বলৎকারের দায়ে – ইমামতি হারিয়ে পলাতক হুজুর

0 ৩১০
মোহাঃমাইনুল ইসলাম লাল্টু শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ  শিবগঞ্জে নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষক ও জামে মসজিদের ইমাম কর্তৃক পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বলৎকারর শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এ অভিযোগে উক্ত শিক্ষককে পদ থেকে ও ইমাম থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। সালিশের রায় নিয়ে চলছে প্রহসন এবং নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবার  প্রভাবশালীদের ভয়ে কোন অভিযোগ করতে পারছেন না।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের চাকলা পড়জিপাড়া গ্রামে।যৌন নির্যাতনকারী মাওলানা হলো চাকলা নূরানী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মবিন ও যৌন নির্যাতনের শিকার একই এলাকার চাকলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
নির্যাতনের শিকার শিশু, তার পরিবার, মাদ্রাসার কমিটি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে গত ১১ মে রাতে ঔই মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল মবিন ও ঔই ছেলে এক সাথে এশার নামাজ পড়ে। নামাজের পর  মোটরসাইকেল যোগে তাকে নিয়ে মাওলানা তার বাড়ি নিয়ে যায় এবং  ডিম-ভাত খেতে দেয়। মাওলানা  আব্দুল মবিনের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের কেউ বাড়িতে না থাকার সুযোগে ওই ছেলেকে বলৎকার  করে।
এ সময় সে চিৎকার করার চেষ্টা করলে সে বাধা দিয়ে কাউকে না বলতে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখায় এবং রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে বাড়িতে রেখে যায়। নির্যাতনের  শিকার ওই শিশু কাউকে কিছু না বললেও অস্বস্তিবোধ করলে তার মা বার বার জিজ্ঞাসা করায় শেষ অবধি সব কথা খুলে বলে। তার মা জানান আমার স্বামী ধান কাটতে  গিয়েছিল।বাড়িতে না থাকায় ঘটনাটি কাউকে বলতে পারিনি। গত ১৮ মে  বৃহস্পতিবার তার স্বামী অর্থাৎ ঔই শিশুর পিতা  বাড়ি আসলে সব কথা খুলে বললে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এ ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে স্থানীয়  একটি প্রভাবশালী মহল গত ১৯ মে রাতে চাকলা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে চাকলা নূরানী মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী রাজেকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক সালিশ হয়। সালিশে ঔই মাওলানা নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করে। সালিশে মাওলানা আব্দুল মবিনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমান করা হয়। জরিমানা অর্ধেক টাকা  জামে মসজিদে ও অর্ধেক টাকা নির্যাতনের পরিবারকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং টাকা দেয়ার জন্য  ১৫ দিন সময় দেয়া হয়।
সালিশের সভাপতি  হাজী রাজেকুল ইসলাম সালিশের সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করেন। অন্যদিকে এঘটনাকে কেন্দ্র করে চাকলা নূরানী মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গত ২০ মে বিকালে এক জরুরী সভা করে মাওলানা আব্দুল মবিনকে স্থায়ীভাবে তার পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে। অন্যদিকে মসজিদের ইমামতির পদ  থেকেও তাকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে  বলে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী জানান।নির্যাতনের শিকার শিশুর পিতা বলেন আমরা গরীব ও অসহায় মানুষ। এলাকার  কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে ইজ্জতের ভয়ে কোন মামলা করিনি।
তবে আমি নায্য বিচার পাইনি। তবে নির্যাতিত শিশু আইননুগ  ওই মাওলানার বিচার দাবী  করেছে। অন্যদিকে  নাম প্রকাশে নিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন শিশু- কিশোর বলেন ওই হুজুর আমাদের ভাল ভাল খাবার খেতে দেয় এবং পাশে বসিয়ে খুব আদর করে। আমরা ভয়ে কাউকে কিছু বলি না।এলাকার অনেকেই তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮-১০জন  শিশু কিশোরদের যৌন নির্যাতনের মৌখিক অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় মাওলানা আব্দুল মবিনকে সরাসরি তার বাড়ি গিয়েও পাওয়া যায়নি এবং তার ফোন বন্ধ থাকায়  বার বার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে দাইপুখুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর রেজা বলেন ঘটনাটি আমার জানা নেই ।
তবে ঘটনাটি সত্য হলে ওই মাওলানার বিরুদ্ধে আইননুগ বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ বলেন, কোন অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার  আবুল হায়াত বলেন ঘটনাটি আমার জানা নেই । জানলাম, তদন্তসাপেক্ষে আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.