মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে বিনামূল্যের বই বিতরণ উৎসবকে ঘিরে নানা অনিয়নের অভিযোগ উঠেছে। এদিন টাকা ছাড়া বই না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী অশ্রুশিক্ত নয়নে বাড়ি ফিরেছে। সারাদেশে ১ জানুয়ারি উৎসব মূখর পরিবেশে বই উৎসব পালিত হলেও মহাদেবপুরে কতিপয় শিক্ষকের অমানবিকতায় ম্লান হয়েছে বই উৎসব। এদিন উপজেলার অর্ধশতাধিক মাধ্যমিক ও নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছিল এ চিত্র। নতুন বইয়ের গন্ধে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও সেশন ফি এর টাকা জমা দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের বই দেয়া হয়নি অধিকাংশ বিদ্যালয়ে।
এ উপজেলার প্রতিটি মাধ্যমিক ও নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সেশন ফি বাবদ ৫০০ থেকে ৯৫০ টাকা জমা নিয়ে দেয়া হয়েছে বিনামূল্যের এ পাঠ্যবই। যে সব গরীব শিক্ষার্থীরা সেশন ফির নির্ধারিত টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে দেয়া হয়নি নতুন বই। এর ব্যতিক্রম হয়নি উপজেলার একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজেও। এছাড়াও উপজেলা সদরের জাহাঙ্গীরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়, বাগডোব উচ্চ বিদ্যালয়, বেলকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়েও ছিল একই চিত্র। সূত্র জানায়, সেশন ফির টাকা জমা দিতে না পারায় বই উৎসবের দিন (১ জানুয়ারি) রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিফা, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিবসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বই না পেয়ে কান্না করতে করতে বাড়ি ফিরে যায়।
বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ বিষয়ে রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজিফা, আছিবসহ বেশ কয়েকজন জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে সেশন ফির নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা আদায় করে তারপর দেয়া হয়েছে বিনামূল্যের বই। যারা এদিন টাকা দিতে পারেনি, তাদেরকে বইও দেয়া হয়নি। রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিফা আক্তার জানায়, তার মা একটি খাবারের হোটেলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে অনেক কষ্টে তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। বই উৎসবের দিন তার মা সেশন ফির টাকা জোগাড় করতে না পারায় তাকে নতুন বই না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরদিন (২ জানুয়ারি) সকালে তার মাকে নিয়ে স্কুলে গেলেও সেশন ফির টাকা ছাড়া বই না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
পরে অভিভাবকদের চাপে দুপুরে তাকে ডেকে নিয়ে বই দেয়া হয়। এ ব্যাপারে রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম শাহ সেশন ফি নেয়ার কথা স্বীকার করলেও টাকা ছাড়া বই না দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি আরো বলেন, উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়েও একই পদ্ধতিতে সেশন ফি আদায় করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অসিত চন্দ্র এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীরপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাজিম উদ্দিন মিঞার মুঠোফোনে বার বার করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জাহাঙ্গীরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এস. এম ইব্রাহীম হোসেন এ বিষয়ে মোবাইলে বক্তব্য দিতে রাজী হননি। বেলকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামসুল আলমকে ফোন করা হলে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি আদায় করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা শুধুমাত্র রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিনামূল্যের বই বিতরণের সাথে সেশন ফি এর কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়াও অন্য কোন বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিনামূল্যের বই আটকে রেখে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি বা অন্য কোন টাকা আদায় করার অভিযোগ পান তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরেই হয়তো এ নিয়ম চলে আসছে। তবে ভবিষ্যতে এমনটি আর করতে পারবে না বলে তিনি আশ্বাস দেন।