ঐতিহ্যবাহী প্রেম গোসাই মেলা বন্ধে ভিত্তিহীন অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ

0 ১৪৪
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুজিশহরে শত বছরের পুরনো ‘প্রেম গোসাই মেলা’ বন্ধের অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ঐতিহ্যবাহী প্রেম গোসাই মেলা বন্ধ্যে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। এই অপতৎপরতার অংশ হিসেবে ওই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সম্প্রতি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অশ্লীল ভিডিও সরবরাহ করেছে। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে, প্রশাসন মেলায় অনুষ্ঠিত গ্রামীণ যাত্রাপালা বন্ধের নির্দেশ দেন। অথচ ওই ভিডিওর সাথে মেলা প্রাঙ্গণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সুস্থ্য ধারার বিনোদন চর্চার স্বার্থে প্রেম গোসাই মেলায় পুনরায় যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ। নিয়ামতপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শনিবার(৪ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রেম গোসাই মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির সভাপতি কাঞ্চন চন্দ্র সাহা, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেলা আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী মামুন-অর-রশীদ, মেলায় যাত্রা ও সার্কাসের প্যান্ডেল লিজকারী ও রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তালেব হোসেন (বাবর) প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বলেন, শত বছর ধরে গুজিশহরে পৌষসংক্রান্তিতে প্রেম গোসাই বা প্রেমতলী মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে পৌষ সংক্রান্তির দিনে এই মেলা শুরু হয়ে এক মাস ধরে চলে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয় অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরা প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। এ বছরেও বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষ প্রশাসন মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে শুরু হয়। মেলা চলার কথা আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বরাবরের মতো এবারেও এলাকাবাসীর সুস্থ্য বিনোদনের স্বার্থে মেলা প্রাঙ্গণে সার্কাস, গ্রামীণ যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল ইন্টারনেট থেকে অশ্লীল ভিডিও নামিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে ওই ভিডিওটি মেলা প্রাঙ্গণের যাত্রাপালার বলে সরবরাহ করে। ওই ভিডিওটি প্রেম গোসাই মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত যাত্রাপালার না হলেও ওই ভিডিওর সূত্র ধরে প্রশাসন মৌখিকভাবে মেলায় যাত্রাপালা বন্ধের নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশের প্রতি সম্মান রেখে মেলা কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে মেলায় যাত্রাপালা অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। কিন্তু মেলায় যাত্রাপালা বন্ধের ফলে মেলা কর্তৃপক্ষ ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কারণ মেলায় সুস্থ্য ধারার বিনোদন চর্চা না থাকায় মেলায় বিনোদনপ্রেমী মানুষ আসা কমে গেছে। এতে শতবছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই মেলা তার জৌলুস হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ যাত্রাপালা বিনোদন এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। আমরা বরাবরই সুস্থ্য ধারায় এ বিনোদনকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল ওই মহল প্রশাসনকে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে মেলা আয়োজনকে ব্যাহত করেছে।  এতে এলাকাবাসী হিসেবে আমরা হতাশ। মেলায় সুস্থ্য ধারার বিনোদন চর্চা ব্যাহত হওয়ায় আমাদের আশঙ্কা, শত বছরের বাঙালি ঐতিহ্য বহনকারী এ মেলা ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
কারণ আমরা মনে করি, একটি গ্রামীণ মেলায় বিভিন্ন পণ্যের বেচা-কেনা ছাড়াও সুস্থ্য ধারার বিনোদন হিসেবে গ্রামী যাত্রাপালা একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এই মেলাতেও বাঙালি ঐতিহ্যের বিলুপ্ত হতে যাওয়া গ্রামীণ যাত্রাপালা সংস্কৃতি ধরে রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু চলমান এ মেলায় তথ্যের ভিত্তিহীন একটি মিথ্যা ভিডিও ভিত্তিতে বন্ধ হবে তা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের দাবি, ঐতিহ্যবাহী এ মেলার সুস্থ্যধারায় বিনোদন চর্চায় গ্রামীণ যাত্রাপালা অনুষ্ঠানে পুরারায় অনুমতি দেওয়া হোক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.