তাজুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি, বগুড়াঃ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের খেলারমাঠে হাট বসার কারণে দুটি বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত
হয়ে আসছে। হাট না বসানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও এর সুফল পায়নি মর্মে অভিযোগ
প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। হাট স্থানান্তর করণ কিংবা শুক্রবারের দিন হাট বসানোর ব্যবস্থা করণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা। এদিকে বিদ্যালয় দুটির মাঠ নিচু হওয়ায় সামন্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় খেলার মাঠ। ফলে বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে মাঠ পারাপারে বেগ পোহাতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। স্থানীয়রা বলছে খেলার মাঠে হাট বসতে না দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের মাঠটিতে মাটি ফেলছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখাগেছে, কামালপুর ইউনিয়নের কড়িতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কড়িতলা এস.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে দীর্ঘদিন যাবৎ হাট বসিয়ে আসছে হাট কমিটি। সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার এ দুইদিন সেখানে বসে হাট। এতেকরে
ক্লাশ বিরতির সময় বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে পড়ালেখার বিষয়ে আলাপচারিতা করবে
এমন সুযোগ হয়না। শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা জানায় সপ্তাহের এ দু’দিনে দুপুর ১২টা থেকেই হাটে আসতে শুরু কওে ক্রেতা- বিক্রেতা। শুরু হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ডাক হাকের গুণঞ্জন।
বেলা ১ ঘটিকা থেকে শুরু হয় পণ্য কেনাবেচা। হাটে তরিতরকারি, ফলমূল সহ হরেক রকমের জিনিসপত্র, কাঠের ফার্ণিচার, পোষাপাখি কবুতর, হাঁস-মুরগি সহ অনেক কিছু কেনাবেচা হয়। রাত ৮ঘটিকা পর্যন্ত হরদমে চলে বেচাকেনা। স্কুল সময়ে
দোকানীদের ডাক হাকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। শব্দ দূষণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও গ্রহণে বিঘœ ঘটে।
শিক্ষার্থীদের মনযোগ নষ্ট হয়ে যায়, পড়ালেখা বাদ দিয়ে জানালা দিয়ে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিকে তাকিয়ে মূল্যবান
সময় নষ্ট করে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একাধিকবার হাট কমিটির কাছে হাট স্থানান্তরের লিখিত অভিযোগ করলেও
কোনো সুফল পায়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
কড়িতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সিহাব জানায়, হাটের দিনে সকাল থেকে তাদের শব্দ দূষণের কারণে
পাঠগ্রহণে মনযোগ বসেনা। তাছাড়া শব্দ দূষণের কারণে তাদের মাথা ব্যথা সহ বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়।
কড়িতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানায়, হাটেরদিন সকাল থেকেই হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের ডাক
হাকে শব্দ দূষণের সৃষ্টি হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনযোগী করা যায়না।
এছাড়া বিদ্যালয়ের পাশে সড়ক দিয়ে হাটে আসা লোকজনের গাড়ী দেখতে শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ছুটে যায় এতে দুর্ঘটনার আশস্কা থাকে। প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল হাসান বাবলু জানান, সপ্তাহের দুইদিনে শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠে মনযোগী করা যায়না। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ থেকে পিছিয়ে পড়ছে। বিষয়টির স্থায়ী সমাধান চেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিস-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করার কথা জানান তিনি।
কড়িতলা এস.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুনুর রশিদ মামুন জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের ছুটির পর নারী শিক্ষার্থীদের হাট চলাকালীন সময়ে বহিরাগতদের সামনে বাড়ী ফিরতে হয়। এতে বিভিন্ন সময়ে রাস্তা-ঘাটে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। শিক্ষার্থীদেও সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে হাট সরানোর জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ সহ স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করা হলেও আজও ফলপ্রসু হয়নি বরং হাট কমিটি কর্তৃক লাঞ্ছীত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম কবির বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসার বিষয়টি অবগতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি
জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের সীমানার ভিতরে হাটবাজার বসানোর নির্দেশনা কাউকে দেওয়া হয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ
মাধ্যমিকের সাবেক অফিসার এস এম শহীদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসা নিয়ে মাস ছয়েক
আগে একটি লিখিত অভিযোগ তার দপ্তরে করা হলে হাট ইজারাদারদের অফিসে ডেকে সেখানে হাট না বসানোর
মৌখিক স্বীকারোক্তি নেন। পরে সে বিষয়ে আর কোনো কিছু জানা যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে কড়িতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কড়িতলা এস.এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলারমাঠে হাট বসার একাধিকবার অভিযোগ এসেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হবে এ ধরণের কাজ হতে দেওয়া যাবেনা। বিষয়টি গুরত্ত্বের সহিত বিবেচনা করা হবে। আর যেহেতু হাট বসানোর বিকল্প কোনো স্থান নেই সেক্ষেত্রে ইজারাদারদের সাথে কথা বলে শুক্রবারের দিন হাটবার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
Comments are closed.