সারিয়াকান্দিতে মুজিবর্ষে মোর্শেদা-আজিমের মতো অনেক রয়েছেন ভূমিহীন-গৃহহীন!

২১৩
Exif_JPEG_420

তাজুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি, বগুড়াঃ স্বামীর নিজস্ব জমিজমা না থাকায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অন্যর দেওয়া জায়গায় বাড়ী করে বসবাস করছেন উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের শিল্পপাড়ার ভূমিহীন মোর্শেদা ও পারভীন বেগম, চন্দনবাইশার মেজু বেগম ও কুতুবপুর ইউনিয়নের আজিম উদ্দীন পাগলা।

মোর্শেদা অন্যর জমিতে বসবাসের দিনক্ষণ সঠিকভাবে বলতে না পারলেও ছেলের জন্মের হিসাব অনুযায়ী সেখানে ২০ বছর ধরে বৃদ্ধ স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপজেলায় গৃহহীন-ভূমিহীন লোকদের বিনামূল্যে প্রধানমন্ত্রীর এক কক্ষ বিশিষ্ট্য সেমিপাকা ঘর পাওয়ার আশায় স্থানীয় ইউপি-চেয়ারম্যানের কাছে জাতীয় পরিপত্র ও নাম ঠিকানা ধরিয়ে দিলেও তালিকায় তাদের নাম আসেনি।

এভাবেই না পাওয়ার বেদনায় বৃদ্ধ স্বামী ও এক সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ডোমকান্দি দহপাড়া (শিল্পপাড়ার) মোর্শেদা বেগম ভূমিহীন পারভীন বেগম। পারভীন তার সন্তানের কেনা কয়েক শতক জায়গায় আর সন্তানের উঠানো ঘরে স্বামীকে নিয়ে বসবাস করছেন। ঢাকায় চাকরি করা সন্তান বাড়িতে ফিরে এলে পারভীন-স্বামীর রাত্রী যাপন কষ্ট সাধ্য হয়ে পরার আশঙ্কা রয়েছে।

সেদিক থেকে পারভীন বেগমও ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের আওতায় পরে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন ও সরকারের কাছে তাদের দাবি ঘর না দিলেও যেনো তাদের কে সরকারি যায়গায় ঝুঁপড়িঘর তোলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

ঈদুল ফিতরের আগে শিল্পপাড়ার লোকদের জীবনমান নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গেলে স্থানীয় লোকদের মুখে উঠে আসে ভূমিহীন মোর্শেদা-পারভীনের মতো অনেক অসহায় ব্যক্তির নাম। তারা প্রত্যেকেই বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত। মোর্শেদা-পারভীনের মতো এ পাড়ার সকল নারীরা কম বেশি সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশ দিয়ে চাঁটাই, হোছা, ঈদ মৌসুমে লাচ্ছা রাখার খাঁচি তৈরি করে থাকেন। প্রতি বছর মৌসুমী খাঁচি তৈরি করে বাড়তি উর্পাজন করলেও এ বছর চাহিদা না থাকায় সেভাবে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উৎযাপন করতে পারেনি।

করোনাকালিন সময়ে বাড়ির বাহিরে চলাফেরার কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় অন্য গ্রামে গিয়ে তাদের শিল্পের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ সংগ্রহ করতে পারেনি। এজন্য তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পরেছিল। পায়নি কোনো সরকারি অনুদান ও প্রণোদনা। করোনা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য পেশার মানুষদের কর্মতৎপরা বৃদ্ধি পেলেও বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের কর্মতৎপরতা তেমনটা চোখে পরেনি। ফলে আয় রোজগারের ব্যবস্থায় ভাটা পরেছে। এজন্য তারা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও মূলধন সংকটকে দায়ি করছেন। এক কথায় দুই একজন বাদে প্রায় সকলেই মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছেন।

বাঁশ শিল্প শ্রমিকদের দাবি করোনা কালিন সময়ে গরু ও মুরগির খামারারীরা তাদের লোকশান পুশিয়ে উঠতে ১০থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত সরকারি প্রণোদনা পেলেও এ পেশার মানুষদের ভাগ্যে এক মুঠো সরকারি চালও জোটেনি। এমনকি রমজানে সরকারি ভুর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা কার্ড পর্যন্ত হয়নি এ সমাজের লোকদের। শিল্প পাড়ার মোর্শেদা বেগমের স্বামী মোহাম্মাদ আলী জানান, এ মহল্লার মানুষদের মেম্বার-চেয়ারম্যান কোনো খোঁজ খবর রাখেনা।

এজন্য আমরা কি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলাম? আমাদের দুঃখের কথা বিবেচনা করে জমিসহ একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন ভূমিহীন দুটি পরিবার।

অপরদিকে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুামারি গ্রামে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে দীর্ঘ ৩৫-৪০ বছর ধরে অন্যের ঘরে বসবাস করছেন সম্প্রতি পাগলা শিয়ালের কামড়ে আহত মেজু বেগম। জায়গা জমি বলতে তার কোনো কিছুই নেই। কৈশরকালে অসুস্থ্য স্বামী (বছর কামলা) থাকার সুবাদে টুল্লু হাজীর ছেলে শহিদুলের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন তারা।

যেকোন মুহুর্তে বাড়িওয়ালারা বাড়ির প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারেন বলেন জানান ওই এলাকার দুদু প্রমাাণিক, শাহ আলী মন্ডল, ফজল, আশরাফ আলী, ছোরাফ আকন্দ, আশাদুল, রোকেয়া ও মর্জিনারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি যেনো মেজু বেগম কে ভূমিহীন-গৃহহীন হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

এদিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের ভিক্ষুক আজিম পাগলা একজন ভূমি ও গৃহহীন। তাকে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেল মিয়া বসবাসের জন্য ঘর ও ভিক্ষুক পুনবার্সনে দোকান ঘর করে দেওয়ার কথা থাকলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম সুজন জানান, আজিম উদ্দিন পাগলা একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। অনেক কষ্ট করে তাকে সামাজিক বেষ্টনির আওতায় আনা হয়েছে। সে ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাকে ভিক্ষুক পুনবার্সনের আওতায় আনা হলে বাকিটা জীবন ভালোভাবে কাঁটাতে পারবেন।

Comments are closed.