১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

0 ৩৪৪

শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী :  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ক্যাবিনেট কর্তৃক চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোং লিঃ নামীয় সাবসিডিয়ারী কোম্পানী’র কার্যক্রম ১০ বছরেও চালু হয়নি। এদিকে রহস্য জনকভাবে রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী লিঃ নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানীর অনুকুলে এসএমই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠণের জন্য বিগত ৯ বছর ধরে বারংবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লাইসেন্সের আবেদন করে যাচ্ছেন রাকাব কর্তৃপক্ষ।

 

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সাবসিডিয়ারি কোম্পানীর অনুকূলে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোন লাইসেন্স দেন নাই, অধিকিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রাকাবের বারংবার আবেদনের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েক দফা (চারবার) এ ধরণের অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠণ সমীচীন নয়/এখতিয়ার নাই মর্মে অর্থমন্ত্রণালয় ও রাকাবকে অবহিত করেছেন।

 

এ নিয়ে চরম ভোগান্তি আর মনোকষ্টে ভুগছেন রাকাব (রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক)- এসইসিপি প্রকল্পের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রকল্পের সব কর্মকর্তা-ই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রীধারী, যারা কিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোং লিঃ নামীয় সাবসিডিয়ারী কোম্পানী’র কার্যক্রম চালুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন। বেশীর ভাগ কর্মকর্তা-ই ফিরিয়ে দিয়েছেন নানান কর্মক্ষেত্রের কাজের সুযোগ। কিন্তু বিধিবাম এরই মধ্যে তারা হারিয়েছেন সরকারি চাকরির নির্ধারিত বয়স, আর রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোং লিঃ নামীয় সাবসিডিয়ারী কোম্পানী’র কার্যক্রম চালু না হওয়ায় পদোন্নতি বা ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা থেকেও হয়েছেন বঞ্চিত।

 

রয়ে গেছেন ১৭ বছর আগের চাকরি শুরুর বেতনেই ! প্রজেক্ট ডিরেক্টরের অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীনতার কারনেই কর্মরতদের শতাধিক পরিবার আজ এই চরম ভোগান্তিতে ! সিদ্ধান্তহীনতার কারনে সরকার প্রদত্ত ৫৮ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে…যাতে প্রায় ১২০০০ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এ ঋন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । অথচ প্রকল্প ও রাকাব হতে ডেপুটেশনের সকল খরচ বাদেও প্রকল্পটি (২০০০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) চলতি অর্থ বছরের ৬ মাসের মধ্যে ২ কোটি টাকার বেশী লাভ করেছে।

 

ভোগান্তির চরম পর্যায়ে গেলে, রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোং লিঃ নামীয় সাবসিডিয়ারী কোম্পানী এর কার্যক্রম চালু এবং কোম্পানীতে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ আপগ্রেড পূর্বক পদোন্নতি নীতিমালা, ইনক্রিমেন্টসহ আর্থিক সুবিধাদি বাস্তবায়নের দাবীতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফা স্বারকলিপি প্রদান করেছেন স্বাধীনতা রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী লিঃ কর্মকর্তা কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

 

স্মারকলিপিতে বিস্তারিত বর্ণনা সহ তারা নিম্নলিখিত দাবি সমূহ পেশ করেন:

১) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাবিনেট কর্তৃক অনুমোদিত রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী লিঃ নামীয় সাবসিডিয়ারি কোম্পানীর কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন।

২) কোম্পানীতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ আপগ্রেড পূর্বক পদোন্নতি নীতিমালা, ইনক্রিমেন্টসহ আর্থিক সুবিধাদি পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক দ্রুত বাস্তবায়ন।

৩) বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট স্বতন্ত্র অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠণের জন্য লাইসেন্স আবেদন রহিতকরণ।

উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল ‘১৪ কোম্পানীর অনুকূলে মূলধন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএসইসি কর্তৃক লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে এবং ১৯ জুলাই ‘১৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে কোম্পানীর কর্মকান্ড সম্প্রসারনের জন্য পেইড আপ ক্যাপিটেল হিসাবে ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। কোম্পানী অনুমোদনের পূর্বে এসইসিপি প্রকল্পের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর শেষে প্রকল্পের জনবল রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে আত্মীকরণের জন্য প্রকল্পের পরিচালক মহোদয়কে রাকাব প্রধান কার্যালয় থেকে ২১ আগষ্ট’০৭ প্রকা/ঋওঅবি-২(৫৪)/২০০৭-২০০৮/৬৮ নং পত্রে একটি নীতিমালা তৈরীর জন্য বলা হয়। তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের জনবল রাকাবের সঙ্গে আত্মীকরণের জন্য একটি নীতিমালা তৈরী এবং একই সাথে একটি সাবসিডিয়ারী কোম্পানী গঠণের প্রস্তাব করেন।

 

পরবর্তীতে রাকাব এর পরিচালনা পর্ষদ এসইসিপি প্রকল্পকে রাকাবের সঙ্গে আত্মীকরণের পরিবর্তে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানী গঠনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে পেশ করেন। সেকারণে মন্ত্রীপরিষদ মিটিং এ এসইসিপি প্রকল্পকে সাবসিডিয়ারী কোম্পানী গঠণের চুড়ান্ত অনুমোদন দেন।

 

ফলে প্রকল্পের পিএমসি (পারফর্মেন্স মনিটরিং কমিটি) বিলুপ্ত হয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসারে কোম্পানীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও অন্যান্য সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিচালনা বোর্ড গঠিত হয়েছে এবং বর্তমানে রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোং লিঃ অর্থ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানী। অথচ আইন বহির্ভূত ভাবে রাকাব এটিকে এখনও রাকাব-এসইসিপি প্রকল্প নামে কর্মকান্ড অব্যহত রেখেছে।

 

রাকাব হোল্ডিং কোম্পানী বা প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসাবে একটি আঞ্চলিক ব্যাংক, মূলধন ঘাটতি ও ২০১৪ সালের রাকাবের আইন অনুসারে এসএমই কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স আছে এবং কেবিনেট মিটিং এ অনুমোদিত রাকাব এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী নামীয় সাবসিডিয়ারী কোম্পানী’র কর্ম-এলাকা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ নির্ধারিত, যা একটি আঞ্চলিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানী।

 

অথচ অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান শর্ত হলো প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানীর কার্যক্রম সারা দেশব্যাপী হতে হবে, একই উদ্দেশ্য ও মূলধন ঘাটতি হওয়া চলবে না। ফলে আজ অবধি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এর অজুহাতে বিগত ১৬/১৭ বছর যাবত রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী লিঃ এ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আবেদন প্রত্যাখান করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা রাকাব-এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানী লিঃ কর্মকর্তা কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। স্মারক লিপি প্রদান দিয়ে আমাদের আন্দোলন শুরু, এরপর দাবী আদায় না হলে পর্যায়ক্রমে আরো কঠোর কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য হবো।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.