বরেন্দ্র অঞ্চলের জনপদকে বাঁচাতে নদীগুলো সুরক্ষার দাবি

0 ১১৮

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: নদী শুধু নদী নয়; জীবন যদি বাঁচাতে হয়; পরিবেশ যদি রক্ষা করতে হয়; উর্বরতা যদি বাড়াতে হয়; উৎপাদনশীলতা যদি বজায় রাখতে হয়; প্রাকৃতিক ভারসাম্য যদি রক্ষা করতে হয়; বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা যদি মোকাবেলা করতে হয় তাহলে নদী দখল-দূষণ বন্ধ এবং খনন ও সংরক্ষণের কোন বিকল্প নাই। নদী উন্নয়ন-ই রয়েছে সব উন্নয়নের মূলে। বিশেষ করে টেকসই ও অভিঘাত সহনশীল বৈচিত্র্যপূর্ণ, বৈষম্যহীন নগর ও পরিবেশ উন্নয়নের চাবি কাঠি। ফলে নদী ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণই সার্বিক উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

আজ রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩) রাজশাহীর যুব/যুবাদের বৃহৎ ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিক(বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ) এর যৌথ আয়োজনে নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিশ^ নদী দিবস উপলক্ষ্যে নদীবন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।

নদীবন্ধনে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি ও সূর্যকিরণ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি শাইখ তাসনিম জামাল এর সভাপতিত্বে এবং  বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চলের নদী বাঁচলে বাঁচবে এই জনপদ। বাঁচবে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সহ সুরক্ষা হবে এই অঞ্চলের বাস্তুসংস্থান।

বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান নদী পদ্মা। পদ্মার প্রধান উপনদী হলো- মহানন্দা এবং পুনর্ভবা। পদ্মার বিভিন্ন শাখানদীর মধ্যে গড়াই, বড়াল, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, মাথাভাঙ্গা, কপোতাক্ষ ইত্যাদি। পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। পদ্মার সাথে সংযোগ হওয়া শাখা এবং উপশাখা নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় সহ সকল জলাধারগুলোর জীবন ফিরিয়ে আনতে হবে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের নদীগুলোকে হত্যা করা হয়েছে যখন পদ্মাকে তার পানির ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজশাহী  শহরের বিভিন্ন  দূষিত কঠিন, তরল, বিষাক্ত প্লাস্টিক ও মেডিকেল বর্জ্য পদ্মা, শিব-বারনই নদীসহ আশেপাশের জলাধারগুলোতে পড়ার কারনে এখানকার জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, জলাশয়-জলাধার গুলোয় পানি না থাকার কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষসহ আদিবাসীরা পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদ-নদী, জলাধারগুলোসহ পানির উৎসগুলো নষ্ট করে এখন পানি বিক্রির প্রকল্প তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।  পানির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের সমাজগুলোতে দিনে দিনে সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের জীবন জীবীকা সংকটে পড়েছে।

আদিবাসী যুব পরিষদ, রাজশাহীর সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন- পানির অভাবে, নদীগুলো কে হত্যা করার কারনে মানুষের বৈচিত্র্যময় পেশা হারিয়ে যাচ্ছে। জলজ উদ্ভিদ বৈচিত্র্য ও প্রাণবৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।  এসবই আমাদের বেঁচে থাকতে রসদ জোগায়। এগুলো হত্যা করা বা নষ্ট করা মানে আমাদের ক্ষতি করা। তাই বরেন্দ্র অঞ্চলের জীবনপ্রবাহ ঠিক রাখতে এই অঞ্চলের নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, জলাশয়-জলাধারগুলো দ্রুত খনন করতে হবে, দখল দূষণ বন্ধ করতে হবে।

বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রোগ্রাম অফিসার অমৃত সরকার বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমাতে এবং এই অঞ্চলের খরা মোকাবেলায় দ্রুত পদ্মা নদী এবং এই অঞ্চলের নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, জলাশয়-জলাধারগুলোর লিজ প্রথা বাতিল, বেসরকারি ও বাণিজিকিকরণ বন্ধ করাসহ দ্রুত গভির খনন করে পানির উৎস সৃষ্টি এবং বারোমাসে পানির প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। সেই সাথে পানির উৎসগুলোকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। মৃত এবং মৃতপ্রায় নদীগুলোকে বাঁচাতে সার্বিক ভূমিরূপ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।

ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি শামীউর আলীম শাওন নদীবন্ধন কর্মসূচীতে বলেন- নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। সেই দেশের নদ নদীগুলো আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখল আর দূষণের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদী সহ দেশের সকল নদ-নদী ও তার উপনদী, শাখা-প্রশাখা নদী এবং খাল-খাড়ি, জলাশয় গুলোকে অবিলম্বে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। সেগুলো পূনঃউদ্ধার করে খনন ও সংস্কার করে প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা উন্নয়নকর্মী ও পরিবেশবাদীরা সমন্বিত ভাবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো। এবং তিনি নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানান।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম দাবি করে বলেন-পদ্মা এবং তিস্তা নদীর পানি ভারত একতরফা ভাবে নিচ্ছে সেটা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত আর্ন্তজাতিক পানি বিষয়ক সনদটি সম্পূর্ণরূপে ভাটির দেশগুলির স¦ার্থ রক্ষা করছে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে এই আইনের সুবিধা পাবে শতভাগ। অতএব কালক্ষেপণ না করে জাতিসংঘের উক্ত সনদে বাংলাদেশের স্বাক্ষর প্রদান ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থে অত্যান্ত জরুরী।
সেভ দি ন্যাচার এন্ড লাইফ এর চেয়্যারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন- বাংলাদেশের সকল নদ-নদী ও জলাশয়-জলাধারগুলোকে দখল দুষণমুক্ত রাখতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ অত্যান্ত জরুরী।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন,২০১৩ (২০১৩ সালের ২৯ নং আইন), বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ (২০১৩ সালের ১৪ নং আইন) এর যুগোপযোগী সংস্কার ও প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং আইন বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদী এবং এগুলোর শাখা-প্রশাখা যে সমস্ত নদীতে পানি প্রবাহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তাঁর সার্বিক মূল্যায়ণ করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি ও সূর্যকিরণ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি শাইখ তাসনিম জামাল নদীবন্ধন কর্মসূচীর দাবি সমূহ তুলে ধরেন এবং বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চল  সহ সারা দেশের নদীসমূহ সংরক্ষণে এখনই সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অনতিবিলম্বে মৃতপ্রায় নদীসমূহ পুনরুদ্ধার করতে হবে।

নদীবন্ধন কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের সদস্য মোঃ লিমন সরকার, সচ্ছলতা এসোসিয়েশনের সাধারণ সস্পাদক সালমান ফারসি সহ প্রমূখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.