পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার সদর উপজেলার আতাইকুলার গঙ্গারামপুরে চড়াডাঙ্গা কোরআন সুন্নাহ মিশন মজলিসে সুরা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ জুন শুক্রবার বাদ জুমা নামাজ শেষে কোরআন সুন্নাহ মিশনে এক সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে এই মজলিসে সুরা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা এবং আগামী শুক্রবার (১০ জুন) বাদ জুমা নামাজ শেষে অ্যাডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।
আগামী ২ মাসের মধ্যে অ্যাডহক কমিটি সকলের মতামতের পর প্রতিষ্ঠানটির মজলিসে সুরা কমিটি ঘোষণা করবেন।
আতাইকুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শওকত হোসেন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও বৃক্ষ প্রেমিক আ. কামালের পরিচালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি আলহাজ্ব শহীদুর রহমান শহীদ, দ্বীপচর খাজানগর সিদ্দিকিয়া খানকা শরীফের পরিচালক নূর মুহাম্মদ আজাদ খান চিশতী, সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজসহ কয়েক শতাধিক সালেক-ভক্ত-মূরীদ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় আতাইকুলা ইউপি চেয়ারম্যান ও সালিশি বৈঠকের সভাপতি আলহাজ্ব শওকত হোসেন বিশ্বাস বিগত ১০ বছরে চড়াডাঙ্গা মিশনের সকল আয়-ব্যয় তদন্ত ও নিরীক্ষা করে ৭দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির আহ্বায়ক হলেন আ. আজিজ মাষ্টার, সদস্য প্রফেসর সাইদুল ইসলাম ও ডা. মজনু মিয়া।
চড়াডাঙ্গা কোরআন সুন্নাহ মিশন সংশ্লিষ্টরা এবং সালেক-ভক্ত-মূরীদ ও এলাকাবাসী জানান, শাহ্ সূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলার কনিষ্ট পুত্র পীরজাদা জিল্লুর রহমান বনী ইয়ামিনের বিরুদ্ধে একছত্র নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি, অনিয়ম, আত্মসাত, ঈদ ও জুমার নামাযে ইমামতি করার সময় (খুৎবা, সুরা কেরা’আত ও রাকাতে) ভুল, মিশনের উন্নয়নের পরিবর্তে নিজের নামে সম্পত্তি, চড়াডাঙ্গা কোরআন সুন্নাহ মিশনের উন্নয়ন ও পরিচালনায় ব্যর্থতা, সালেক-ভক্ত ও এলাকাবাসীর সাথে খারাপ ব্যবহার, সুরা কমিটিকে নিজের আজ্ঞাবহে পরিণত, নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে (খাদেম, রাখাল ও খামার পরিচালনা কর্মচারী) নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় এবং সর্বশেষ ২২ মে পীরজাদা জিল্লুর রহমান বনী ইয়ামিনের কর্মচারী চক-রাখাল জাহাঙ্গীর কর্তৃক মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলার পৌত্র পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা মু’তাসিম বিল্লাহ মাসুমের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ২৭ মে চড়াডাঙ্গা মিশন মজলিসে জুমার নামাজের পর জিল্লুর রহমান বনী ইয়ামিনের ও আজ্ঞাবহ সুরা কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
মিশনের প্রতিষ্ঠাতা শাহ্ সূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলা ৪০ বিঘা জমিরি ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘কোরআন সুন্নাহ মিশন’ ওয়াক্ফ করে গেছেন। কয়েকটি ওয়াক্ফ দলিলে সুনির্দিষ্ট করে লেখা রয়েছে চড়াডাঙ্গা মিশন পরিচালনা বা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তির পদবী হবে “মোতাওয়াল্লী”। ২০০৯ সালের ২১ মার্চ শাহ্ সূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলার ওফাতের পরে বড় ছেলে পীরজাদা আবুল বাশারের পদ ছিল সভাপতি এবং ছোট ছেলে পীরজাদা জিল্লুর রহমান বনী ইয়ামিনের পদবি ছিল “তত্ত্বাবধায়ক”।
বড় পীরজাদা আবুল বাশারের ওফাতের পরে ওয়াক্ফের নিয়ম বহির্ভতভাবে ছোট পীরজাদা জিল্লুর রহমান বনী ইয়ামিন নতুন পদ “আমির” সৃষ্টি করে সেই পদে বসেন। যা ফুরফুরা শরীফ ও ওয়াক্ফনামা লঙ্ঘনের সামিল। মিশনের উন্নয়নের পরিবর্তে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জন, তার স্বেচ্ছাচারিতায় ভক্ত ও এলাকাবাসী তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে গণবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এসময় খবর পেয়ে সংঘর্ষ এড়াতে আতাইকুলা থানা ওসি জালাল আহমেদ ঘটনাস্থলে এসে পরের বাদ জুমায় সকলকে নিয়ে একটি সালিশি বৈঠকের আহ্বান করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সালিশি বৈঠকে দ্বীপচর খাজানগর সিদ্দিকিয়া খানকা শরীফের পরিচালক নূর মুহাম্মদ আজাদ খান চিশতী, সদ্য বিলুপ্ত মজলিসে সুরা কমিটির সদস্য আ. আজিজ মাস্টার, স্থানীয় প্রতিনিধি জামাল হোসেন, মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলার দৌহিত্র গোলাম সাকলাইন, সালেক-ভক্ত ও এলাকাবাসী (প্রতি বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে) চড়াডাঙ্গা কোরআন সুন্নাহ মিশনের বিগত বছরগুলোর সকল আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাব দাবি করেন এবং মিশনের উন্নয়ন, কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলার পৌত্র পীরজাদা আলহাজ্ব মাওলানা মু’তাসিম বিল্লাহ মাসুমকে প্রধান করে আগামী মজলিসে সুরা কমিটি গঠনের জোর সুপারিশ করেন।
উল্লেখ্য ফুরফুরা শরীফের পীর জুলফিকার আলী হায়দার আল কুরাইশী (র.) হতে খেলাফত প্রাপ্ত হয়ে মাওলানা আব্দুল হাই পীর ক্বেবলা ১৯৮২ সালে পাবনার সদর উপজেলার আতাইকুলার গঙ্গারামপুরে “চড়াডাঙ্গা কোরআন সুন্নাহ মিশন” প্রতিষ্ঠা করেন। মহান আল্লাহ পাক ও রসুলের বাণী প্রচারের মাধ্যমে সমাজে কল্যাণ, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এই মিশনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
Comments are closed.