করোনায় কিডনি-ফুসফুস-মস্তিষ্কে জমছে রক্ত, স্ট্রোকের ঝুঁকিতে তরুণরা: নতুন পর্যবেক্ষণ

0 ৪৯৯

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা ভাইরাসকে শুরু থেকেই ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী রোগ হিসেবে ধারণা করা হলেও ভাইরাসটি শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো করে দিতে পারে বলে মনে করেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। করোনা আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি ও জমাট বাঁধার মতো কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করেছেন নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।

 

ছবি: প্রতীকী

করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে তাদের করা পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের ফুসফুসের একটি অংশ অস্বাভাবিকভাবে রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি ডায়ালাইসিস ক্যাথেটারে রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে স্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তরুণদের মধ্যে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার হওয়ার পর স্ট্রোক করছেন। যারা স্ট্রোক করছেন তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত।

মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের নিউরো সার্জন ডা. জে. মকো বলেছেন, ‘এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, কোভিড-১৯ রক্ত জমাট বাঁধতে অস্বাভাবিক ভূমিকা রাখছে। অনেক বিশেষজ্ঞরাই এটাকে এখন শুধুমাত্র ফুসফুসের রোগের চাইতেও বেশি কিছু ভাবছেন। আমরা বেশ কয়েকজন তরুণের ক্ষেত্রে প্রথম উপসর্গ হিসেবেই পেলাম স্ট্রোক।’ব্রেকিংনিউজ

এই পর্যবেক্ষণ প্রকাশের পর থেকে চিকিৎসকরাও করোনা আকান্ত রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই করোনা আক্রান্তদের দেয়া হচ্ছে উচ্চমাত্রায় রক্ত লঘু করার ওষুধ।

নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের সভাপতি ডা. ডেভিড রেইখ বলেছেন, ‘রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ করতে গেলে হয়তো রোগীর ভয়াবহতা কিছু কমে আসতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়। তাই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম অনুসরণ করা যাচ্ছে না। এতে হিতে বিপরীত হয়ে মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।’

গেল মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ৩ সপ্তাহে ৩২ জন স্ট্রোক করা রোগীকে দেখেছেন নিউরো সার্জন ডা. জে. মকো। যাদের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধা চোখে পড়েছে তারা।

তিনি বলেন, ‘ওই তিন সপ্তাহে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ রোগী এসেছে। তাদের মধ্যে ৫ জনের বয়স ছিল ৫০ বছরের কম। সবচেয়ে কম বয়সী রোগীর বয়স ছিল ৩১ বছর। তাদের কারও স্ট্রোকের ঝুঁকি ছিল না।’

কিন্তু হাসপাতালে অন্তত ১৪ জন করোনা রোগীকে ভেন্টিলেটার সেবা দিতে গিয়ে অবাক হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. হুম্যান পোর।

তিনি বলেছেন, ‘সাধারণ নিউমোনিয়ায় যেমন হয় এই রোগীর ফুসফুস তেমনটা শক্ত হয়নি। বরং মনে হচ্ছিল তাদের ফুসফুসে রক্তের প্রবাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না।’

কিন্তু ওই হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডায়ালাইসিস ক্যাথেটারে রক্তের জমাট বাঁধা দেখতে পান।

গেল ইস্টার সানডের রাত ৩টার দিকে নিউরো সার্জন ডা. জে. মকোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. হুম্যান পোর। এরপরই তারা এ বিষয়ে বিশেষ আলোচনা শুরু করেন।

বিশেষজ্ঞরা মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ১৯ জন করোনা রোগীর রিপোর্টের পাশাপাশি চীনের হুবেই প্রদেশসহ অন্যান্য অঞ্চলের করোনা আক্রান্তদের রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। অন্যান্য অঞ্চলের রোগীদের ক্ষেত্রেও একইরকম বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেছে। এরপরই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নতুন নিয়মের কথা জানতে শুরু করেন তারা।

এ বিষয়ে ফিলাডেলফিয়ার থমার জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ডাক্তার পাস্কাল জ্যাব্বার করোনা আক্রান্তদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘এবারই প্রথম দেখছি। এর আগে আমি কখনও কোনও ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এমনটি দেখিনি।’

ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে আমেরিকান সোসাইটি অফ হেমাটোলজি। কিন্তু করোনা আক্রান্তদের রক্ত জমাট বাঁধার কোনও উপসর্গ আছে কিনা তার কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। কিংবা আক্রান্তদের রক্ত লঘু করলে চিকিৎসাসেবায় সুবিধা হবে কিনা সেটাও অনিশ্চিত এখনও।

Leave A Reply

Your email address will not be published.