সিরাজগঞ্জে আর্থিক দ্বন্দ্বে মামা-মামি ও মামাতো বোনকে হত্যা করে ভাগ্নে!

0 ১৪৮

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বাবা-মা ও মেয়েকে জবাই করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিকাশ সরকারের বড় বোনের ছেলে রাজিব ভৌমিককে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভাগিনা রাজিব কুমার ভৌমিক হতাশাগ্রস্ত থেকে তার মামা-মামী ও মামাতো বোন তিনজনকে জবাই করে হত্যা করেছে বলে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল এ তথ্য জানিয়েছেন। আটক রাজিব ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে। অন্যদিকে, নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা হত্যাকারী যেই হোক না কেন তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বারোয়ারী বটতলা নিজ বাড়ীর তিন তলার একটি ফ্লাট থেকে মঙ্গলবার সকালে বিকাশ সরকার, তার স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও একমাত্র মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির গলাকাটা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

মর্মান্তিক ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসাসিকে গ্রেপ্তারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামিউল আলমের নেতৃত্বে পুলিশ ও ডিবির ২০ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। নিরলস পরিশ্রমে হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রথমে হত্যাকাণ্ডের শিকার বিকাশ সরকারের একটি মোবাইল রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। রেকর্ডের একপ্রান্তে বিকাশ সরকার এবং অন্যপ্রান্তে ভাগ্নে রাজিব ভৌমিকের কিছু কথোপকথন শোনা যায়। এরসূত্র ধরেই রাজিব কুমার ভৌমিককে বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাজীব কুমার ভৌমিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একাই জড়িত বলে স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন।

আসামি রাজিবের দেওয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামী রাজিব ভৌমিকের বাবা ২০১৯ সালে মারা যায়। এরপর থেকেই রাজিব ভৌমিক পরিবারের হাল ধরেন। একই সঙ্গে তার মামা বিকাশ সরকারের সঙ্গে খাদ্যশস্য মজুদের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় বিকাশ সরকার ভাগ্নে রাজিবকে ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। রাজিব ভৌমিক পর্যায়ক্রমে মামাকে ২৬ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেও বিকাশ সরকার আরো ৩৬ লক্ষ টাকা পাবেন বলে দাবি করেন। আর টাকার জন্য বোন এবং ভাগিনা রাজিবকে বারবার তাগিদা দেন।

সর্বশেষ গত বুধবার ভাগ্নে রাজিব ও তার মাকে বকাঝকা করেন বিকাশ। এছাড়াও এনজিও থেকে মায়ের নামে সুদে টাকা তোলায় হতাশায় ভুগছিল রাজিব কুমার ভৌমিক। এসব কারণেই ক্ষুব্ধ ও হতাশায় পড়ে রাজিব ভৌমিক তার মামাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক রাজিব শনিবার বিকেলে প্রথমে মামাকে ফোন করে বলেন টাকা ফেরত দিব আমি আপনার বাসায় যাচ্ছি আপনি বাসায় আসেন। ওই সময় বিকাশ তাকে বাড়িতে গিয়ে বসতে বলেন। তখন রাজিব বাড়ি থেকে ব্যাগের মধ্যে একটি হাসুয়া ও স্থানীয় প্রতাপ বাজারের একটি দোকান থেকে তিন কেজি ওজনের একটি রড কিনে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে মামার বাড়িতে যায়।

বাড়ীতে ঢোকার পর মামী স্বর্ণা রানী তাকে বসতে বলেন এবং ভাগ্নেকে কফি খাওয়ানোর জন্য তিনতলা থেকে নীচে নেমে কফি কিনতে বাইরে দোকানে যায়। এসময় রাজিবের মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষি টাকার লেনদেনের বিষয়টি তুলে বলে ভাইয়া আপনি টাকা দিচ্ছেন না কেন? এ নিয়ে মাঝে-মধ্যেই মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। টাকাগুলো দিয়ে দেন। এতে রাজিব ক্ষুদ্ধ হয়ে পারমিতা সরকার তুষির মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে অজ্ঞান করে। এরপর মামী কফি নিয়ে ঘরে ঢুকে পারমিতার রুমে দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করে অজ্ঞান করে। এর ১০ মিনিট পর মামা বিকাশ সরকার দরজায় নক করে।

এ সময় রাজিব দরজা খুলে দেবার পর বিকাশ সরকার ঘরে ঢোকামাত্রই তাকে রড দিয়ে আঘাত করে। এর পর রাজিব ব্যাগ থেকে হাসুয়া বের করে একে একে তিনজনকে হাসুয়া দিয়ে জবাই করে ঘরে তালা লাগিয়ে বাসা থেকে বের হয়। পরে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ী যাবার পথে চালমাগুড়া এলাকায় উৎপল সরকারের পুকুরে রড ফেলে দেয় এবং হাসুয়াটি ব্যাগে ভরে নিয়ে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যায়। কেই যাতে সন্দেহ না করে ওই রাতে সেও তার মামার ফোনে কল দিয়েছিল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.