এক রহস্যময়ী নারী ও অজানা ১০ কথা

0 ৫৫৭

বাংলা চলচ্চিত্র তথা উপমহাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের চিরকালের ক্র্যাশ মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। অভিনয়গুণের পাশাপাশি অপার রূপ-সৌন্দর্য তাকে মহাকালের অভেদ্য উচ্চতায় স্থান দিয়েছে। আজীবন কোটি কোটি ভক্ত-অনুরাগীর কাছে, এমনকি কাছের মানুষগুলোর কাছেও সুচিত্রা সেন যেন হয়ে উঠেছিলেন এক ‘রহস্যময়ী’ নারী।

অভিনয় ছাড়ার পর জীবনের প্রায় ৩০টি বছর স্বেচ্ছা নির্বাচনে ছিলেন। এই একাকীত্ব যাপন মানে আরও বৃহৎ ও ব্যাপকতর সাধনার পথ বেছে নেয়া। সেই কঠিন সত্যকেই জীবনের ব্রত করেছিলেন মহাকালের এই মহানায়িকা। যেখানে যত গোপনীয়তা সেখানে মানুষের তত কৌতুহল। নিজেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই অপার কৌতুহলী এক নারী করে তুলে তুলেছিলেন সুচিত্রা সেন।

১৭ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে তার চলে যাওয়ার এ দিনটিতে আসুন পাঠক একনজরে দেখি নিই ‘রহস্যময়ী’ সুচিত্রাকে।

১. আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয়ী প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী ছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির জন্য এ স্বীকৃতি পান তিনি।

২. বলিউডে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুল জনপ্রিয় ও নন্দিত-পঠিত উপন্যাস ‘দেবদাস’ অবলম্বনে বেশ কিছু ছবি নির্মিত হলেও সুচিত্রা সেনই হিন্দি ‘দেবদাস’ ছবিতে প্রথম পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেন।

৩. ‘দেবদাস’ ছবি দিয়েই বলিউডে পা রাখা সুচিত্রা পার্বতী চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন।

৪. তার অভিনীত ‘আন্ধি’ ছবিটি গুজরাটে মুক্তির পর প্রায় ৫ মাস নিষিদ্ধ ছিল। সেই ছবিতে তার চরিত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া থাকায় এ নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে প্রথমবার বিজেপি প্রথমবার ক্ষমতায় এলে গুজরাটের সরকারি টেলিভিশনে এ ছবি প্রচারিত হয়।

৫. রুপালি পর্দার আড়ালে চলে যাওয়ার পর জীবনের প্রায় ৩০টি বছর স্বেচ্ছায় একপ্রকার গৃহবন্দি হয়েই জীবনযাপন করেছেন সুচিত্রা সেন। এরপর জীবনের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে রামকৃষ্ণ মিশনে। নির্জন ও নিভৃত জীবনে অভ্যস্ত সুচিত্রার সঙ্গে অনেকেই হলিউডের কিংবদন্তি গ্রেটা গার্বোর ব্যক্তিত্বের মিল খুঁজে পান।

৬. মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে মহানায়িকা সুচিত্রার জুটি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথমবার উত্তম-সুচিত্রা জুটি বাঁধেন। এরপর একসঙ্গে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করে চিরকালের জন্য বাঙালি দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয় এই জুটি।

৭ একবার সত্যজিৎ রায় সুচিত্রা সেনকে দিয়ে ‘চৌধুরানী’ ছবিটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের কারণে সুচিত্রা অপারগতা জানালে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ সেই ছবিটিই আর নির্মাণ করেননি।

৮. প্রথমবার একই ছবিতে যৌনকর্মী ও আইনজীবী চরিত্রে ধরা দেন সুচিত্রা। ‘উত্তর ফাল্গুনী’ নামের সেই ছবিতে যৌনকর্মী পান্নাবাঈ ও তার মেয়ে আইনজীবী সুপর্ণার দ্বৈত চরিত্রে দেখা যায় সুচিত্রাকে।

৯. সুচিত্রা সেন একমাত্র ভারতীয় অভিনয়শিল্পী যিনি ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সেই পুরস্কার গ্রহণের জন্য তাকে নয়াদিল্লিতে যেতে হতো। কিন্তু তিনি সর্বসাধারণের সামনে নিজেকে হাজির করতে রাজি ছিলেন না।

১০. সুচিত্রা সেনের প্রথম ছবির নাম ছিল ‘শেষ কোথায়’। ১৯৫২ সালে নির্মিত সেই ছবিটি কখনও মুক্তির আলো দেখেনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.