথা জানিয়েছে।
বুধবার জার্মানির বিল্ড পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পোরেশেঙ্কো জানান, নেটো আজোভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ এনে ‘ইউক্রেইনকে সহায়তা ও নিরাপত্তা’ দেবে বলেই প্রত্যাশা তার।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজোভ সাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতেই ইউক্রেইনের জাহাজগুলো জব্দ করেছেন বলেও মত তার।
“জার্মানি আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি। ইউক্রেইনকে সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে নেটোর দেশগুলো আজোভ সাগরে তাদের যুদ্ধজাহাজগুলোর পুনর্বিন্যাসে প্রস্তুত বলেই আশা করছি আমরা,” বলেন পোরেশেঙ্কো।
রাশিয়ার ‘আগ্রাসী নীতি’ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“প্রথমে ক্রিমিয়া, এরপর পূর্ব ইউক্রেইন। এখন তিনি (পুতিন) আজোভ সাগরও চান। জার্মানির নিজেকেই প্রশ্ন করা উচিত- পুতিন এরপর কি করবেন, যদি আমরা তাকে না থামাই?”
পোরেশেঙ্কোর বক্তব্যের প্রসঙ্গে নেটো তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না বললেও সোমবার সামরিক এ জোটটির প্রধান জেন্স স্টল্টেনবার্গ কের্চ প্রণালীর ঘটনার পর ইউক্রেইনকে ‘রাজনৈতিক ও বাস্তবিক সব ধরনের সহযোগিতা’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনের আগে জনপ্রিয়তা বাড়াতেই পোরেশেঙ্কো এ নৌ ‘উসকানির’ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
“সন্দেহাতীতভাবেই এটি উসকানি। আমার মনে হয়, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আগামী মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরতে চান।”
পশ্চিমা বিশ্বের সরকারগুলো পোরেশেঙ্কোকে পছন্দ করলেও ইউক্রেইনে এ ডানপন্থি রাজনীতিকের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে পৌঁছেছে, জানিয়েছে কিয়েভ পোস্ট।
সাম্প্রতিক জরিপগুলোতেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পোরেশেঙ্কো সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোট পেতে পারেন বলে দেখা যাচ্ছে। বাকি ভোটারদের ৫০ শতাংশ বলছেন, যাই ঘটুক না কেন, পোরেশেঙ্কোকে তারা আর সমর্থন করছেন না।
নিজের অবস্থান শক্ত করতেই ক্রিমিয়া অঞ্চলে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের উত্তেজনা বৃদ্ধির চেষ্টা, বলছেন পুতিন।
২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে চরম উত্তেজনার মুহুর্তেও সীমান্ত এলাকাগুলোতে সামরিক আইন জারি হয়নি, আর এবার ‘সামান্য ঘটনাতেই’ পোরেশেঙ্কোর ওই আইন জারি অন্য কিছুরই ইঙ্গিত দেয়, ভাষ্য রুশ প্রেসিডেন্টের।
ইউক্রেনীয় জাহাজগুলো রাশিয়ার জলসীমায় ‘অবৈধ অনু্প্রবেশ’ করেছিল জানিয়ে কের্চ প্রণালীর ঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াকে ‘যথাযথ’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি।
পশ্চিমা সরকারগুলো অবশ্য এ ঘটনায় ইউক্রেইনের পাশেই দাঁড়িয়েছে।
তিনদিনের তর্ক-বিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছে। রাশিয়ার কর্মকাণ্ড ওই এলাকায় উত্তেজনা বাড়াবে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
ইউক্রেইনের জাহাজ জব্দের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেও ইইউ রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে একমত হতে পারেনি।
পোল্যান্ড নিষেধাজ্ঞা দিতে জোরাল চাপ দিলেও ফ্রান্স ও জার্মানি তাতে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সাম্প্রতিক ইউক্রেইন সংকট নিয়ে অসন্তুষ্ট। কের্চ প্রণালীর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আর্জেন্টিনার জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে আগে থেকে নির্ধারিত পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলও করে দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম/