মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় সবজি চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ‘সেক্স ফেরোমন ফাঁদ’। পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতি বিষাক্ত কীটনাশকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এর বিকল্প হিসেবে এ পদ্ধতির ব্যবহার আশির্বাদ হিসেবে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক কৃষকরা তাদের পটল, লাউসহ বিভন্ন সবজির খেতে এই ফাদ স্থাপন করেছেন। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে ফলে আম, লিচু, পটল, লাউ শাকসবজি ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া ফসলের জমিতে বিষাক্ত কীটনাশন ব্যবহার করতে হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ বা কীটনাশক ফাঁদ একটি পরিবেশ বান্ধব জৈবিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মূলত ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমন করা হয়। ফলে রক্ষা পায় ফসল ও পরিবেশের জন্য উপকারী পোকামাড়ক। বাগানে বা ফসলের মধ্যে একটি বাঁশের লাঠির মাথায় বা দুইটি খুঁটির মাঝে একটি মুখ কাটা কৌটা শক্ত করে বাধা থাকে। কৌটার মধ্যে সুতা দিয়ে বেঁধে ঝোলানো হয় সেক্স ফেরোমন লিওর। কৌটার তলায় থাকে পানি ও সাবানের ফেনা।
ফেরোমন লিওরের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ পোকা ও মাছি কৌটার মধ্যে সাবান-পানি মিশ্রণের মধ্যে পড়ে মারা যায়। এতে অন্য কোনো পোকা আকৃষ্ট হয় না। ফেরোমন লিওরে থাকে ক্ষতিকর স্ত্রী পোকার গায়ের গন্ধ। এতে ওই জাতের পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে ট্র্যাপে পড়ে মারা যায় এবং ক্ষতিকর পোকাগুলোর বংশ বিস্তার করতে পারে না । উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের ইউসুফ তার পটল খেতে এ বছর নতুন এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। পটলের দেড় এক বিঘা জমিতে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে পাওয়া ৩০ টি ফেরোমন ট্র্যাপ/কীটনাশক বক্স ব্যবহার করছেন।
তিনি জানান, পটলের খেতে এক ধরনের সাদা মাছি দেখা যেত এবং পটলে গায়ে বসে পটল ছিদ্র করে দেয়। সেখান থেকে পোকা জন্ম দেয় এবং পটল পচে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহারে ফলে পটলের জমিতে আর সাদামাছি দেখা যায় নি। উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের ভীমপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল জানান, প্রায় একবিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন।
২৫টি কীটনাশক বক্স ব্যবহার করেছেন। লাউের ক্ষতিকর মাছি ও পোকামাকড় কীটনাশক বাক্সের মধ্যে পড়ে মারা যায়। প্রতি সপ্তায় বাক্সটি পরিষ্কার করতে হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে লাউতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কীটনাশকে খরচ ও কমে গেছে। তিনি আরো জানান, এটা শুধু লাউে নয়। সব ধরনের সবজির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, সাদা মাছি ও ক্ষতিকর পোকা দমন করার জন্য সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। আম, লিচুসহ সব ধরণের সবজিতে ব্যবহার করা যাবে। এটি ব্যবহারে কীটনাশকমুক্ত সবজি পাওয়া সম্ভব। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহারে কৃষদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
আগামী বছর থেকে এর ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরীক্ষমূলকভাবে ২০ জন চাষিকে ৫০ হেক্টর জমির জন্য ফেরোমন ট্র্যাপ বিনামূল্য দেয়া হয়।
Comments are closed.