পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়ার নান্দিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২২ ধরনের অভিযোগ এনে গত ২০২০ সালে পুঠিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর জমা দেন। কিন্তু প্রায় ২ বছর হয়ে গেলেও তা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসী শিশুদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবীতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। একই দাবীতে এলাকাবাসী ইতিমধ্যে মানববন্ধন করেছেন।
এলাকার ২১৩ জন স্বাক্ষরিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নান্দিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা দীর্ঘদিন যাবৎ পড়াশুনা করে আসছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো উক্ত নান্দিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন তিনি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার পর থেকে উহার ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি যথাসময়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করেন না এবং স্কুলের রেজাল্ট তুলনামূলক ভাল নয়। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কর্কশ ভাষা প্রয়োগ করেন। এছাড়াও অভিযোগগুলো হল- ১। বাচ্চাদের নিয়মিত ক্লাস হয় না, ২। সহকারী শিক্ষকদের সাথে সব সময় খারাপ আচরন করেন, ৩। কমিটির কাহারো সাথে ভাল ব্যবহার করেন না, ৪। বর্তমানে স্কুলের কাজ নিয়ে তার মত বিরোধ, ৫। গ্রিলের দোকানে সে কেজি প্রতি রড ৯২ টাকা মিটায় সেখানে কমিটি প্রতি কেজি রড ৮২টাকা মিটায়, ৬। রাজমিস্ত্রির মুজুরী প্রতি দিন বারো শত টাকা জোড়া সে মিটায় সেখানে কমিটি নয় শত টাকা মিটায়, ৭। রং মিস্ত্রি শুধূ ক্লাস রুম কালার করার আজুরা সে মিটায় বিশ হাজার টাকা সেখানে কমিটি মিটায় ষোল হাজার টাকায় পুরো স্কুল, ৮। সে একক ভাবে তার মনগড়া কাজ করবে কমিটিকে বাদ রেখে, ৯। ম্যাডাম গ্রামের যুবকদের রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেককে প্রস্তাব দেয়।
১০। আনেকের সংসারে অশান্তি ঘটায় এবং চারিত্রিক সমস্যা আছে, ১১। সহকারীরা তার ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে পূর্বের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে, ১২। তার ব্যবহারে গ্রামবাসী এবং অভিভাবক সহকারী শিক্ষক, কমিটির সভাপতি সহ সবাই বিরক্ত, ১৩। ক্লাস টাইমে সব সময় আইনের বই পড়ে ক্লাস নেয় না, ১৪। কমিটির সদস্যর সাথে তুই ভাষা ব্যবহার করে।
১৫। সভাপতি ১৫ বার কল করেও সে ফোন ধরে না, ১৬। সে তার ইচ্ছা মত ফোন বন্ধ রাখে, ১৭। ইংরেজি ক্লাসে ছাত্রদেরকে বই খুলে খাতা লেখতে বলে, ৮। গ্রামের কোন মানুষের সাথে সে ভালো ব্যবহার করেনা, ১৯। ছেলে মেয়েদের অভিভাবক কোন সমস্যা নিয়ে এলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়, ২০। সভাপতির সাথে খারাপ আচরন করে, এমন কি সে নিজে ঝগড়া করে এবং তার বাবাকে দিয়েও ঝগড়া করায়, ২১। তাকে নিয়ে স্কুলের কোন মিটিং করা যায় না, ঝগড়া দিয়ে শুরু ঝগড়া দিযয়ে শেষ, কোন সিদ্ধান্তে পৌছানো যায় না, ২২। সে কমিটির কাউকে মানে না, সে বলে আমি হেড আমার কথা মত কমিটি চলবে।
এলাকাবাসী জানান, আমারা রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর ৪ অক্টোবর ২০১৮ সালে, পরবর্তীতে ৩ অক্টোবর ২০১৯ সালে এবং পুনরায় ২০২০ সালে অভিযোগ জমা দিয়েছি। ইতিপুর্বে তদন্ত হয়েছে কিন্তু কোন ববস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। তাই সেই শিক্ষকের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলী ও তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানায়। তারা আরো বলেন এই প্রধান শিক্ষক থাকলে এই স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কেউ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবো না।
স্কুলে প্রধান শিক্ষককে রাখা হলে যে কোন সময় গ্রামে তাঁকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলেও জানান এলাকাবাসী। তাই দ্রুত বদলী করে নতুন প্রধান শিক্ষক দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করেন।
নান্দিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, আমার বিরুদ্ধে যেগুলো অভিযোগ করেছে সব মিথ্যা। আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।
নান্দিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার নিয়োগী জানান, এ বিষয়ে ২০২০ সালে এলাকাবাসী ২১৩ জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ জমা দেয়। সেখানে আমি সভাপতি হিসেবে এবং সহঃ সভাপতি সোহেল রানা দুই জনে সুপারিশ করি। কিন্তু সেই অভিযোগের এখনো কোন ব্যবস্থা হয়নি। আমারা চাই এলাকাবাসীর দাবীর সত্যতা রয়েছে।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য সেই প্রধান শিক্ষকের অন্যত্র বদলী করা হলে শিক্ষার মান ফিরে আসবে। আর সেই অভিযোগ আমরা সুপারিশ করায় প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে দেখে নিবে বলে হুমকি প্রদান করছে। শুধু তাই নয় আমাকে হেনস্তা করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছি বলে মন্তব্য করছেন।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এডি এম সানোয়ার হোসেন জানান, সেই স্কুলের লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। করোনার কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments are closed.