পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিদ্ধাতহীনতা ও অনিয়মের আখড়াই পরিণত হয়েছে। সরকারী নিয়ম মানার সময় নেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আরএমও এবং মেডিকেল অফিসারদের। তাদের নিজস্ব তৈরি নিয়মে চলছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। যার কারণে রোগীরা তাদের সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এই সিদ্ধাতহীনতা ও অনিয়মের দেখার কেউ নেই। শুধু তাই নয় রোগীদের টিকিট বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে রোগীদের টিকিট ৩ টাকা হলেও পুঠিয়া হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। এই এলাকার জনগণকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২২ জন ডাক্তার কর্মরত আছে। এর মধ্যে ৭ টি সাব-কেন্দ্রে ৭ জন ডাক্তার আর ১৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্ব পালন করেন। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন মেডিসিন, গাইনী, শিশু, অর্থোপেডিক্স এবং এনেসথেশিয়া এই ৫ জন কনসালটেন্ট বসার নিয়ম।
এছাড়া রোগীদের টিকিট সরকারী ভাবে ৩ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও অতিরিক্ত ২ টাকা নেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমা নাহার সরকারী গাড়ী ব্যবহার করে প্রতিদিন রাজশাহী নিজের বাসভবন থেকে আশা যাওয়া করেন। সেই গাড়ীতি নিয়মিত সফর সঙ্গী হন পুঠিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার, সমাজ সেবা অফিসার সহ অনেকে। তিনিও সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অফিস সময়ে যাতয়াত না করে ইচ্ছেমত আশা যাওয়া করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু গতকাল সোমবার হাসপালে গিয়ে জানা গেছে, অর্থো-সার্জারী জুনিয়ার কনসালটেন্ট ডাঃ সাঈদ আহম্মেদ তিনি তার রুমে উপস্থিত নাই। সেখানে বসে আছেন হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মোঃ মুনজুর রহমান। ডাঃ সাঈদ আহম্মেদের পিয়ন ওয়াজেদ আলী জানান স্যার ছুটিতে আছেন।
মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) আব্দুর রাজ্জাক তার রুমে আছেন। শিশু ডাঃ শুভ্র প্রকাশ পাল তিনি সে সময় রাউন্ডে আছেন। ও ডাঃ এমএম আহসান হাবীব (এমও) তিনি ইনডোর ডিউটি করেও মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
গাইনী জুনিয়ার কনসালটেন্ট ডাঃ ফারজানা নাজনীন তিনি তার রুমে উপস্থিত নাই। জানা যায়, সপ্তাহে তিনি ৩ দিন ডিউটি করেন। আর তিনি উপস্থিত না থাকলে তার আউট সোসসিং পিয়ন বিথী রানী এবং মিড ওয়ায়িফ নাসরিন সুলতানা তার রুম খুলে বসে থাকেন। রোগীরা আসলে তাদের সমস্যার কথা শুনে নিজে নিজে ডাক্তার সেজে বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক বা ক্লিনিকে ফোন করে থেকে তাদের লোকের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও সিজারের জন্য প্রেরণ করেন। তাতে তারা কমিশন পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর জরুরী বিভাগে ডিউটিতে আছেন ডাঃ রণক আফরোজ। মেডিকেলের তৈরিকৃত রোষ্টার অনুযায়ী যে ডাক্তার জরুরী ডিউটি করবেন তিনি ২৪ ঘন্টা ডিউটি করবেন বলে জানা গেছে।
রোগীর জানান, আমরা এসে দেখি গাইনী, অর্থো-সার্জারী সহ অনেক ডাক্তার মেডিকেলে উপস্থিত নাই। ডাক্তাররা ইচ্ছে মত অফিস করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহলে এখন আমরা কি করবো, কোথায় যাবে। এছাড়া টিকিটে ২ টাকা করে বেশি নেওয়া হয়। হাসপাতালে জেনারেটর মেশিনটা নষ্ট, আল্ট্রা মেশিন নষ্ট এবং যক্ষা বিভাগে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা ববহার করেন না।
এছাড়া আউট ডোরে প্যারাসিটামল, হিষ্টাসিন, এন্টাসিট ছাড়া কোন ঔষুধ দেওয়া হয়না। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বাহিরে এতে প্রতারিত ও অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে রোগীদের।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা সির্ভিল সার্জন ডাঃ মোঃ কাইয়ুম তালুকদার জানান, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর গাড়ী ব্যাবহার বিষয়ে সরকার তাদেরকে নিদিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে। অতিরিক্ত ব্যবহার করলে নিজের টাকা থেকে খরচ করতে হবে।