মহামারী পরবর্তী বিনিয়োগ পছন্দের শীর্ষে ভিয়েতনাম

0 ২৭৮

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের মধ্য দিয়ে ব্যবসার নিরাপদ স্থান হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে ভিয়েতনাম। করোনার কারণে সাপ্লাই বিঘ্নিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক উৎপাদনকারীদের চীন থেকে সাপ্লাই চেইন সরানোর আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে নতুন পছন্দের গন্তব্য হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি। খবর রয়টার্স।

গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা ভাইরাসে ভিয়েতনাম তুলনামূলকভাবে কম আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যাও শূন্য। ভিয়েতনামের প্রতিবেশী দেশগুলোয় বৃহত্সংখ্যক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সরকারি হিসাবে দেশটিতে মাত্র ২৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। এতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে আগে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার দিকে এগোচ্ছে ভিয়েতনাম।

ভিয়েতনামে কারখানা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কিজুনা জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন জানায়, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মহামারী শেষে আমরা ভিয়েতনামে বড় অংকের বৈদেশিক বিনিয়োগ আশা করছি।

মূলত জাপানি ও কোরীয় বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভরশীল কোম্পানিটি বলছে, তারা দক্ষিণ ভিয়েতনামে এক লাখ বর্গমিটারের একটি কারখানা নির্মাণ দ্রুততর করছে। মহামারী পরবর্তী চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কারখানা নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে। আগামী জুলাই নাগাদ কারখানাটি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করছে কিজুনা।

বিদেশী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তর করতে সহায়তাকারী পরামর্শকরা বলছেন, মহামারী মোকাবেলায় ভিয়েতনামের সাফল্য এরই মধ্যে দেশটির বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়ে তুলেছে।

এশিয়াকেন্দ্রিক পরামর্শক সংস্থা ওয়াইসিপি সলিডিয়েন্সের একজন অংশীদার মাইকেল সাইবার্গ বলেন, বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় আমার মনে হয়েছে, বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক উঁচুতে অবস্থান করছে ভিয়েতনাম।

ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন উৎপাদন কেন্দ্রের সন্ধানকারী উৎপাদনকারীদের সহায়তা করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ উপমন্ত্রী ট্রান কোক ফুং এক বিবৃতিতে বলেন, এ সুযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ স্থানান্তরের বিষয়টি। বিশেষত বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনতে অন্যান্য অঞ্চলে কার্যক্রম সরিয়ে আনছেন। এর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম হচ্ছে প্রথম দিককার গন্তব্য।

এরই মধ্যে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তর শুরু হয়ে পড়েছে। মহামারীটির আগে থেকেই মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এবং চীনে উচ্চ শ্রমব্যয়ের কারণে চীনভিত্তিক অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই ভিয়েতনামমুখী হয়েছিল। ভিয়েতনামের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভিয়েতনাম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ইভিএফটিএ), যার মাধ্যমে ইইউর সঙ্গে উৎসাহব্যঞ্জক বাণিজ্য সম্পর্কের সূত্রপাত হয়।

মহামারীটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিয়েতনামের সাফল্যের পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত পরীক্ষা এবং গণহারে লাখো লাখো মানুষকে কোয়ারেন্টিন কর্মসূচির আওতায় আনা। অবশ্য স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ডিসপ্লে ইউনিটের প্রায় ২০০ প্রকৌশলী এবং বিদেশী তেল বিশেষজ্ঞরা হ্যানয়ের ওই কোয়ারেন্টিন কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে অবশ্য ভিয়েতনামের ব্যবসাগুলো বড় ধাক্কা খেয়েছে এবং সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্রুত সম্প্রসারণ হওয়া তাদের পক্ষে সহজতর হবে না।

ভিয়েতনামে বিদেশী ব্যবসার পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ভ্রায়েন্স অ্যান্ড পার্টনার্সের স্যামুয়েল পার্শ বলেন, সরকার এখনো বেশ সাবধানতা অবলম্বন করছে। বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা সত্ত্বেও সেক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না, কারণ চুক্তি সই করতে কিংবা কারখানা পরিদর্শন করতে মানুষ বের হতে পারছে না।

সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৬৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ কোম্পানি মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে এভিয়েশন, পর্যটন, খাদ্য, শিক্ষা খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভিয়েতনামের রাষ্ট্রায়ত্ত পরিসংখ্যান সংস্থা জেনারেল স্ট্যাটিস্টিকস অফিসের (জিএসও) উপাত্তে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের প্রবৃদ্ধি শেষে বছরের প্রথম চার মাসে ভিয়েতনামে বৈদেশিক বিনিয়োগ ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবুও চলতি বছরে ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে ভিয়েতনাম, যেখানে পুরো বিশ্ব গভীর মন্দার দিকে এগোচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.