শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: “মানুষ মানুষের জন্য “একমাত্র উপর্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে উপজেলার মশিপুর গ্রামের আককাস আলী যখন খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে পরিবারে পাসে গিয়ে দাঁড়ালেন শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মো: কামরুজ্জামান, পিপিএম সেবা। দশ হাজার টাকা ও একটি ইঞ্জিন চালিত ভ্যান রিক্সা তুলে দেন আককাস আলীর হাতে।
শাহজাদপুর থানা ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মশিপূর গ্রামের আককাস আলীর কলেজ পড়ুয়া ছেলে মো: ফেরদৌস আলী (১৮) স্থানীয় একটি ফ্যাক্টরিতে নাইট গার্ডের চাকুরি করতেন। তিনি গত ইং ০৫/০১/২৪ তারিখ সন্ধ্যা ০৬.০০ টায় ফ্যাক্টরিতে ডিউটি করার জন্য এসে আর বাসায় ফিরে যান নাই। এরপর তার পরিবার শাহজাদপুর থানা পুলিশের কাছে একটি নিখোজ জিডি করেন।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মো: কামরুজ্জামান, পিপিএম- সেবা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ঘটনার ক্লু উদঘাটন করেন এবং ঘটনার সহিত জড়িত মো: মামুন হোসেন (৩০) কে শাহজাদপুর থানা পুলিশ কে দিয়ে গ্রেফতার করান। পরবর্তীতে মামুনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আর কে টেক্সটাইল মিলস এর মধ্য থেকে দুই ফিট মাটির নিচে পুতে রাখা অবস্থায় ফেরদৌস এর লাশ উদ্ধার করে এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে। যেখানে লাশের গন্ধে সবাই সড়ে পড়ছিল সেখানে সবসময় উপস্থিত থেকে তদারকি করছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাদপুর সার্কেল এবং শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ।
আসামী মামুন ০৫/০১/২৪ তারিখ রড চুরি করার জন্য আর কে টেক্সটাইল মিলস এ আসে। রড চুরি করার সময় ফেরদৌস দেখে ফেলায় সে ফেরদৌসের মাথায় লোহার সোলাই রেঞ্জ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে এবং লাশ মাটির নিচে পুতে রাখে।
ফেরদৌস তার অভাবী পিতার প্রথম সন্তান ছিলেন। তার বাবা দিন মজুরের কাজ করেন এবং দিন আনে দিন খান। বয়সের ভারে ও অসুস্থতার কারনে ফেরদৌসের বাবা তেমন কাজ করতে পারেন না। ফেরদৌসের লাশ উদ্ধারের পরে তার লাশ বহন এবং কাফনের কাপড় কিনতে পারছিলেন না তার বাবা। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: কামরুজ্জামানের ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় এক জনৈক ব্যক্তি এবং শাহজাদপুর থানা পুলিশ। জানাযা শেষে লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় গন্ধের কারনে যখন পর্যাপ্ত লোক পাওয়া যাচ্ছিল না তখন নিজেই লাশ কাধে নেন তিনি এবং শাহজাদপুর থানার এসআই ও ফেরদৌস হত্যা তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: আনোয়ার হোসেন।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কে হারায়ে ফেরদৌসের পরিবার হয়ে পড়ে দিশেহারা। বয়স ও অসুস্থতার কারনে ফেরদৌসের পিতা নুয়ে পড়ায় তার পরিবারকে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছিল। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, শাহজাদপুর সার্কেল এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বাবা কে একটি ভ্যান এবং আসন্ন রমজান মাসে কিছু খাবার ক্রয় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির কাছে উক্ত বিষয় টি খুলে বললে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে খাবার কেনার জন্য তার পরিবার কে নগদ ১০ (দশ) হাজার টাকা এবং আর এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তার জন্য ইঞ্জিন চালিত ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেয়।
গত শনিবার রাত ০৮.০০ ঘটিকায় নিহত ফেরদৌসের পরিবার কে উক্ত নগদ দশ হাজার টাকা এবং ভ্যানের চাবি তুলে দেওয়া হয়।
নগদ টাকা ও ভ্যান পেয়ে আককাস আলী আবেগে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে জানান, আজ আমার পরিবারের পাশে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন আল্লাহ্ যেন তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেন। তিনি আরো বলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা যে আমার ছেলের দাফনের সমস্ত ব্যাবস্থা করে লাশ কাঁধে নিয়ে দাফন করবেন এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।