মো: পাভেল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত আবারও সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইলে প্রতিহত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর লক্ষ্ণীপুর মোড়ে রাজশাহী জেলা ও নগর যুবমৈত্রীর সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সমাবেশে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন,বিএনপি নেতাদের মদদে রাজশাহীতেই প্রথম জঙ্গিবাদের আবির্ভাব ঘটেছিল। রাজশাহীতে পুলিশি পাহারায় বাংলা ভাইয়ের সশস্ত্র মিছিল আমরা দেখেছি। রাজশাহীর মানুষ আতঙ্কে সেদিন বাইরে আসতে পারেনি। রাজশাহীকে তারা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের আতুর ঘরে পরিণত করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা রাজশাহীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। আতঙ্কের সেই পরিবেশ তারা আবারো তৈরী করতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টি তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
বিএনপি নেতাদের জঙ্গিবাদের ‘পৃষ্টপোষক’ অ্যাখ্যা দিয়ে রাকসুর সাবেক এই ভিপি আরো বলেন, বাংলা ভাইয়ে যখন উত্থান ঘটে তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে প্রত্যাশা করেছিলাম,তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নেবেন। কিন্তু তার মুখে শুনেছিলাম,বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। বাংলা ভাইকে গ্রেফতারের পর যেদিন আদালতে তোলা হয়,সেদিন সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছিল; কারা তাকে অস্ত্র ও মানুষ হত্যা করার জন্য অর্থ প্রদান করতো। বাংলা ভাই সেদিন স্পস্ট করে যে বিএনপি নেতাদের নাম বলেছিল,
তারা হলেন- মিজানুর রহমান মিনু,ব্যারিস্টার আমিনুল,রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু,নাদিম মোস্তফাসহ অনেকে। তাহলে কী দাড়ায়? যারা আজকে শান্তির কথা বলে,গণতন্ত্রের কথা বলে,তারাই সেদিন নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য জঙ্গিদের মদদ দিয়েছিলেন। রাজশাহীর মানুষ এসব ভুলে যায়নি। বাদশা বলেন,১৪ দল গঠনের পর সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে কিছু অর্থনৈতিক সংকট আছে।
এসব কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী যখন কৃষি জমি রক্ষা করতে বলছেন, অনাবাদি জমিতে আবাদ করতে বলছেন,তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু ব্যক্তি প্রকল্পের নামে শত শত একর উর্বর জমি ক্রয় করে ফেলে রাখছেন। রাজশাহী শহরে কৃষকের হাতে আর কোন কৃষি জমি নেই। এসব জমি শহরের গুটি কয়েক ধনী মানুষের হাতে চলে গেছে। তাহলে আমরা কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের মান রাখতে পারছি? রাজশাহী মানুষ সবসময় বৈষম্যের শিকার মন্তব্য করে টানা তিনবারের এই সাংসদ বলেন, আমাদের শহরে নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠেনি। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পায় না। বিভিন্ন কল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু রেশম কারখানা বন্ধ হতে দেইনি। কারণ এর দায়িত্ব ছিল আমার।
অনেক কষ্টে সেটি চালু করেছি। তবে সেটির মান উন্নয়নে কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। রাজশাহীকে পাল্টে ফেলতে আমরা কর্মসংস্থান চাই। আমাদের সন্তানরা যেন আমাদের উন্নয়নে নিজেদের স্বার্থ খুঁজে পায়,সেই উন্নয়নই আমাদের করতে হবে। এতেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর কেউ বাস্তবায়িত না করলেও ওয়ার্কার্স পার্টি করবে মন্তব্য করে বর্ষিয়ান এই রাজনীতিক বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশে নামক রাষ্ট্রের মালিক হবে জনগণ। জনগণের সেই রাষ্ট্র এখন লোভী একটি গোষ্ঠীর কাছে হাইজ্যাক হয়ে গেছে। তারা যখন যা করতে চায়, তাই করতে পারে।
আমরা আমাদের আদর্শ থেকে আসতে আসতে সরে আসছি। এটি আমাদের জন্য আত্মঘাতী! জনগণের স্বার্থের পক্ষেই আমাদের থাকতে হবে। তাদের মনের আকঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী আমরা রাষ্ট্র চাই। সেখানে যেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখিয়েছিলেন, আমরা সেই রাষ্ট্র চাই। এর জন্য আমরা লড়বো। আর কেউ এটি বাস্তবায়িত করুক বা না করুন,ওয়ার্কার্স পার্টি এটি বাস্তবায়নে সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
রাজশাহী জেলা যুবমৈত্রীর সভাপতি মনিরুদ্দীন পান্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, নগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, সাবেক ছাত্রনেতা মতিউর রহমান মতি। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা শামীম ইমতিয়াজ। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় শহরের নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজে।
এতে সর্বসম্মতিক্রমে রাজশাহী মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিকে সভাপতি,সাবেক ছাত্রনেতা রায়হান হালিমকে সিনিয়র সহ-সভাপতি,শামীম ইমতিয়াজকে সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মোহাইমিনুল হক রানাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে রাজশাহী মহানগর যুবমৈত্রীর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
Comments are closed.