বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে পশুপাখির জন্য খাবার দেন

রাবি কর্মচারী গাজিউল

0 ৫১১

আকরাম হোসাইন, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পশু-পাখির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে এক কর্মচারীর। নাম ধরে ডাকলেই কাছে চলে আসে। টানা ১২ বছর ক্যাম্পাসের কয়েক জায়গায় পশুপাখির খাবার দেওয়ার ফলে এমনটা হয়ে উঠেছে। নিজের বেতনের অর্ধেক অংশ দিয়েই নিরবে চলছে তার এই মহৎ কাজ। কথাগুলো বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নিম্নমান সহকারী কর্মরত গাজিউল ইসলামের কথা।

প্রতিদিন সকাল ৬টায় বাসা থেকে মটরসাইকেলে করে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। টিএসসিসিতে এসে প্রায় দেড় ঘন্টায় রান্না শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় কুকুর, বিড়ালগুলোকে খাওয়ান। এর মধ্যে টিএসসিসি, রাকসু ভবন, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ কলা ভবন, শহীদ মিনারসহ প্রায় ১৫ জায়গায় ঘুরে ঘুরে ক্যাম্পাসের প্রায় ৫০টি কুকুরকে খাবার দেন তিনি। এরই মধ্যে পশু পাখির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এমন হয়েছে যে, ডাবু, লালু, শেফালিসহ নানা নামে ডাকলেই কাছে চলে আসছে প্রাণীগুলো।

এমন উদ্যোগের বিষয়ে গাজিউল বলেন, একদিন ঝিরঝিরে বৃষ্টির সময়ে একটি মেয়েকে মেরুদ- ভাঙা অসুস্থ একটি কুকুর ছানাকে ভাগাড়ে রেখে যেতে দেখলাম। শীতে বাচ্চাটি কাঁপছিল। পরে ভাবলাম, এই পশুগুলোরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এদেরকে সবাই যদি তাড়িয়ে দেয় তাহলে যাবে কোথায়। এরপর তিনি কুকুরের বাচ্চাটিকে বাসায় নিয়ে চিকিৎসা করান।

এরপর থেকেই তিনি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পশুপাখিগুলোকে খাবার দেন। খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, চাল-ডাল, গরুর মাংসের চর্বি দিয়ে তৈরি হয় খিচুরি। এমন খাবার যা মানুষেরও খাওয়ার উপযোগী। প্রতিদিন ১০ কেজি চাল এবং মাসে ২০ কেজি চর্বি ব্যবহার করেন। এতে করে প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও তার বাসায় আরো ১৪টি কুকুরসহ কয়েকটি প্রাণীর জন্য রান্না করেন তার মেয়ে।

খরচের যোগান সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনার আগ পর্যন্ত নিজের মাসিক বেতনের প্রায় অর্ধেক খরচ হয়ে যেত এইসব প্রাণীদের পেছনে। করোনা শুরুর ৩ মাস পর হঠাৎ দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহার সাথে। সেই থেকে অধ্যাপক সাহা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান ও সহকারী পরিচালক আহসান হাবীব, রবীন অনেকেই কাজগুলো দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁকে।

গাজিউল ইসলাম মনে করেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এসব প্রাণীদের দেখভাল করার জন্য সৃষ্টিকর্তা দায়িত্ব দিয়েছেন। বিবেকের দায় থেকেই কাজটি করি। আর এটাই ভালো লাগে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.