১৫শ টাকার প্লাস্টিক বক্স ৬ হাজার টাকায় ক্রয়

১৭৯
পাবনা প্রতিনিধি: ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে বাজারদরের চেয়ে উচ্চমূল্যে নিম্নমানের মালামাল ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধ।
 হাসপাতালে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বিলের একটি কপি সংযুক্ত করে এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাদেক হোসেন।
 ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গোপন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওমর ফারুক কার্যাদেশ প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে সাদেক হোসেন জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে অফিস কক্ষের সামনে তিনি সদ্য কেনা বর্জ্য ফেলার প্লাস্টিক বক্স দেখতে পান।
বক্সগুলোর বিষয়ে কয়েকজন সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানতে পারেন প্রতিটি বক্স কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকা দরে। সাধারণত এ ধরনের বক্স বাজারে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।
সাদেক হোসেন আরও বলেন, সরকারি অর্থের অপচয় করে বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে এসব পণ্য কেন নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্মচারীরা বলেন, এডি স্যার জানেন। পরে সহকারী পরিচালক ওমর ফারুককে বিষয়টি জানালে তিনি এ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করেন।
সাদেক হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূতভাবে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ কিংবা নোটিস বোর্ডে না টানিয়েই ঢাকার এসটিএম করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১১ জুন কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে।
অফিসে যোগাযোগ করেও দরপত্র বিজ্ঞপ্তির কোনো কপি পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে সহকারী পরিচালক এসব নিম্নমানের মালামাল উচ্চ দামে কিনেছেন, যা দাখিলকৃত বিলে প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেছি।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান মালামাল ক্রয়ের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় এসটিএম করপোরেশন যে দর দেয় তাই অনুমোদন পায়। সরবরাহকৃত মালামাল বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্ট্যান্ডার্ড রেটের মধ্যে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক ঠিকাদার জানান, জুন মাস সামনে রেখে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করতেই উচ্চ দামে নিম্নমানের মালামাল কেনা হয়েছে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা নোটিস বোর্ডে টানানো হয়নি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসটিএম করপোরেশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের উচ্চমান সহকারী সনজিৎ কুমার দাসের কাছে জানতে চাইলে কোন পত্রিকায় কবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমার কাছে কোনো কাগজপত্র নেই।
হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. জালাল হোসেন বলেন, মালামাল ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সব ক্ষমতার অধিকারী সহকারী পরিচালক স্যার।
তবে মালামাল ক্রয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
মূল্যায়ন কমিটি নীতিমালা মেনে যাচাই-বাছাই করে কার্যাদেশ দিয়েছে। এখানে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ নেই। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান ও নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ সুবিধা না পেয়ে অসত্য অভিযোগ করছেন।
তবে মালামাল ক্রয়ের তালিকা অনুসারে সরেজমিন হাসপাতালে গেলে চোখে পড়ে তালিকার প্রথম দিকে থাকা বিভিন্ন কালারের প্লাস্টিকের ডাসবিন প্রশাসনিক ভবন থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে। মালামাল ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে ওমর ফারুক মীরের কাছে কাগজাদি দেখতে চাইলে তিনি সেটি না দেখিয়ে নিয়ম মেনে কাগজ চাইতে বলেন।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. খায়রুল হক বলেন, পাবনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মালামাল ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত অভিযোগ ও একটি ক্রয় ভাউচার আমরা পেয়েছি। বিষয়টি কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলেই আমরা এই বিষয়ে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করব।

Comments are closed.