শিশুর দাঁত ওঠার সময় প্রাথমিক যত্ন
একটি শিশু জন্মের পর ধীরে ধীরে বিভিন্ন দৈহিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে বড় হয়ে ওঠে। এরই এক পর্যায়ে মুখে দাঁত গজায়। সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস বয়সেই মুখে দাঁত দেখা যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি সময় লাগে। কারও বেলায় জন্মের সময়ই মুখে দাঁত থাকতে পারে, আবার জন্মের ৩০ দিনের মধ্যেই কোনো শিশুর মুখে দাঁত বের হতে পারে। ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর মুখে যে দাঁতগুলো থাকে সেগুলোকে অস্থায়ী বা দুধ দাঁত বলা হয়। দুধ দাঁতগুলো সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বের হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিচের মাড়িতে আগে দাঁত আসে, তবে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।
শিশুর দাঁত বের হতে বিলম্ব হলে অনেক অভিভাবক দুচিন্তায় পড়ে যায়। অনেকের বিচলিত হয়ে পড়াও খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে খুব একটা দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। কারণ, দাঁত ওঠার সময় সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। কারও বেলায় ৩ থেকে ৬ মাস বেশি সময় লাগতে পারে। এর বেশি সময় লাগলে দুশ্চিন্তা না করে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে প্রতি মাড়িতে ১০টি করে মোট ২০টি অস্থায়ী দাঁতের সবগুলো ২ বছর বয়সের মধ্যেই মুখবিবরে সম্পূর্ণরূপে দেখা যায়।
দাঁত ওঠার সময় শিশুর মধ্যে কয়েকটি লক্ষণ প্রকাশ পায়; যেমন: ১. মাড়িতে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে, মুখে অস্বস্তিভাব হয়, শিশু বেশি বেশি মুখ ও জিহ্বা নাড়াতে থাকে ফলে মুখ দিয়ে বেশি বেশি লালারস বের হয়; ২. অস্বস্তিভাব দূর করার জন্য হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে দিয়ে কামড়ানোর চেষ্টা করে, অর্থাৎ এ সময় কামড়ানো ও চোষার প্রবণতা বেড়ে যায়; ৩. অতিরিক্ত লালারস মুখ থেকে থুতনি বেয়ে গলায় ও বুকে পড়ে এবং গাল ও মুখমন্ডলের বিভিন্ন অংশে লেগে শিশুর কোমল ত্বকে জ¦ালাভাব সৃষ্টি করে, এর থেকে ত্বকে র্যাশ বের হয়; ৪. বেশি ব্যথা হলে মাথা ও কানে অস্বস্তি অনুভূত হয়, তখন শিশু হাত দিয়ে মাথা থাপড়ায় ও কান ধরে টানাটানি করে; ৫. ঘুম ও খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়; ৬. অনেক সময় শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়; ৭. অতিরিক্ত লালারস মুখে জমা হলে তা পেটে চলে যায়, ফলে মলের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়; ৮. কোনো কোনো শিশুর বেলায় ডায়রিয়া দেখা দেয়।
এ অবস্থায় প্রত্যেক অভিভাবককে শিশুর প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এই সময়টাতে শিশুর প্রতি লক্ষই শুধু নয়, দরকার উপসর্গ অনুযায়ী প্রাথমিক যতœ। মাড়িতে ব্যথা হচ্ছে এমনটা অনুধাবন করতে হবে। মাঝে মধ্যে চোয়াল নেড়ে দিতে হবে- এতে শিশুর ব্যথাভাব কিছুটা কমে। যখন মুখ দিয়ে বেশি বেশি লালারস ঝরতে থাকবে, নরম কাপড় দিয়ে তা বার বার মুছে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন শক্ত কাপড় দিয়ে বার বার মুছতে গিয়ে ত্বকের উপরের স্তর উঠে যেয়ে ক্ষত তৈরি না হয়। কামড়ানোর প্রবণতা অত্যধিক বেশি হলে কামড় দেয়ার জন্য এমন জিনিস শিশুকে দিতে হবে যা ওর জন্য সুবিধাজনক (যেমন: টিদার) এবং সেটা পরিস্কার রাখতে হবে; এমন জিনিস দেয়া যাবে না, যা গলায় চলে যেতে পারে।
এ সময় শিশুকে নিরাপদ রাখতে ওর আশেপাশের চোষা ও কামড়ানোর মত সব জিনিস পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে অথবা ওকে ওইসব থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। লালারস পেটে যেয়ে আমাশয়ের মত পায়খানা হলে না ঘাবড়িয়ে খেয়াল রাখতে হবে মলের সঙ্গে পুঁজ আছে কিনা? পুঁজ না থাকলে কোনো সমস্যা নেই; আর যদি পুঁজ বোঝা যায়, তা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। না হলে ডায়রিয়াজনিত কারণে শিশুর বড় ক্ষতি হতে পারে। এই সময়ে শরীরের তাপমাত্রা খুব একটা বাড়ে না, অল্প বাড়তে পারে এজন্য সাধারণত ওষুধের প্রয়োজন হয় না। যদি বেশি জ্বর আসে তা হলে অন্য কোনো কারণে হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
দাঁত ওঠার আগে গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে নিয়মিত শিশুর মুখবিবর পরিস্কার করে দিতে হবে। শিশুর প্রথম দাঁত ওঠার পর থেকে ওকে ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিস্কার করে দিতে হবে। ফিঙ্গার ব্রাশ নামে এক ধরনের ব্রাশ বাজারে পাওয়া যায়। এই ব্রাশ তর্জনীতে লাগিয়ে হালকাভাবে দাঁত মেজে দিতে হবে। আঠারো মাস বয়স হলে শিশুকে বেবি টুথপেস্ট ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মটর দানা পরিমাণ পেস্ট বেবি টুথব্রাশে লাগিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মিত পরিস্কার করে দিতে হবে। তবেই প্রতিটি শিশুর উজ্জ্বল হাসি হয়ে উঠবে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন-শিখা।
ডা. মো. সিকান্দার আবু জাফর
সহকারী তথ্য অফিসার
আঞ্চলিক তথ্য অফিস, রাজশাহী।
# পিআইডি ফিচার
Comments are closed.