উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকারঃ পরিবেশ মন্ত্রী

0 ৪৩৯

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা, খুলনা: জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চলকে ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিশেষ করে বি।শ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনসহ উপকূলীয় জনপদের উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে দূর্যোগের ঝুঁকি’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে (ভার্চুয়াল) অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ আয়োজিত এই সংলাপ সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।

 

আলোচনায় অংশনেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্চ জার্ণালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, আন্তর্জাতিক সংস্থা কেএনএইচ জার্মানীর মাটিলদা টিনা বৈদ্য, পার্লামেন্টনিউজ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক পলাশ আহসান, কয়রা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম, বাগেরহাট সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন ও সাতক্ষীরা গাবুরা’র প্রধান শিক্ষক ইয়াশমিনুর রহমান লিংকন। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ঝুঁকি আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না উল্লেখ করে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাব্য প্রভাব নিরসনে সরকার ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ নামে একশো বছরের কৌশল প্রণয়ন করেছে। সরকার উপকূল জুড়ে ৪ হাজার ২৯১ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।

 

এছাড়া দেশের বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অতিরিক্ত ৫২৩টি বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক এডাপটেশন ফান্ড এর অর্থায়নে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র তীরবর্তী ছোট দ্বীপসমূহে বিভিন্ন অভিযোজনমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে অবহেলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সংলাপে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আঘাত হানছে। যে কারণে ওই অঞ্চলের মানুষ ঝুঁকিতে আছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। স্থানীয় জনগণের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বাঁধ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলো অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের ৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প চলতি সপ্তাহেই একনেক বৈঠকে পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এলাকার সকল জনপ্রতিনিধিদের একসাথে টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরিতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান কারণে নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। নদী ড্রেজিং করা যেমন জরুরি তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ি বাঁধের স্থায়ী বা টেকসই সংস্কার জরুরি। তিনি বেড়িবাঁধ তৈরিতে এলাকাবাসীর অভিজ্ঞতা, বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ভূ-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, স্বার্থান্বেষীমহল নিজেদের স্বার্থে ৬০’এর দশকে নির্মিত দুর্বল বেড়িবাঁধে পাইপ ঢুকিয়ে, বাঁধের পাশে পুকুর খননসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতি করছে। যে কারণে ওই অঞ্চলের ঝুঁকি বেড়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন জরুরী। তিনি নিয়মিত নদী খনন ও টিআরএম-এর মাধ্যমে নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং বেড়িবাঁধকে নিজেদের সম্পদ হিসেবে রক্ষার আহ্বান জানান।

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কিংবা সংস্কারের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার কথা উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা সরকার। তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষগুলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আর একটির কবলে পড়ে। বেড়িবাঁধ সংস্কারে প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে পর্যাপ্ত কাজ হলেও নানান কারণে টেকসই হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়তার পাশাপাশি এলাকাবাসীর সচেতনতা জরুরি।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সুন্দরবনের পাশ^বর্তী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর করোনা পরিস্থিতি ও গত বছরের সুপার সাইক্লোন আম্ফান এই সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনা-সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ওই অঞ্চলের জনগণের দূর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

সংকট মোকাবেলায় সুন্দরবনের তীরবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলকে দূর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষনের জন্য জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করা, উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধান এবং উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.