রৌমারীতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সহকারিদের

0 ৩২৯

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে টিউশনি ফি, সেশন ফি আত্মসাত। প্রতিষ্ঠানের জায়গায় নির্মিত দোকান ঘরের জামানত, দোকান ঘর ভাড়া ও প্রতিষ্ঠানের ৫ বিঘা জমির ফসলের বাৎসরিক লিজের অর্থ হিসাব নিকাশ না দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সহকারি শিক্ষকদের। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পুরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের।

গত বৃহস্পতিবার ১৩ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠান চলাকালিন সময়ে এসব অনিয়মের বিষয়ে সহকারি শিক্ষক ও অধ্যক্ষের সাথে বাক বিতন্ডার চিত্র দেখা যায়।

সহকারি শিক্ষকদের দেওয়া অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে যোগদান করেন অধ্যক্ষ বদিউজ্জামান। দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে আমাদেরকে টিউশন ফি, সেশন ফি না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের জায়গায় নির্মিত জামানতের মাধ্যমে ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়ে, ভাড়ার অর্থ ও প্রতিষ্ঠানের ৫ বিঘা জমির ফসল বাৎসরিক লিজের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করছে। বারবার হিসাব নিকাশ চাইলে না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মূলক কাজ করার কথা বলে পাশ কাটাচ্ছে।

এদিকে ছাত্র/ছাত্রী ও অভিভাবকের অভিযোগ, ২০২৩ শিক্ষা বর্ষের এসএসসি পরীক্ষার্থী মোট ১৮৫ জন ফরম পুরন করেছে। এতে ৩/৪ বিষয়ে ফেল করাসহ প্রতি ছাত্র/ছাত্রীর পরিক্ষার ফরম পুরনে ৩৮০০ শত টাকা থেকে ৪০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য, পরীক্ষা শুরু পর্যন্ত টিউশনি ও কোচিং এর মাধ্যমে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হবে এটা সম্ভব হবে না।

শিক্ষার্থী দেলোয়ারা, জায়দা ও শাকিল অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরীব মানুষ সরকারী নীতি মালায় ফরম পুরণে অন্যান্যসহ মোট ২৩ শত ১৫ টাকা। কিন্তু অধ্যক্ষ্য আমাদের কাছ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। বেশী টাকা নেয়ার কথা উল্লেখ করলে বলেন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য টিউশন ও কোচিং করার জন্য এ টাকা নেয়া হচ্ছে।

অভিভাবক দিলবর রহমান, জহুরুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ আব্দুস সালামসহ অনেকেই বলেন, অধ্যক্ষ ফরম পুরণে কোচিং ফি না দিলে ফরম পুরণ করেন না। আমরা কৃষক ও অসহায় মানুষ। আমরা অনেক কষ্ট করে এ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছি।

অভিযোগকারী দাঁতভাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ইদ্রীস আলীসহ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা বলেন, অধ্যক্ষ বদিউজ্জামান প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে টিউশন ফি, সেশন ফি দেয়া হয়নি। বারবার চাইলেও দিবো দিচ্ছি বলে বছরের পর বছর কাটিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের জায়গায় নির্মিত জামানতের মাধ্যমে ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়ে, ভাড়ার অর্থ ও প্রতিষ্ঠানের ৫ বিঘা জমির ফসল বাৎসরিক লিজের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করছে। বারবার হিসাব নিকাশ চাইলে না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মূলক কাজ করার কথা বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।

গত ১৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠান চলাকালিন সময়ে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে এ সকল বিষয় নিয়ে দাবী দাওয়া ও হিসাব নিকাশ চাইলে অধ্যক্ষের অশোভনীয় আচরনে শিক্ষকরা এর প্রতিবাদে এক পর্যায়ে বাক বিতন্ডা হয়। পরে সভাপতি থামিয়ে দিয়ে দাবী দাওয়া ও হিসাব নিকাশ বিষয়ে বসার আশ্বাস দেন।

এসএসসির ফরম পুরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করলে সহকারি শিক্ষকরা আরোও বলেন, আমরা প্রতিবছর এ দায়িত্ব পেয়ে কাজ করে গেছি এবং বোর্ডের নির্ধারিত মূল্যে ফরম পুরণ করা হয়েছে। এবার আমাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। শুনেছি ফরম পুরনে ৩৮০০ টাকা থেকে ৪০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে সাংবাদিক মতিয়ার রহমান চিশতী বলেন, টিউশন ফি, সেশন ফি ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর দাবী দাওয়া নিয়ে সহকারি শিক্ষকরা অধ্যক্ষকে জানালে তিনি শিক্ষকদের সাথে অশোভনীয় আচরণ করায় বাক বিতন্ডা হয়। পরে সভাপতি বসার আশ্বাস দিয়ে থামিয়ে দেয়।

এবিষয়ে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি আমির হোসেন বলেন, আমি শুনেছি, দরিদ্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে কৌশলে টিউশন ও কোচিং ফি নিয়েছে।

অধ্যক্ষ বদিউজ্জামান বলেন, এসএসসির ফরম পুরণের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে অভিযোগটি কমিটি জানে। আমি নির্ধারিত ফি নিয়েছি। সহকারি শিক্ষকদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি পাশ কাটিয়ে জান।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম লাল মিয়া বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানে নতুন এসেছি সহকারি শিক্ষকদের অভিযোগ বিষয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করবো। ফরম পুরণের বিষয়টি উল্লেখ করলে বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়া লেখায় দুর্বল। ভালো ফলাফলের জন্য টিউশন ও কোচিং করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য একটু বেশী নেয়া হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইবুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাইলে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.