প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ৬:০৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ৮, ২০২২, ৭:২০ অপরাহ্ণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারঘরিয়া ইউপির সাবেক মেম্বার জিয়া দেশীয় অস্ত্র সহ আটক

ফয়সাল আজম অপু: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ৪নং বারঘরিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জিয়াউর রহমান জিয়া এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাতা এবং সহায়তা দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মেম্বারের পরিবারটি প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ ইতিপূর্বে মুখ না খুললেও শনিবার (৬ আগষ্ট) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে জিয়ার বাড়িতে পুলিশ আসলে ভূক্তভোগিরা জড়ো হয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিভিন্ন ভোগান্তির কথা বলেন।
জিয়া মেম্বার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে বাড়ি প্রতি ক্ষেত্র বিশেষ ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন এই সাবেক ইউপি সদস্য। টাকা দেওয়ার পরেও তার নিকট ওই ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গরীব, অসহায় লোক তাদের কার্ডের কাঙ্খিত সুবিধা না পাওয়ায় অভিযোগ করেছে ইউনিয়ন পরিষদে।
জানা যায়, বারঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর-রাঙ্গাপাড়া গ্রামের বক্কর আলীর স্ত্রী কিসমত আরা ১ বছর আগে একই এলাকার জিয়া মেম্বারকে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের জন্য ৫ হাজার টাকা দেয়। কার্ড কিংবা টাকা চাইতে গেলে জিয়া মেম্বার প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দেয়।
কিসমত আরার ছেলে সিফাত জানান, শনিবার (৬ আগষ্ট) রাত ১০ টার দিকে বাড়ির সামনে জিয়া মেম্বারের সাথে আমার মায়ের দেখা হয়, মা টাকা কিংবা ভাতার কার্ড চাই, এতে সে ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। এবং বাড়ি থেকে কান্তা বের করে নিয়ে এসে আমার মা, দাদী ও আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আমরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। স্থানীয়রা আমাদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ সয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। আমি ও আমার দাদী কিছুটা সুস্থ হলেও আমার মা আশঙ্কা জনক অবস্থায় হাসপাতালে বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পরবর্তীতে রাতেই আমরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ এসে কান্তা সহ জিয়া মেম্বারকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে হত্যা চেষ্টা ও প্রতারণার মামলায় জিয়া মেম্বারকে আটক দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।
হতদরিদ্র কিসমত আরা ছাড়াও, বিধবা ভাতার নামে লক্ষীপুর-কামারপাড়া গ্রামের মৃত বিরেন কর্মকারের স্ত্রী প্রেভা রানীর কাছ থেকে চার হাজার, আশারুলের স্ত্রী বেলিয়ারা খাতুনের কাছ থেকে একই ভাতার কথা বলে ছয় হাজার, সবুর আলীর ছেলে লতিব আলীর কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার, বিরেন কর্মকারের ছেলে নিমাই কর্মকারের কাছে মাতৃত্বকালীন ভাতার নামে ছয় হাজার, সফিকুল ইসলামের ছেলে রুহুল আলিমের কাছ থেকে ছয় হাজার, বিশু আলির স্ত্রী যোবেদার কাছ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা সহ প্রায় অর্ধ শতাধিক পুরুষ মহিলার নিকট থেকে কার্ড করে দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে।
অভিযুক্ত ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান (৪০) বারঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর-রাঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত একব্বর হোসেনের ছেলে। তিনি অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে এ অভিযোগ সঠিক, তবে এই টাকা আমি সময় সাপেক্ষ ফেরত দিবো। আমি ভাটার ব্যবসা করতে গিয়ে পূঁজি হারিয়ে আর্থিক সংকটে আছি। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ফাঁসানোর জন্য কাজ করছে। তাদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলে মামলা করাচ্ছে। আমি সঠিক আছি আমার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারবেনা। ভুক্তভোগী মারধর, কুপিয়ে জখমের বিষয়ে ও দেশীয় অস্ত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করলে অস্বীকার করেন তিনি। আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রতিহিংসামূলক বলেও জানান।
বারঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনেক ভুক্তভোগী পুরুষ মহিলা জিয়া মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে মিমাংসার জন্য কয়েকবার নোটিশ করেছি কিন্তু সে হাজির হয়নি। অসহায়, হতদরিদ্রদের নিকট থেকে থেকে টাকা নিয়ে ভাতার কার্ড দেওয়া হয় নাই এমন কথা বললেই জিয়া মেম্বার বিভিন্ন টালবাহানা করে।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ৯৯৯ এর কলের মাধ্যমে জানতে পারি বারঘরিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জিয়া ভাতার কার্ডকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের কয়েকজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এমতঅবস্থায় এসআই দারেস আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে জিয়া মেম্বারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এবং রোববার সকালে ভুক্তভোগী মহিলা কিসমত আরার ছেলে সিফাত বাদি হয়ে হত্যা চেষ্টা ও প্রতারণার মামলা করলে আইনি প্রক্রিয়া শেযে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
Copyright © 2025 বিডি সংবাদ ২৪ ডটকম. All rights reserved.