কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত ব্যাচের জন্য বরাদ্দ এক শ্রেণিকক্ষ

0 ৪০১
কুবি প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগে সাতটি ব্যাচ চলমান থাকলেও তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ। অথচ এ সাতটি ব্যাচে শিক্ষার্থী প্রায় ৩৫০জন। আর ৪২টি কম্পিউটার নিয়ে একটি ল্যাব থাকলেও তার সবগুলোই বিকল। এতে করে শিক্ষার্থীরা একদিকে ব্যবহারিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অপরদিকে সেশনজটের অভিশাপও পিছু ছাড়ছে না।
দেখা যায়, প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগটিতে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট সাতটি ব্যাচ চলমান। প্রতিটি ব্যাচে প্রতি সেমিস্টারে অন্তত ১১ থেকে ১৩টি কোর্স অধ্যয়ন করতে হয়। কিন্তু বিভাগটির জন্য শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র একটি। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে সেশনজট ভোগান্তি। জানা যায়, বিভাগটির ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করার কথা থাকলেও তারা কিছুদিন আগে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ করেছেন। অন্য ব্যাচগুলোতেও সেশনজটের ভয়াবহতা প্রকট।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগটির মাত্র একটি শ্রেণিকক্ষ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিডিউল অনুযায়ী ক্লাস থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কখনো ক্লাস হয় আবার কখনো ফিরে যেতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্লাসের অপেক্ষায় অনেক সময় নষ্ট হয় আমাদের। ক্লাসের জন্য এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে এমন বহু ঘটনা আছে। এমনও হয়েছে, কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ক্লাস না হওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছে। ’
ল্যাবরুম ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায় অনুষদের তৃতীয় তলায় অবস্থিত ল্যাবরুমটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্লাসের সুবিধার্থে বিকল কয়েকটি মনিটর টেবিলের নিচে রাখা। বর্তমানে কক্ষটিতে ২৫টি কম্পিউটার রয়েছে যার সব কটিই বিকল। বাকি ১৭টি কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোরে পাঠানো হয়েছে। কম্পিউটারনির্ভর একটি বিভাগের ল্যাবে ব্যবহার উপযোগী কম্পিউটার না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ল্যাবের কম্পিউটারগুলো বহুদিন ধরেই নষ্ট। আইসিটি অনেকটা কম্পিউটারনির্ভর বিভাগ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা ব্যবহারিক কাজগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ’
এদিকে পাঁচতলাবিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন-৪ (প্রকৌশল অনুষদ)-এর কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের মার্চে। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো ওই ভবনে স্থানান্তর হওয়ার কথা। কিন্তু ১৫ মাসের চুক্তিতে কাজ শুরু হলেও প্রায় ৩১ মাসেও কাজ শেষ করতে পারেনি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজ ও খোকন কনস্ট্রাকশন। আর এ কারণেই শ্রেণিকক্ষ সংকট আরও প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইসিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আন্তরিকতা রয়েছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ না থাকায় সেশনজট থাকলেও কমিয়ে আনতে পারছি না। ল্যাবের জন্য ৫০টি কম্পিউটার আমাদের দেওয়া হয়েছে। সেগুলো স্টকে আছে। প্রকৌশল অনুষদের ভবনে আমাদের রুম দেওয়া হলে সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল হাসান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার আমরা সময় বেঁধে দিয়েছি। এখন ঠিকাদার পরিবর্তন করাও অসম্ভব। এতে অনেক জটিলতা রয়েছে। তবে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। ‘
ল্যাবরুম ও নির্মাণাধীন ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, ‘দুটি বিভাগের জন্য ৯৫ লাখ টাকার কম্পিউটার কেনা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক ভবন-৪-এর কক্ষগুলো এ মাসের ১২ তারিখ আমাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু এখন আবার ঠিকাদার ৩০ তারিখ সময় দিয়েছে। ’

Leave A Reply

Your email address will not be published.