রুবেল হক, দুর্গাপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীতে মায়ের কাছ থেকে শিশুপুত্র সন্তানকে গোপনে চুরি করলেন পিতা। শিশু পুত্রসন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে মা। এই ঘটনায় প্রথমে কাটাখালি এবং পরে দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ করে শিশু পুত্র সন্তানের খোঁজ পেলেও আইনের জটিলতায় ৯ বছর বয়সর শিশুসন্তান ফাইয়াজ হোসেন শেখকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন কাটাখালী দেওয়ানপাড়া এলাকায়।
জানাযায়, রাজশাহী মেট্রোপলিটন কাটাখালি থানার দেওয়ান পাড়া গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের কন্যা ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিন শেখের পুত্র নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়।
২৮ বছর সংসার জীবনে সোহরাব-ফরিদা দম্পতির ২কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
ফরিদা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের ৪বছর পর ২৪ বছর পূর্বে পাঁচুবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক পদে স্বামী সোহরাব হোসেনের চাকরি হওয়ার সুবাদে তিনি পিতার বাড়ী থেকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে চাকুরী নিয়ে দেন। এরপর গত ১২ বছর পূর্বে নিজগ্রাম নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি নিয়োগ নিতে পিতার সম্পত্তি বিক্রী করে এক সাথে ১০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেন স্বামী সোহরাব হোসেনকে।
গত ৪ বছর থেকে একই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত এক সহকারী শিক্ষকের স্ত্রীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে প্রতিনিয়ত স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের প্রতি অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকেন স্বামী সোহরাব হোসেন।
স্বামীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতে পেরে স্বামীর কাছে এর জবাব চাইলে
প্রতিদিনই মারধর করতে থাকেন সোহরাফ হোসেন। এক পর্যায়ে গত ০৯ মাস পূর্বে ৯৯৯ ফোন করে স্বামীর মেরে ফেলবে ও যৌতুকের দাবিতে মারধর করায় ৯৯৯ লাইনে গাড়ি এসে উদ্ধার করেন ভুক্তভোগী ফরিদা ইয়াসমিন কে। প্রত্যক্ষ সোহরাব হোসেনের নির্যাতনের কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ ৭ মাস পূর্বে
স্বামী সোহরাফ হোসেন মারপিট ও টাকা চাহিদা পুরন না করায় কন্যা ও শিশু পুত্র সহ স্ত্রীকে বাড়ী থেকে বের করে দেন। এসময় অসহায় গৃহবধু ফরিদা ইয়াসমিন কন্যা ও শিশু পুত্র কে নিয়ে পিতার বাড়ী কাটাখালী দেওয়ানপাড়ায় চলে আসেন।
এরপর শাররীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফরিদা ইয়াসমিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর স্বামী সোহরাব হোসেন শেখকে আসামী করে রাজশাহী নার ও শিশু আদালতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে পিতার বাড়িতেই থাকেন গৃহবধু ফরিদা ইয়াসমিন।
গত ১৪ মার্চ কাটাখালী দেওয়ানপাড়ায় মায়ের কাছ গোপনে না বলে শিশুপুত্র সন্তান ফাইয়াজ হোসেন শেখকে চুরি করে নিয়ে চলে আসে পিতা দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন।
সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন মা ফরিদা ইয়াসমিন। এরপর ১৪ মার্চ তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার ৯ বছর বয়সী শিশুপুত্র ফাইয়াজ হোসেন শেখকে তার স্বামী সোহরাব হোসেন চুরি করে তার বাড়ী দুর্গাপুরের নওপাড়ায় নিয়ে গেছেন।
মা ফরিদা ইয়াসমিন তাৎক্ষণিক কাটাখালী থানায় বিষয়টি অবগত করলে থানার পুলিশ কর্মকর্তা দুর্গাপুর থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
১৫ মার্চ সকালে শিশু পুত্র সন্তান ফাইয়াজ হোসেন শেখ এর মা ফরিদা ইয়াসমিন তার শিশু পুত্র সন্তানকে উদ্ধারের জন্য দুর্গাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি)র নিকট আবেদন জানালে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক তাৎক্ষণিক সন্তানকে উদ্ধারের জন্য নওপাড়া গ্রামে নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিতা সোহরাফ হোসেনের বাড়িতে পুলিশের অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সত্যতা পান।
পুলিশি অভিযান পরিচালনাকারী দুর্গাপুর থানার উপ পরিদর্শক এসআই শফিকুল ইসলাম শিশু সন্তানের পিতা প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনকে শিশুসন্তানকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বললে তিনি সন্তানকে তার মায়ের কাছে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন আমার সন্তান আমার কাছে থাকবে। আর এই সন্তান তার মায়ের কাছে নিতে হলে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া আমি সন্তানকে দিতে পারি না, আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হলে তাকে পূরণ করে দিবে। শিশু পুত্রের পিতার এমন কথায় আইনি জটিলতার কারনে শিশুসন্তানকে পিতার কাছে রেখে থানায় এসে সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকা মা ফরিদা ইয়াসমিনকে বিষয়টি জানালে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অবশেষে সন্তানকে ছাড়াই নিজ পিতার বাড়ি কাটাখালিতে ফেরত যাওয়ার সময় দুর্গাপুরের সিংগা বাজার ব্রিজের সামনে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসালয়ে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ায় জ্ঞান ফিরলে স্থানীয় জনতা তাকে যানবাহন যোগে কাটাখালিতে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে সন্তান হারিয়ে মা ফরিদা ইয়াসমিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পিতার বাড়ী কাটাখালি দেওয়ান পাড়ায় শয্যসায়ী হয়ে আছেন।
এ বিষয়ে ফরিদা ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার সন্তানকে আমার পিতার বাড়ী থেকে কাউকে না বলে গোপনে চুরি করে তার পিতা দুর্গাপুরে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে আমি প্রথমে কাটাখালি থানাই এবং পরে দুর্গাপুর থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি অবগত করলেও আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেনি পুলিশ কর্মকর্তারা।
শিশু পুত্র সন্তান ফাইয়াজ হোসেন শেখ এর পিতা নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার সন্তান আমার কাছে থাকতে চাওয়ার আকুতি জানানোর জন্য আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি।
আমার সন্তানকে আমার কাছ থেকে নিতে হলে আদালতের মাধ্যমে নির্দেশনা নিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে কাটাখালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি যে তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে । তাদের দুইটি সন্তানে মায়ের কাছে কাটাখালি দেওয়ানপাড়ায় নানার বাড়ীতে থাকতো। সেখান থেকে সন্তানের পিতা তার সন্তানকে তার বাড়িতে নিয়ে চলে গেছে। ঘটনায় আদালতের নির্দেশনা ছাড়া পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনা। তবুও আমি মানবিক দিক দেখে কিছু সন্তানের মাকে দুর্গাপুর থানার ওসি মহোদয়ের নিকট
যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হক এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেক বিবেচনা করে সন্তানকে উদ্ধারের জন্য আমি নওপাড়ায় পিতার বাড়িতে পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু শিশু সন্তান মায়ের কাছে না ফিরতে চেয়ে তার বাবার কাছে থাকার জন্য পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আবেদন জানালে বিষয়টি আইনি জটিলতার জন্য সেখান থেকে থানায় ফিরে আসেন পুলিশ কর্মকর্তা। কিছু সন্তানের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত যদি সন্তানটিকে উদ্ধারের জন্য সাচ ওয়ারেন্ট জারি করে দুর্গাপুর থানা পুলিশকে আদেশ দেন তবে সেক্ষেত্রই কাছ থেকে শিশু সন্তানটিকে উদ্ধার করা সম্ভব।