চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মাপাড়ের মানুষ ভাঙ্গনের আতঙ্কে দীর্ঘশ্বাস

১৪১

ফয়সাল আজম অপু :পদ্মার পাড়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। বোগলাউড়ি ঘাটে বসেছিলেন এনামুল (৬৫)। কপালে ভাঁজ। লক্ষ্য করছিলেন পানির স্রোতে পদ্মায় মিশে যাচ্ছে ভিটামাটি। এক পর্যায়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘নদী ভাঙন আর পিছু ছাড়লো না!থ‘যখন নদী ভাঙতে শুরু করল, তখন কেউ কাউকে সাহায্য করবে এমন অবকাশ ছিল না। ঘরের টিনের চাল নামাতে নামাতে, ঘরের বেড়া নদীতে ভেঙে পড়েছে। ধরে রাখার সুযোগ হয়নি।

গরু বাছুর দূরে রাখতে গিয়ে, বাড়ি ফিরে দেখি গোয়াল ঘরের টিনের ছাউনি আর বেড়া নদীতে ভেসে গেছে। ওই সময় কি খেয়েছি, কেমন করে দিন কাটিয়েছি বলে বোঝাতে পারব না।থ এনামুলের কণ্ঠে হতাশা ঝরে পড়ে। এ দৃশ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুরের। গ্রামে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবারের বসবাস। সবাই পদ্মায় ভিটামাটি হারিয়েছেন। গত কয়েক মাস আগে পদ্মার তীব্র ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছেন সেফাউর।

তিনি বলেন, ‘নিজের জন্মস্থান ছেড়ে যদি অন্য জায়গায় বাস করি, তাহলে মনটা কার ভালো থাকে? এক সময় নিজের ভিটামাটিতে থাকতাম, জমিতে ধান হতো, চালের চিন্তা থাকত না। শাক-সবজি হতো, তরকারির টেনশন হতো না। গরু-বাছুর পুষতাম, ধান মাড়াই করে খড় খাওয়াতাম। সন্ধ্যায় দুমুঠো ভাত খেয়ে আরামের ঘুম দিতাম। কিন্তু এখন ওই দিন আর নাই। পরের জমিতে খাটি, যা পাই তা থেকে সংসার চলে। সারাদিন খাটা-খাটনিতে আগের মতো আর ক্লান্ত শরীরে আরামের ঘুম হয় না।’এই পদ্মাপাড়ে বেড়ে ওঠা রবিউল ইসলামের। বুলবুলও পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা। কেউ ভালো নেই।

সবাই ভাঙনে জর্জরিত, অসহায়, নিঃস্ব। ‘পদ্মা নদীতে উপজেলায় প্রতি বছর অনুমানিক ৪-৫ হাজার বিঘা জমি বিলীন হয়। প্রতি বছর ২-৩ হাজার পরিবার ভিটামাটি হারায়। এমনও পরিবার আছে, আগে তার সব আবাদি জমি নদীতে নেমে গেছে, নিজের ভিটামাটিতে বসবাস করত। কিন্তু ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বানভাসি মানুষের জন্য সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ালেও ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের খবর রাখে না।

আক্ষেপ ঝরে বুলবুলের কণ্ঠে। পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, ‘পদ্মায় প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। কিছু এলাকায় হালকা ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য ইউএনওকে জানাবো। উজিরপুর, পাঁকা, দূর্লভপুর ইউনিয়ন মিলে ১০ কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ নির্মাণের কথা। বাঁধটি হয়ে গেলে নদী ভাঙনের কবল থেকে মুক্তি পাবে হাজার হাজার মানুষ।

এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘দশ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মা নদীর ভাঙন হয়। এখন কিছু এলাকায় ভাঙন ধরেছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এখনও প্রকল্পটি হাতে নিতে পারিনি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেছি।’

 

Comments are closed.