সিসি ফুটেজে বাইক চোর আতিক আটক (ভিডিও)

২৫৮

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি : মোটর সাইকেল চুরির মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়ার কথিত সাংবাদিক আতিকুল ইসলাম ওরফে ব্যাটারী আতিককে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার পুলিশ আতিককে আদালতে নিলে বিচারক তাকে কারগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

পুলিশের তথ্য মতে, গত ২২ মার্চ পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের জনসভা চলকালীন সময়ে মোটরসাইকল চুরি হয়। এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আতিককে সনাক্ত করা হয়। চুরির ঘটনার দিন দুইজনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু আতিক ঘটনার পর থেকেই পালাতক ছিলো। পরে পুলিশের অভিযানে বৃহস্পতিবার তাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাকের হেলপারকে অপহরণ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণের ঘটনার মূল হোতা (খল নায়ক) আতিকুল ইসলাম আতিক। পরে পালাতক থাকায় আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

ভিডিও

 

 

অপহরণ ও মুক্তিপণের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড আতিক নিজেকে কখনো পুঠিয়া ইসলামীয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আবার নানা ভুইফোঁড় পত্রিকার কথিত সাংবাদিক পরিচয় ক্রাইম প্রতিনিধি, দৈনিক দেশ সেবা পত্রিকা, দৈনিক আগামীর সংবাদ, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি বিডিদর্পন ২৪.কম।

আবার তার বিরুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাব পরিচয়ে প্রতারনা করে অর্থ হাতিয়ে নেবার ডজনখানেক অভিযোগ রয়েছে। অপহরণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি কামনা করেছিলো এলাকাবাসি। তবে পলাতক সকল আসামিদের আটকের চেষ্টায় পুঠিয়া পুলিশের সাড়াষি অভিযান অব্যাহত ছিলো।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জিউপাড়া ইউনিয়ন সৈয়দপুর গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে আতিকুল ইসলাম ওরফে বেটারী আতিক। আতিক এক সময় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন, পরে নেশা দ্রব্য মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। সেই থেকে বেটারী আতিক নানা ধরণের ছোট-বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি আতিক কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে উপজেলা নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিক পর্যবেক্ষক পাশও বাগিয়ে নেয়, এটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে দেখো দিয়েছিল অসন্তোষ। পরে যা নিয়ে প্রশাসনের মাঝে বিভাজনের সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিউপাড়ার একাধিক ব্যক্তি বলেন, তার কাছে অনেক মানুষ জিম্মি ছিলো। পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে কখনো সাংবাদিক আবার কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে আতিক এই সকল অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকতো। ভুক্তভুগিরা অভিযোগ দিলেও রাজনৈতিক এই নেতার তোদবিরে অনেক সময় ছাড় পেয়েছে আতিক। এভাবেই পুঠিয়ার রাজনৈতিক নেতা তাকে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে সহযোগিতা করেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রাজনৈতিক ঐ নেতার ছত্রছায়ায় থেকে আতিক বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলো। এলাকায় কিশোর গ্যাংদের নিয়ে মাদক ব্যবসা, চুরি ছিনতাইসহ চাঁদাবাজিসহ বিস্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিদিন অপকর্মের টাকা নিয়ে পুঠিয়া মেডিকেল গেটসহ নানান জায়গায় ভাগ বাটোয়ারা হতো। অপকর্মের হিংসভাগ টাকা যেত ঐ রাজনৈতিক নেতার হাতে। এই সকল বিষয় গুলো নিয়ে সঠিক তদন্তের দাবি করেছেন সচেতন মহল।

এর আগে গত ২৩ জানুয়ারী সন্ধ্যার সাড়ে সাতটার দিকে ভুক্তভোগি ইসমাইল হোসেনকে তার নিজ বাড়ির সামনে থেকে ৩টি মোটর সাইকেল যোগে ৫ জন ব্যাক্তি তাকে অপহরণ করে। এরপর অপহরণে অভিযুক্তরা পরের দিন ২৪ জানুয়ারী বিকেলে মুঠোফোনের মাধ্যমে তার পিতার নিকট দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করেন। অপরদিকে, অপহরণের শিকার ইসমাইল হোসেন (২১) নাটোর বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখৈইর গ্রামের মন্জুর রহমানের ছেলে এবং পেশায় ট্রাক হেলপার।

এ ঘটনায় ইসমাইলের পিতা মজনুর রহমান বাদী হয়ে আতিকসহ ৪ জনের নামে পুঠিয়া থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) শরিফুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তহীন অবস্থায় রয়েছে, আসামিদের আটকের চেষ্টায় পুঠিয়া পুলিশের সাড়াষি অভিযান অব্যাহত।

এ বিষয়ে কলেজ কর্তপক্ষ তার অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করলেও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

পুঠিয়া ইসলামীয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, কলেজের ল্যাব কর্মচারীর এমন কর্মকান্ডে কথা শুনেছি। তার মাদক সেবন ও ব্যবসার জড়িত থাকার অপরাধে আমরা দ্রুত আতিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। আর এ বিষয়ে কলেজে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসেছিলেন আমাদের কাছে তথ্য নিয়েছেন।

পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহরাওয়াদী হোসেন বলেন, আসামীদের আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

Comments are closed.