বাংলাদেশ – চীনা ভ্যাকসিনের উপর নির্ভরতার কারণে টিকাদান প্রক্রিয়ায় আংশিক ব্যাঘাত
করোনা মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বাধার সম্মুখীন হয়েছে, তার প্রধান একটি হলো নাগরিকদের জন্য ক্রমাগত টিকাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে বাংলাদেশ চলমান বছরটিকে টিকা দেয়ার বছর হিসেবে ঘোষণা করার পরে বেশ কয়েকটি দেশ প্রচুর পরিমানে টিকা দিয়েছে, প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপহার হিসেবে ফাইজার ভ্যাকসিনের প্রায় ১৬.৮ মিলিয়ন ডোজ দান করেছে। সংবাদ সূত্র: A24 News Agency
টিকার সরবরাহ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শংকর প্রসা অধিকারী জানান,”চায়নার ভ্যাকসিন সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক প্রচুর পরিমাণে এসেছে। প্রথম ডোজ হিসেবে সিনোভেক চলছে। প্রথমে আমরা ভারতীয় ভ্যাকসিন দিয়ে শুরু করেছি। এরপর চায়নিজ ভ্যাকসিন এবং আজকে আমরা বাচ্চাদের জন্য ফাইজারের ভ্যাকসিন শুরু করেছি।”
দেশের ক্ষিণাঞ্চলের বিভাগ বরিশালেও য়ো হচ্ছে টিকা। বরিশালের সিভিল সার্জন ডা: মো: মনোয়ার হোসাইন বলেন, ”কোভিড ১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের টিকা এসেছে এবং এ পাঁচ ধরনের টিকাই বরিশালে দেয়া হচ্ছে। তার মধ্যে অ্যাস্ট্রোজেনিকা, সিনোফার্মা, ফাইজার এবং মডার্ণা এর সঙ্গে সর্বশেষ সংযোজন সিনোভেক। এ পর্যন্ত কোনটাতেই কোন সমস্যা হয়নি। সবচেয়ে বেশী যে টিকাটি এসেছে সেটি হচ্ছে সিনোফার্মের আর ফাইজারের কোন ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করিনি। এ পর্যন্ত ফাইজারের যত টিকা আমরা দিয়েছি সেগুলো সবই উপহার হিসেবে পাওয়া এবং আমাদের কাছে মজুতও বয়েছে অনেক।”
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া টিকা ছাড়া, চীনও বাংলাদেশকে টিকা উপহার হিসেবে অফার করেছিল তবে পরবর্তীতে এটি নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনার কারণে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে, এইভাবে তারা জরুরী প্রয়োজনের জন্য প্রচুর পরিমাণে চীনা সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন কিনেছিল, তবে অর্থপ্রদানের পরিমাণ অজানা রয়ে গেছে। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকস এর অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ”চীনের টিকাটি কোন পরিপ্রেক্ষিতে আনা হলো সেটিতো আমরা সবাই জানি, যখন টীকা পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন। সেরাম ইনস্টিটিউট ডেকলাইন করলো, চুক্তি অনুযায়ী দিতে পারলো না।
তখনই আমাদের চীনমুখী হতে হয়েছে। চীন আগে তাদের টীকা ট্রায়াল দিতে বলেছিলো, তখন আমরা যেভাবেই হোক রাজি হইনি। কিন্তু তারপরে দেখা গেল চীন থেকে আমাদের টিকা আনতে হলো এবং বলা হলো যে দাম বলা যাবে না ইত্যাি নান কন্ডিশন ছিলো। তবে আমার এখন যেটা মনে হয়, যেহেতু সরকার চীন থেকে টিকা আনবে, কত ডোজ টিকা আনবে, চীনের সাথে সরকারের একটি স্ট্যান্ডার্ড চুক্তি থাকা উচিত। কিন্তু আরো যে টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো আছে সেগুলোতেও অনুসন্ধান করা রকার। আমরা যি আরো ভালো টিকা পাই যেগুলোর ফিটনেস ভালো তাহলে সরকার সেগুলো নিয়েও চিন্তা করতে পারে।”
এদিকে, জনস্বাস্থ্য ও প্রতিরোধমূলক ঔষধের বিশেষজ্ঞ ডা: লেলিন চৌধুরীর মতে, বিকল্প উৎসের উপর নির্ভর না করে শুধুমাত্র চীনা ভ্যাকসিনের উপর সরকারের নির্ভরতা টিকাদান প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও ব্যাঘাত ঘটায়। তিনি বলেন, ”আমরা এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ থেকে ২৬ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দিতে পেরেছি এবং এক ডোজ দিতে পারেছি মাত্র ৫৩-৫৪ শতাংশ মানুষকে। টিকার কথা বলতে হলে আমারে সামনে অনেকগুলো বিষয় চলে আসে। প্রথমেই বলতে হয় টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
আমাদের মধ্যে একচোখা একটি মনোভাব ছিলো যে একটি উৎস থেকেই নিতে হবে। একাধিক উৎস থেকে টিকা পাওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল সেগুলো আমরা গ্রহন করিনি। সে সম্ভাবনাগুলো যদি আমরা গ্রহণ করতাম তাহলে টিকাদানের মাঝখানে যে অচলাবস্থা হয়েছিল সেটি হতো না। আমরা বিশ্বাস করি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আরোও ক্ষতা ও গতি আনা উচিত এবং অব্যবস্থাপনার যে জায়গাগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো দূর করে সুস্থ, সঠিক, গতিসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা তৈরী করা দরকার।
কোন ব্যক্তির জায়গা থেকে নয় বরং বিজ্ঞানের জায়গা থেকে, মানুষের কল্যাণের জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিত।” জানা গেছে যে, বাংলাদেশ সরকার ভ্যাকসিনেরে জন্য ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে, ২১ কোটি ডোজ কিনেছে এবং আরও ৮ কোটি ডোজ অর্জনের পরিকল্পনা করেছে।
Comments are closed.